মেডিকেয়ারের মত সর্বজনীন স্বাস্থ্য বীমা থাকা সত্ত্বেও অস্ট্রেলিয়ার মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক মানুষ প্রাইভেট হেলথ ইন্স্যুরেন্সের অধিকারী। সরকারী হাসপাতালে দীর্ঘ প্রতিক্ষা এড়াতে, সুলভে দন্ত চিকিৎসা পেতে কিংবা ট্যাক্স সুবিধার জন্য অনেকে বিভিন্ন ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য বীমা কিনে থাকেন। এই বীমা আপনার জন্য কতটা উপযোগী?
গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলি:
- অস্ট্রেলিয়ার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মানুষ ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য বীমার অধিকারী এবং ৪৪ শতাংশের প্রাইভেট হাসপাতালের বীমা আছে।
- সরকার বিভিন্ন প্রণোদনার মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ানদের প্রাইভেট হেলথ ইন্স্যুরেন্স কিনতে উৎসাহিত করছে।
- অনেকে ট্যাক্স সুবিধা পেতে ব্যক্তিগত বীমা কিনে থাকেন, অনেক ক্ষেত্রে তা অব্যবহৃত থেকে যায়।
মেডিকেয়ারের মাধ্যমে জিপির সাথে সাক্ষাৎসহ সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা পাওয়া যায়। এছাড়াও ফারমাসিউটিকেল বেনিফিট স্কিম এর আওতায় প্রেসক্রিপশনের বেশিরভাগ ওষুধ সুলভ মূল্যে কেনা যায়।
অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক, স্থায়ী বাসিন্দা ছাড়াও অন্যান্য উপযুক্ত অস্থায়ী ভিসা যেমন পার্টনার ভিসা, পার্টনার এবং স্কিল্ড রেজিওনাল স্পনসর ভিসাধারীরাও মেডিকেয়ার পাওয়ার যোগ্য। অবশ্য এম্ব্যুলেন্স সেবা, চশমা বা কন্টাক্ট লেন্স, অস্টেওপ্যাথির মত কিছু খরচ মেডিকেয়ার দিয়ে নির্বাহ করা যায় না।
মেডিব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফ কাস্টমার স্ট্রাটেজি এন্ড পোর্টফলিও মিলোশ মিলিসেভজেউইচ বলেন, সরকারী স্বাস্থ্যসেবার উপর চাপ কমিয়ে মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতেই প্রাইভেট হেলথ ইন্স্যুরেন্স এর উৎপত্তি হয়েছে৷
সরকারী হাসপাতালের কিছু বিশেষ চিকিৎসাসেবা যেমন সার্জারি করতে হলে কখনো কখনো দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। তবে সব ধরনের সার্জারি নয়, নির্বাচিত বা বিশেষ ধরনের সার্জারি। ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য বীমা থাকলে এ ধরনের সার্জারি প্রাইভেট হাসপাতালে স্বল্প সময়েই করা যায়।
এছাড়াও ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য বীমা বা প্রাইভেট হেলথ কাভার থাকলে নিজের পছন্দের ডাক্তার বেছে নেবার সুযোগ থাকে।
মিস মিলিসেভজেউইচ ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য বীমা র আর কি কি সুবিধা আছে তা ব্যাখ্যা করে বলেন -
ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য বীমা কেনা থাকলে জরুরী মুহুর্তে কাঙ্ক্ষিত হাসপাতালে নিজের পছন্দের সেবা নেওয়া যায়। এছাড়াও নিজের পছন্দ আর পরিবারের চাহিদা অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবা বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকে।
প্রাইভেট হেলথের জন্য নিয়মিত প্রিমিয়াম দিতে হয়। অনেক সময় প্রাইভেট হাসপাতালে সেবা নেবার জন্য প্রিমিয়ামের অতিরিক্ত খরচ বা এক্সেস ফিসও দেয়া লাগে। আপনি চাইলে বেশি এক্সেস ফিস দিয়ে প্রিমিয়াম খরচ কমাতে পারেন।
প্রাইভেট হেলথ কাভারের ক্ষেত্রে এক্সেস ফিস ছাড়াও আছে গ্যাপ ফিস। গ্যাপ ফি হচ্ছে আপনার বীমা আওতার বাইরে অতিরিক্ত ফি যা কোন ডাক্তার বা সার্জনকে দিতে হয়।
সিনিয়র সাংবাদিক এবং চয়েস নামক ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য বীমা বিশেষজ্ঞ উটা মিম বলেন, আপনার জন্য কি ধরনের বীমা ভাল হবে তা নির্ধারণ করতে হলে ঠিকমত খোঁজখবর নেওয়া দরকার। হাসপাতালের খরচ, এক্সট্রা কাভার বা অতিরিক্ত ফি আপনার ক্ষেত্রে কেমন দরকার তা কেবল আপনিই ভাল জানবেন।
অনেকে আবার মেডিকেয়ারের শুল্ক বাবদ খরচ এড়াতে প্রাইভেট হেলথ ইন্স্যুরেন্স কিনে থাকেন। ৯০ হাজার ডলারের উপর যারা রোজগার করেন (দম্পতি নন), তাদের প্রাইভেট হসপিটাল ইন্স্যুরেন্স না থাকলে অতিরিক্ত ট্যাক্স দিতে হয়। এই পরিস্থিতিতে ট্যাক্স দেবার বদলে প্রাইভেট ইন্স্যুরেন্স কেনাই বরং লাভজনক।
মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটির হেলথ ইকোনমিকস এর অধ্যাপক ইউটিং ঝ্যাং এর মতে, সরকার জনগনকে প্রাইভেট হেলথ কিনতে উৎসাহিত করে আসছে। ৩১ বছর বয়সের মধ্যে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য বীমা কিনলে বিভিন্ন ছাড় পাওয়া যায় আবার তার পরে কেনা হলে প্রিমিয়ামের খরচ বেড়ে যায়- এ ধরনের কিছু নীতিমালার মাধ্যমে সরকার ব্যক্তির ইন্স্যুরেন্সকে প্রভাবিত করছে।
প্রফেসর ঝ্যাং বলেন, হাসপাতালে অপেক্ষার সময় কমাতে সরকারী প্রণোদনার কার্যকারীতার প্রমাণ খুবই কম। তার কারণ অনেকে প্রাইভেট হেলথ কাভার থাকার পরেও জন্য তা ব্যবহার করছেন না।
আপনার আসলে প্রাইভেট হেলথ ইনস্যুরেন্সের দরকার আছে কিনা তা নির্ধারনের জন্য ইন্যসুরেন্স কাভারের কোন কোন দিক আপনার জন্য দরকারী তা আগে মূল্যায়ন করা দরকার। কাভারের মধ্যে যদি কোন কিছু আপনার কাজে না আসে তাহলে হিসাব করে দেখুন, আপনার খরচের সাথে তা সংগতিপূর্ন কিনা।
এছাড়াও আমাদের মনে রাখা দরকার, যে এম্ব্যুলেন্স সেবা পেতে হলে আপনাকে আলাদা এম্বুলেন্স কাভার কিনতে হবে অথবা এম্বুলেন্স সেবা আপনার প্রাইভেট ইনস্যুরেন্সে অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে।
প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।
Follow SBS Bangla on FACEBOOK.