সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা, ধর্ম অবমাননা ইত্যাদি বিষয়ে অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের কিছু মানুষ। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে অনেক ঘটনা, কিন্তু এতে প্রাণ হারাচ্ছে এবং সহায়-সম্পদ হারিয়ে পথে বসছে সাধারণ মানুষ, যাদের কথিত ধর্ম অবমাননার সাথে কোন সম্পর্কই নেই। অস্ট্রেলিয়ার একটি উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন মিঃ আতিক রহমান, সম্প্রতি তিনি একটি সংবাদ মাধ্যমের একটি লেখায় এ বিষয়ে তার কিছু মতামত তুলে ধরেছেন।
আতিক রহমান একজন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন কর্মকর্তা, বাংলাদেশী অভিবাসী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে স্নাতকোত্তর শিক্ষা শেষ করে বাংলাদেশস্থ অস্ট্রেলিয়ান হাই কমিশনের রাজনৈতিক শাখায় তার কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন নিয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে গত দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে অস্ট্রেলিয়ান এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সাহায্য সংস্থার হয়ে এশীয় এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে কাজ করে চলেছেন।
মিঃ আতিক রহমান এই বিষয়ে যা বলছেন তা তার একান্ত ব্যক্তিগত মতামত, তার বক্তব্যের সাথে তিনি যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তার সাথে সম্পর্ক নেই।
মিঃ রহমান বলেন, বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর বিগত দিনগুলোতে যে আক্রমন হয়েছে তার সেগুলো গোষ্ঠীগত বা ব্যক্তিগত যাই হোক এগুলোর মধ্যে যোগসূত্র আছে, এবং এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।
"স্থানীয় পর্যায়ে সম্পত্তি দখলের জন্য এক ধরণের আক্রমণ হয়, আরেকটি হচ্ছে রাজনৈতিক কারণে, যেমন সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে, অশান্তি তৈরিতে কিংবা রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে এইসব আক্রমন হয়ে থাকে," বলেন তিনি।
আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ধর্মীয় মৌলবাদের উত্থান এবং তার প্রভাবও বাংলাদেশের রাজনীতিতে আছে বলে মনে করেন মিঃ রহমান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ বা গোটা ভারতবর্ষ কখনো অসাম্প্রদায়িক ছিল না, তবে এ অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ছিল। বিভিন্ন সময়ে যেসব সাম্প্রদায়িক আঘাত এসেছে, সেসময় মানুষ ঘটনার শিকারদের পক্ষে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু এখন গত দশ বছরে আমাদের সমাজ এবং পরিপার্শ্বে যারা আছে তারা সেভাবে দাঁড়াতে পারেনি।
মিঃ আতিক রহমান বলেন, যে অসাম্প্রদায়িক মূলনীতিকে ধারণ করে বাংলাদেশের সংবিধান রচিত হয়েছিল পরবর্তীকালে বিভিন্ন সরকার তার আমূল পরিবর্তন করে এবং প্রভাব পড়ে আমাদের জাতিগত মনস্তত্ত্বে।
তিনি বলেন, ধর্মীয় গোষ্ঠীর চাপের কাছে বাংলাদেশ সরকার যে নতি স্বীকার করে পাঠ্যপুস্তকসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে যেসব পরিবর্তন এনেছে তা বাংলাদেশের বাহাত্তরের সংবিধানের চেতনার পরিপন্থী।
মিঃ রহমান মনে করেন, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা একটি সমস্যা-এটি স্বীকার করে এর সমাধান করতে হবে। আমরা অনেক সময়েই এটি মানতে চাই না।
তবে তিনি বলেন,"বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক-সামাজিক বাস্তবতায় রাষ্ট্র ধর্ম ইসলামকে বাদ দেয়া সম্ভব নয়। যারাই এটি বদল করতে যাবে তার বিরোধী শক্তি এটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করবে।'
"তবে যেটা করা যায় তা হচ্ছে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় যেসব পরিবর্তনগুলো হয়েছে তা আগের অবস্থায় নিয়ে যাওয়া, একই সঙ্গে যারা সামাজিক নেতৃত্বে আছে তাদেরও ভূমিকা আছে, তাদের মৌলবাদ বিরোধী অবস্থান নিতে হবে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় কাজ করতে হবে," বলেন মি: রহমান।
আতিক রহমানের পুরো সাক্ষাৎকারটি বাংলায় শুনতে উপরের অডিও প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।
Follow SBS Bangla on FACEBOOK.