অস্ট্রেলিয়ায় সব মিলিয়ে ১১৫টি সংশোধনকেন্দ্র রয়েছে। সংশোধনকেন্দ্রগুলির মধ্যে সবচেয়ে কঠোর স্থান হল কারাগার। কারণ, বাস্তবে কারাগারে আটক আসামীই কেবল সাজা ভোগ করে না, তার ছেড়ে আসা পরিবারও একই সাথে সমান যন্ত্রণা ভোগ করে।
অস্ট্রেলিয়ায় যেসব প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ফৌজদারি অপরাধ করে, তাদের বিচারের কাজ সম্পন্ন করা হয় অস্ট্রেলীয় ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে।
অপরাধের কারণে দোষী সাব্যস্ত হলে সাজা ভোগের জন্যে যেখানে তাকে থাকতে হয়, সেটিকে বলে সংশোধনকেন্দ্র।
সংশোধনকেন্দ্রগুলির মধ্যে সবচেয়ে কঠোর স্থান হল কারাগার। কারণ, বাস্তবে কারাগারে আটক আসামীই কেবল সাজা ভোগ করে না, তার ছেড়ে আসা পরিবারও একই সাথে সমান যন্ত্রণা ভোগ করে।
অস্ট্রেলিয়ায় সব মিলিয়ে ১১৫টি সংশোধনকেন্দ্র রয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি দুইভাবেই এগুলো পরিচালিত হয়। প্রতিটি স্টেট ও টেরিটরিতে একইরকম বিচারব্যবস্থা চালু থাকলেও, তাদের সংশোধনকেন্দ্রগুলো রাজ্য-সরকার নিজেরাই আলাদাভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।
অস্ট্রেলিয়ান ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিক্স (সংক্ষেপে ABS) প্রাপ্তবয়স্ক কয়েদীদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। উইলিয়াম মিন হলেন এবিএস ন্যাশনাল সেন্টার অব ক্রাইম এন্ড জাসটিস স্ট্যাটিসটিক্স-এর পরিচালক।
তিনি বলেন, ‘ ২০২১ এর জুনে আমাদের সব মিলিয়ে কয়েদী ছিল ৪৩ হাজার, তার মধ্যে ১৫ হাজারের কিছু বেশি বিচারের অপেক্ষায় রিমান্ডে ছিল। এর মধ্যে ৯২ শতাংশ হচ্ছে পুরুষ ও আট শতাংশ নারী। সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা গড়ে সাড়ে তিন বছর কারাভোগ করে। আর রিমান্ডে যারা বিচারের জন্যে অপেক্ষা করে তাদের জন্যে সময়টা তিন-চার মাস।
কারাগারে এবঅরিজিনাল ও টরেস স্ট্রেইট আইল্যান্ডার কয়েদীদের শতকরা হার মোট জনসংখ্যার সাপেক্ষে অনেকই বেশি। অন্য কয়েদীদের তুলনায় তা প্রায় দশ গুণ। এই উদ্বেগজনক হারের পেছনে আছে কয়েক প্রজন্মের পশ্চাদপদতা এবং ঐতিহাসিক কারণে মানবিক ক্ষতের আঘাত।
আসামিদের কারা-হেফাজতে আনা হলে তাদের নিরাপত্তার জন্যে কীরকম সুরক্ষার প্রয়োজন হবে সে ব্যাপারে একটি মূল্যায়ন করা হয়। সন্ত্রাসবাদ ধরণের গুরুতর অপরাধের জন্যে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয় বলে জানান নিউ সাউথ ওয়েলসের মেট্রো ওয়েস্টে-এর কাস্টডিয়াল ডিরেক্টর এমা স্মিথ।
কাউকে রিমান্ডে রাখার অর্থ হচ্ছে, অপরাধ করার পরে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে এসে বিচারের অপেক্ষায় রাখা।
মিজ স্মিথ বলেন, যেহেতু মাত্র আট শতাংশ কয়েদী নারী, কর্তৃপক্ষকে তাই কারাগারের ভিতরে আলাদাভাবে সকলের সর্বোচ্চ নিরাপদ অবস্থান নিশ্চিত করতে হয়।
কারাগারের অভ্যন্তরে কয়েদীকে তার অপরাধ অনুযায়ী বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করতে হয়, যেমন পারিবারিক সহিংসতা, স্বাস্থ্যবিষয়ক নানা প্রশিক্ষণ এবং প্যারেন্টিং কোর্স।
এ ছাড়া তাদের নানারকম শারিরীক পরিশ্রমও করতে হয়।
মিজ স্মিথ আরও জানান, অনেক কয়েদীই পূর্ণ মেয়াদে সাজা ভোগ করে, অর্থাৎ তাদেরকে সাজার পুরো সময়টা কারাগারেই কাটাতে হয়। আবার কয়েদীদের একটা বড় অংশ নির্দিষ্ট মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই প্যারোলে মুক্তি পাওয়ার সুযোগ পায়।
পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে নিয়েছে কিনা এ বিষয়ে খোঁজ নেয়ার উপায় রয়েছে।
কয়েদীর পরিবারের অন্য সদস্যরা রাজ্যের ডিপার্টমেন্ট অব কারেক্টিভ সার্ভিসেস-এ যোগাযোগ করে তার ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিতে পারে। আবার এই সব তথ্য অনলাইনেও পাওয়া যায়।
কারাগারে কারও সাথে দেখা করতে যেতে চাইলে আগে থেকেই অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন হয়। প্রতিটি কেন্দ্রের নিজস্ব ফোন নম্বরও রয়েছে।
স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করা নাদিয়া-র পরিবারের একজন সদস্য এখন কারাভোগ করছে। সেই সদস্যের সাজা শুরু হবার পরে নাদিয়া আবিষ্কার করলেন ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার ভেতর-বাহির জানার জন্যে যে তথ্য পাওয়া যায় তা অত্যন্ত সীমিত। এ কারনে তিনি ‘বারস বিটুইন’ নামে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করলেন, যার মাধ্যমে পরিবারের কেউ কারাগারে গেলে এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য সেখানে রাখার ব্যবস্থা করা হয়।
নাদিয়া বলেন, কয়েদী-র পরিবারের সদস্যদের লোকলজ্জা, দুর্নাম এবং সবার কাছ থেকে একঘরে হয়ে থাকার যন্ত্রণার ভেতর দিয়ে যেতে হয়।
কারাগারের ভেতরে কয়েদীদের মনোবল ঠিক রাখার জন্যে মানসিক সমর্থনের প্রয়োজন হয়। আবার মুক্তি পেয়ে সেখান থেকে বের হওয়ার পরেও একই সমর্থনের দরকার পড়ে।
সাজাভোগের পরে মুক্তিপ্রাপ্তদের ভেতরে প্রায়শই অপরাধজগতে ফিরে আসার প্রবণতা দেখা যায়, এর কারণও খুব জটিল। মাদক ব্যবহার, বেকারত্ব, শিক্ষার নিম্নহার এবং দুর্বল মানসিক স্বাস্থ্য- এই সবই এর পেছনে কারন হিসেবে কাজ করে। কারামুক্তির পরে সঠিক মানসিক সমর্থনের অভাবও রয়েছে অনেক।
বিহাইন্ড বারস সংস্থার স্বেচ্ছাসেবী নাদিয়া বলেন, কারাগারে থাকা কয়েদীর পরিবারের জন্যে সমর্থন বাড়ালে এই পরিসংখ্যানগুলোও ভাল হওয়ার সুযোগ থাকে।
মূল প্রতিবেদনটি পড়ুন এখান থেকে।
এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত। রেডিও অনুষ্ঠান পরেও শুনতে পারবেন, ভিজিট করুন: আমাদের ওয়েবসাইট।
আমাদেরকে অনুসরণ করুন ফেসবুকে।