এবারের সেটলমেন্ট গাইডটি একুশে ফেব্রুয়ারি- আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সামনে রেখে রচিত হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় থেকে কীভাবে আপনার সন্তানদের মাতৃভাষা শেখাবেন আর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে লালন করবেন তা নিয়ে এসবিএস এর বিশেষ ফিচার
আদমশুমারীর তথ্য অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়ার এক পঞ্চমাংশ পরিবার বাড়িতে ইংরেজী ব্যতিত তাদের নিজস্ব ভাষায় কথা বলে। ইংরেজীভাষীদের এই দেশে শিশুদের মাতৃভাষা শেখানো অত্যন্ত দুরূহ। দ্বিভাষী পরিবারে ইংরেজী ছাড়া ভিন্ন ভাষার বাতাবরণে শিশুদের বড় করে তোলার বিভিন্ন দিক নিয়ে গবেষণা হয়েছে।
মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ভাষাবিদ জন হাজেক বলেন, শিশুদের দ্বিভাষী বা বহুভাষী হিসাবে বেড়ে উঠায় সমাজ অনেকভাবে উপকৃত হয়।দ্বিভাষী শিশুরা ভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতিকে জানার-বোঝার চেষ্টা করে, তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে শেখে।
স্ব স্ব ভাষা ও সংস্কৃতিকে ঘিরে সম্প্রদায়ের মানুষ যুথবদ্ধ হয়। অধ্যাপক হাজেক বলেন, অনেক সম্প্রদায়ের পরিবার ভাষা শিক্ষার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের মধ্যে তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সঞ্চারিত করে।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মের অনেকে পরিবারের ভাষাগত ঐতিহ্যকে সাফল্যের সাথে রক্ষা করতে পেরেছে।
এবটসফোর্ড প্রাইমারি স্কুলের অধ্যক্ষ স্ট্যানলি ওয়াং জানান, তার বিদ্যালয়ে ১৯৮৪ সালে ভিক্টোরিয়ার প্রথম ‘চাইনিজ বাইলিংগুয়াল প্রোগ্রাম’ বা চীনা দ্বিভাষিক কর্মসূচি শুরু করা হয়। রাজ্যের ১২টি স্কুলে এমন দ্বিভাষিক ভাষা কার্যক্রম প্রচলিত আছে। দ্বিভাষিক কর্মসূচি চালুর পর থেকে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের জনমিতিতে বেশ পরিবর্তন দেখা গেছে।
আশির দশকে পরীক্ষামূলকভাবে বিভিন্ন স্কুলে দ্বিভাষিক শিক্ষা সূচিত হয়েছিল। এর মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ার অনেকে প্রথমবারের মত ভিন্ন ভাষায় শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায়। দ্বিতীয় প্রজন্মের গ্রীক অস্ট্রেলিয়ান ভাসো জাঙ্গালিস তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি বলেন,
আমি নিজেকে গ্রীক ভাষায় অনেক সমৃদ্ধ ও সংস্কৃতিমনা বলে মনে করি। আমার ভাই গ্রীক ভাষা জানেনা, আমি জানি, তাই নিজেকে গ্রীক সংস্কৃতির সাথে অধিক সংযুক্ত বোধ করি।
মিস্টার ওয়াং মনে করেন, বহু ভাষা ও সংস্কৃতির পরিবেশে শিশু বেড়ে উঠলে তার মধ্যে স্বকীয় পরিচয় ও আত্মমর্যাদাবোধ দৃঢ় হয়।
প্রফেসর হাজেকের ভাষ্য অনুযায়ী,
"একজন ভাষাবিদ ও বৈচিত্রময় নৃতাত্ত্বিক সম্প্রদায়ের অংশ হিসাবে আমি মনে করি, ভাষা আমার সত্তার খুবই গুরুত্বপূর্ন একটি অংশ। আমি তার ভাগ দিতে চাই আমার সন্তানদের, এবং স্বভাবতই সন্তানের পুর্ব-প্রজন্ম বা পিতামহ-মাতামহরাও এই পরম্পরার অংশীদার হতে চায়।"
মিস জাংগালিস তার সম্প্রদায়ের মানুষদের মধ্যে ভাষা ও সংস্কৃতির বন্ধনের কথা উল্লেখ করে বলেন,
“আমি মনে করি, কারোর নিজস্ব ভাষা জানাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কেননা কেউ যদি তার ভাষাকে হারিয়ে ফেলে, তাকে কেন্দ্র করে থাকা সবকিছুই তখন ভেঙে পড়ে।”
স্কুল পড়ুয়া দুই সন্তানের জননী মিস জাংগালিস তার সন্তানদের মাতৃভাষা শেখানোর ব্যাপারে সচেতন। যেসব অভিবাসী পরিবার এদেশে সদ্য এসেছেন বা আসার পরিকল্পনা করছেন, তাদেরকে তিনি ভাষা শিক্ষার বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
নিজের সন্তানদের স্থানীয় লাইব্রেরীতে নিয়ে যাওয়ার সময়ে তিনি অভিভাবকদের নিয়ে ভাষা শিক্ষার একটি উদ্যোগ গড়ে তুলেন। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি জানান, সামাজিক বা নিজস্ব ভাষা- সংস্কৃতি চর্চার তৃণমূল উদ্যোগ শিক্ষাসহায়ক কর্মসূচির অংশ হিসাবেও গড়ে তোলা যায়।
যেসব পরিবার সন্তানদেরকে দ্বিভাষিক চর্চার মাধ্যমে লালন পালন করছেন, তাদের উদ্দেশ্যে পরামর্শ দিয়ে অধ্যাপক হাজেক বলেন,
“অস্ট্রেলিয়ায় বেড়ে উঠার কারণে শিশুরা ইংরেজীতেই সবচাইতে দক্ষ হবে, এটাই স্বাভাবিক। কেননা তাদের চারপাশের জগতটা ইংরেজীর। তারা স্কুলে বড় একটা সময় ইংরেজী শিখে কাটাচ্ছে। তবে আপনার সন্তানদের যদি মাতৃভাষা চর্চার সুযোগ না ঘটে অর্থাৎ ভাষা-সংস্কৃতির পরম্পরা রক্ষা করা যদি কঠিন মনে হয়— তাহলে আপনাকে বিকল্প উপায় খুঁজে নিতে হবে। যেমন এক্ষেত্রে আপনার সন্তানের দাদা-দাদীরা ভাল উপকারে আসতে পারেন।”
তবে পরিবারের ভাষা শিক্ষার আকাঙ্ক্ষা যেন শিশুর উপর বাড়তি চাপ হয়ে না যায়, সেটাও লক্ষ্য রাখতে হবে। এ প্রসঙ্গে মিস্টার ওয়াং বলেন,
"আমাদের অস্ট্রেলিয়ার বাস্তবতার কথাই সবার আগে বিবেচনা করতে হবে।"
Follow SBS Bangla on FACEBOOK.
পুরো প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।
এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত। রেডিও অনুষ্ঠান পরেও শুনতে পারবেন, ভিজিট করুন: https://www.sbs.com.au/language/bangla/program
আমাদেরকে অনুসরণ করুন ফেসবুকে।