শিশু অধিকারের উপর জাতিসংঘের কনভেনশন হল একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তি। এতে শিশু এবং তরুণদের বিশেষ অধিকারগুলোর জন্য একটি রূপরেখা আছে। অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ এই কনভেনশনের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, এটিকে সবচেয়ে ব্যাপকভাবে সমর্থিত মানবাধিকার চুক্তি হিসেবে গণ্য করা হয়।
গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো
- অস্ট্রেলিয়ার বাধ্যতামূলক রিপোর্টিং আইন অনুযায়ী কোন শিশুকে নির্যাতন করা হয়েছে সন্দেহ হলে সরকারি চাইল্ড প্রটেকশন সার্ভিসে রিপোর্ট করতে হয়
- অস্ট্রেলিয়ায় ৬ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের জন্য স্কুল বাধ্যতামূলক
- অস্ট্রেলিয়ায় ১০ বছরের কোন শিশুকে গ্রেপ্তার করা যায়, অভিযুক্ত করা যায়, আদালতে হাজির করা যায় এবং এমনকি জেলও হতে পারে
এই সেটেলমেন্ট গাইডে ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে অস্ট্রেলিয়ায় শিশুদের কী কী অধিকার রয়েছে এবং কীভাবে অস্ট্রেলিয়ার আইনের মাধ্যমে এগুলি সুরক্ষিত হয়।
শিশু অধিকারের কনভেনশনের মধ্যে রয়েছে নিরাপদ থাকা, খেলায় অংশ নেয়া, শিক্ষা পাওয়া এবং সুস্থভাবে বেড়ে উঠার অধিকার।
পলা গারবার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের একজন অধ্যাপক এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিন্তাবিদ। তিনি কাজ করেন শিশুদের অধিকার নিয়ে।
তিনি বলেন, শিশুর সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার অধিকারে অভিভাবকরা মুখ্য ভূমিকা পালন করবেন।
শিশুদেরও নিরাপদ থাকার অধিকার আছে তারা যেখানেই থাকুক না কেন।
বাধ্যতামূলক রিপোর্টিং আইন, যা অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন স্টেট ও টেরিটোরিতে কিছুটা ভিন্ন হলেও নির্যাতন করা হয়েছে সন্দেহ হলে সরকারি শিশু সুরক্ষা পরিষেবাগুলিতে রিপোর্ট করতে হয়।
অধ্যাপক গারবার ব্যাখ্যা করে বলেন এটি শারীরিক, যৌন এবং মানসিক নির্যাতন, অবহেলা এবং পারিবারিক সহিংসতার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
তিনি বলছেন, এই আইনে একটি শিশু সহিংসতা, নির্যাতন, এমনকি অবহেলার শিকার হচ্ছে বলে মনে হলে কোন পেশাদার ব্যক্তি চাইল্ড প্রটেকশন সার্ভিসে রিপোর্ট করতে বাধ্য। এটি সরকারের হিউম্যান সার্ভিস বিভাগের মধ্যে পড়ে৷ যে ধরণের পেশাজীবীদের রিপোর্ট করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে তারা হলেন ডাক্তার, নার্স, শিক্ষক, পুলিশ, এবং ধর্মীয় সংস্থায় কাজ করেন এমন কর্মীরা৷
প্রফেসর গারবার বলছেন অস্ট্রেলিয়ায় ৬ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের জন্য স্কুল বাধ্যতামূলক।
তিনি বলেন, অভিভাবকদের নিশ্চিত করতে হবে যে তারা স্কুলে যাচ্ছে এবং স্কুলকেও নিশ্চিত করতে হবে যে শিশুরা সেখানে আছে।
প্রফেসর গারবার বলেছেন, বছরে প্রায় ২০,০০০ শিশু পিতামাতার কাছে হোম-স্কুলিং করে, তবে এজন্য তাদের অবশ্যই একটি পারমিটের জন্য আবেদন করতে হবে এবং নিয়মিতভাবে শিক্ষা বিভাগকে অগ্রগতির প্রতিবেদন দিতে হবে।
অস্ট্রেলিয়ায় বাচ্চাদের ১৫ বছর না হওয়া পর্যন্ত বেতনভুক কাজে নিয়োগ দেয়ার অনুমতি নেই।
১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সিদের স্কুল চলাকালীন দিনে তিন ঘন্টা বা প্রতি সপ্তাহে ১২ ঘন্টার বেশি কাজ করানো যাবে না।
তবে স্কুল হলিডেতে এটি দিনে ছয় ঘন্টা বা প্রতি সপ্তাহে ৩০ ঘন্টা পর্যন্ত হতে পারে।
অধ্যাপক গারবার বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় বিয়ের জন্য আইনি বয়স কমপক্ষে ১৮।
তিনি বলছেন,অস্ট্রেলিয়ায় বাল্যবিবাহ আইন খুব কঠোর রয়েছে। তাই যদি কোনও শিশুকে জোর করে বিয়ে বা এমন কোন ব্যবস্থা করা হয় তবে নয় বছর পর্যন্ত ফৌজদারি শাস্তি বা কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। এবং ২৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে যদি বিয়ের উদ্দেশ্যে কোন অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়।
১৮ বছরের কম বয়সী দুজন ব্যক্তি বিয়ে করতে চাইলে তাদের অবশ্যই তাদের পিতামাতার সম্মতি এবং সেইসাথে আদালতের অনুমতি নিতে হবে। আদালত শুধুমাত্র ব্যতিক্রমী বা অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এই অনুমতি দেবে।
ডঃ ফেইথ গর্ডোনিস অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কলেজ অফ ল-এর অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর এবং রিসার্চ বিভাগের ডেপুটি অ্যাসোসিয়েট ডিন।
তিনি বলছেন যে অস্ট্রেলিয়া ১৯৯০ সালে শিশু অধিকার সংক্রান্ত জাতিসংঘ কনভেনশনে স্বাক্ষর করেছে, কিন্তু এই আইনগুলি স্টেট ও টেরিটোরি ভেদে কিছুটা ভিন্ন।
তিনি বলছেন আমাদের ঘরোয়া আইনী কাঠামোতে কনভেনশনটি প্রতিষ্ঠিত নয়, কারণ এটি একটি ফেডারেলাইজড সিস্টেম। স্টেট ও টেরিটোরিগুলির প্রত্যেকেরই নিজস্ব চাইল্ড প্রটেকশন ইয়ুথ জাস্টিস সম্পর্কিত বিভিন্ন আইন রয়েছে। এর অর্থ হল, নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি শিশু বা তরুনের জন্য যে আইন প্রযোজ্য, ভিক্টোরিয়ার জন্য তা নয়।
প্রফেসর গারবার বলছেন যে অস্ট্রেলিয়ার এমন আইন দরকার যা আরও স্পষ্টভাবে শিশুদের অধিকার এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করে৷
তিনি বলছেন, আমাদের চাইল্ড রাইটস কনভেনশন আছে, কিন্তু চিলড্রেনস রাইটস এক্ট নেই।
অস্ট্রেলিয়ায় ১০ বছরের কোন শিশুকে গ্রেপ্তার করা যায়, অভিযুক্ত করা যায়, আদালতে হাজির করা যায় এবং এমনকি জেলও হতে পারে।
প্রফেসর গর্ডন বলেন, অন্যান্য দেশের তুলনায় অস্ট্রেলিয়ায় কাউকে অপরাধী সাব্যস্ত করার ন্যূনতম বয়স কম।
তিনি বলছেন, সবচেয়ে হালনাগাদ গবেষণা থেকে দেখা যায় যে ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু এবং যুবকদের মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটে। তাই ১০ বছর বয়সে কোন শিশুকে অপরাধী সাব্যস্ত করা ঠিক নয়। এবং জাতিসংঘ অস্ট্রেলিয়াকে আহ্বান জানিয়েছে বয়স বাড়িয়ে অন্তত ১৪ করতে।
অধ্যাপক গারবার বলছেন আরেকটি বড় সমস্যা হল ইয়ুথ জাস্টিস সিস্টেমে আদিবাসী কিশোর-যুবক আটকের ঘটনা বেশি হওয়া।
কোর্ট ডাইভারশন প্রোগ্রামগুলি ভাল কাজ করে, তবে এজন্য আরও রিসোর্স প্রয়োজন, অধ্যাপক গারবার বলছেন।
একই বক্তব্য প্রফেসর গর্ডনের। তিনি বলেছেন সেখানে আরও রিসোর্সিং এবং সহায়তা প্রয়োজন।
প্রফেসর গর্ডন বলেন, কমিউনিটি লিগ্যাল সেন্টার কিছু লোককে অত্যাবশ্যক সহায়তা দিয়ে থাকে।
তিনি বলেছেন, সেখানে কমিউনিটি লিগ্যাল সেন্টার আছে যেগুলি আপনার আয়ের উপর নির্ভর করে বিনামূল্যে আইনি পরামর্শ দেয়। এছাড়াও আদিবাসী আইনি কেন্দ্র রয়েছে যেখান থেকে দরকারী তথ্য পাওয়া যাবে।
পুরো প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ার বাটনে ক্লিক করুন।
Follow SBS Bangla on FACEBOOK.
এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত।
রেডিও অনুষ্ঠান পরেও শুনতে পারবেন, ভিজিট করুন: আমাদের ওয়েবসাইট।
আমাদেরকে অনুসরণ করুন ফেসবুকে।