ওস্তাদ আলাউদ্দিন খান সাহেবের উত্তরসূরি সিডনীনিবাসী তানিম হায়াত খান রাজিত পারিবারিক সঙ্গীত ঐতিহ্য সেনিয়া মাইহার ঘরানা ধরে রাখার পাশাপাশি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সম্মিলিত ফিউশন ধারার সংগীত চর্চা করে যাচ্ছেন। এসবিএস বাংলার সাথে এই আলাপচারিতায় তিনি জানিয়েছেন তার সঙ্গীতচর্চার কথা এবং সঙ্গীত নিয়ে তার নিজস্ব ভাবনার কথা।
উপমহাদেরশের অন্যতম এক সঙ্গীত পরিবারে জন্ম তানিম হায়াত খান রাজিতের। এ প্রজন্মের অন্যতম সুরকার, সরোদশিল্পী ও সঙ্গীতশিল্পী রাজিতের সুরে শত বছরের ঐতিহ্যের সাথে বাজে সমসাময়িক সুরের মুর্ছনা। পারিবারিকভাবে চর্চিত সেনিয়া মাইহার ঘরানার অন্যতম উত্তরসূরি রাজিত। সঙ্গীতের বহু পুরাতন এই ধারাকে তিনি বিশ্বের সুরে মেলাতে চান। সুর তো বিশ্বব্রহ্মান্ডেরই ভাষা, তার নেই কোন ভৌগলিক সীমানা।
অনেকটা পারিবারিক উত্তরাধিকারের মত করেই রাজিত সুরের জগতে এসেছেন। তিনি মূলত সরোদ বাজান। চাচাতো ভাই উস্তাদ শাহাদত হোসেন খানের কাছে তিনি সরোদে তালিম নিয়েছিলেন।
কোন কম্পোজিশন করার সময় বা সুর রচনার সময় কোন বিষয়টা আপনাকে বেশি প্রভাবিত করে মানে আপনি কোথায় সুর খুঁজে পান— প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "সুর রচনায় আর আমার উপর স্পিরিচুয়াল প্রভার আমার মেজদাদু ফকির আফতাবউদ্দিন খাঁ সাহেবের। ওনাকে আমি উপলব্ধি করি। গানের বাণীর দিকে লক্ষ্য রাখি আর সুর করবার সময় মেলোডিটাকে প্রাধান্য দেয়। আমার আমার সুরে প্রচুর ভেরিয়েশন রাখার চেষ্টা করি।"
রাজিত ফিউশন ধারার সঙ্গীতের মাধ্যমে প্রাচ্যের ক্লাসিক্যাল সুরের সাথে পাশ্চাত্যের সুরের মেলবন্ধন রচনা করেন। এ যেন সুরের মধ্যে দেশ-কাল-সীমান্তের দূরত্ব মেটানোর প্রচেষ্টা, বিশ্বের সব সুরকে ঐকতানে বাঁধা।
অনেকের কাছে পাশ্চাত্য সঙ্গীত মানে অপসংস্কৃতি। এক্ষেত্রে রাজিত একদমই ব্যতিক্রম। সঙ্গীত নিয়ে তার ভাবনা নিয়ে তিনি বলেন,
"আসল কথা যেটা আমি বিশ্বাস করি সেটা হল অপসংস্কৃতি বলে কিছু নেই। আসল হল সুরে গাওয়া। সেটা হেভিমেটাল, জ্যাজ, ব্লুজ, রক, হিন্দুস্তানী ক্লাসিকাল যাই হোক না কেন। কিন্তু গাইতে গিয়ে যদি সুরে না লাগে তখনই সেটা কানের রক্তক্ষরণের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের দেশে যারা হেভিমেটাল বা পাশ্চাত্য সংগীতকে অনুসরণ করতে চান, তাদের এটা একটু মাথায় রাখলে আমাদের সংগীতের জন্যই ভাল মঙ্গল হবে।"
সম্প্রতি "হারমনিক মাইনর" শিরোনামের তার একটি ফিউশন কম্পোজিশন প্রকাশিত হয়েছে যা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ দেশে, বিদেশে সমাদৃত হয়েছে। হারমনিক মাইনর নিয়ে তিনি বলেন,
"সাম্প্রতিক সময়ে আমার একটা মাইলস্টোন কম্পোসিশন রিলিজ হয়েছে। সরোদের সাথে ভারত নাট্যমের ফিউশন বা যুগলবন্দী। এরকম কাজ বাংলাদেশে এর আগে কখনো হয়নি। এটার মিউজিকে ছিলেন এজাজ ফারাহ, বাংলাদেশ থেকে। ক্যামেরা টিমে ছিলেন রুবাই হুদা আর ভারতনাট্যমে ছিলেন অর্পিতা সোম চৌধুরী । সবার মিলিত প্রচেষ্টায় একটা অসাধারণ কাজ করতে পেরেছি আমরা, এটা আমি মনে করি। বিশেষ করে রুবাই হুদার ক্যামেরার কাজ পুরো ব্যাপারটাকে অন্য লেভেলে নিয়ে গেছে। সাথে সরোদ আর নাচের যুগলবন্দী তো আছেই।"
তানিম হায়াত খান রাজিতের সাক্ষাৎকারটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।
Follow SBS Bangla on FACEBOOK.