প্রধানমন্ত্রী স্বীকার করেছেন যে অস্ট্রেলিয়া পারিবারিক সহিংসতা থেকে নারীদের রক্ষা করার জন্য যথেষ্ট কাজ করতে ব্যর্থ হচ্ছে - একটি জাতীয় মহিলা সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন যে দেশে এখনও এমন সংস্কৃতি রয়েছে যা লিঙ্গ বৈষম্যের অজুহাতকে সমর্থন করে এবং বৈধতা দেয়।
নারীদের সুরক্ষায় যথেষ্ট কাজ করতে অস্ট্রেলিয়ার ব্যর্থতা স্বীকার করলেও প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রবল প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হয়েছে বিশেষ করে অবস্থার শিকার হয়েছেন যারা - যার মধ্যে একজন সাবেক লিবারেল পার্টি কর্মীও আছেন, যিনি সংসদ ভবনে ধর্ষণের অভিযোগ এনে নারীদের প্রতি আচরণ সম্পর্কে জাতীয় আলোচনার সূত্রপাত করেছিলেন।
এটি ছিল "কল টু অ্যাকশন" বা ভূমিকা রাখার আহবান, যা উপেক্ষা করা যায় না।
হাজার হাজার অস্ট্রেলিয়ান দেশ জুড়ে একত্রিত হয়েছিলেন লিঙ্গ পরিচয় নিয়ে সংকীর্ণতা, নারীবিদ্বেষ এবং কর্মক্ষেত্রে অনাচার এবং পারিবারিক সহিংসতার অবসানের দাবিতে।
আজ জাতীয় মহিলা সম্মেলনে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী স্বীকার করেছেন, আরও কিছু করা দরকার।
তিনি বলেন, "এটি কোন নতুন সমস্যা নয় এবং সহজও নয়। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় এই সমস্যা বছরের পর বছর অনেক কিছু পরিবর্তিত হওয়া সত্ত্বেও একই রকম রয়ে গেছে।"
স্কট মরিসন শত শত মহিলার কাছ থেকে তাদের নেতিবাচক ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা কিছু চিঠির বিষয় বর্ণনা করেছিলেন।
তিনি বলেন, সমস্ত চিঠি এবং ইমেলের মাধ্যমে আমি যা জেনেছি তাতে আমি ক্রূদ্ধ হয়েছি। ভয় এবং হতাশার ব্যাপার হলো যে আমাদের সংস্কৃতির পরিবর্তন হচ্ছে না।
কিন্তু তার কথাগুলো কারো কারো কাছে ফাঁকা বুলি মনে হয়েছে ...
অস্ট্রেলিয়ান অফ দ্য ইয়ার গ্রেস টেম, যিনি যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন, তিনি টুইট করেছেন:
"স্কট সবেমাত্র তার উদ্বোধনী বক্তব্য শেষ করেছেন .... যেখানে তিনি নিজের ইমেজ বাড়াতে নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের তথ্য প্রকাশ করে অপব্যবহার করলেন।"
তিনি আরও বলেন: "সত্যি, আমি বাজি ধরে বলতে পারি যে এটি প্রকাশ করতে তার ভাল লেগেছে।"
এটি মিজ টেমের বাক্যটির একটি রেফারেন্স যা জানুয়ারি মাসে তার অস্ট্রেলিয়ান অফ দ্য ইয়ার পুরস্কার গ্রহণের সময় প্রধানমন্ত্রী বক্তৃতার পরে ব্যবহার করেছিলেন।
স্কট মরিসন সেই ঘটনার উল্লেখও করেছিলেন যা দেশব্যাপী বিক্ষোভের সূত্রপাত করেছিল।
তিনি বলে, অনেক অস্ট্রেলিয়ান মহিলারা নিরাপদ বোধ করেন না এবং এটি ঠিক নয়। এমনকি এই জায়গা যেখানে আমি আজ থেকে আপনাদের সাথে কথা বলব, এটিও সব সময় নিরাপদ নয়।
ব্রিটানি হিগিন্স সোশ্যাল মিডিয়াতেও লিখেছিলেন, গ্রেস টেমের সাথে তার সমালোচনায় যোগ দিয়েছিলেন,
তিনি লিখেছিলেন:"যদিও আমি প্রধানমন্ত্রীর 'উচ্চাভিলাষী চেতনা'কে সম্মান করি ... আমি এই সরকারের কর্মকাণ্ডের সাথে মেলাতে পারছি না, বিশেষ করে তারা যেসব অনুভূতি প্রকাশ করছে।"
এই ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে রেস্পেক্ট এট ওয়ার্ক বিল পাস করা।
কিন্তু বিরোধী দলীয় নেতা অ্যান্থনি আলবানিজি বলেছেন, সরকার তা করেনি।
তিনি বলেন, গত সপ্তাহটি অত্যন্ত হতাশাজনক ছিল, কারণ সরকার রেস্পেক্ট এট ওয়ার্ক প্রতিবেদনে সুপারিশগুলি পুরোপুরি গ্রহণ করেনি। কমিশনার জেনকিন্সের সেই প্রতিবেদনটি ভালো ছিল।
সরকার কর্মস্থলে হয়রানির প্রতিবেদন থেকে ৫৫টি সুপারিশের মধ্যে মাত্র ছয়টি গ্রহণ করেছিল।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সুপারিশ যেটি গৃহীত হয়নি তা হলো একটি নিরাপদ কর্মক্ষেত্র তৈরি এবং হয়রানি রোধ করার জন্য নিয়োগকারীদের জন্য একটি "ইতিবাচক দায়িত্ব" আরোপ করা।
অ্যান্থনি আলবানিজি আরো বলেন, আমি সরকারকে উৎসাহিত করবো রেস্পেক্ট এট ওয়ার্ক প্রতিবেদনে সুপারিশগুলি পুনর্বিবেচনার জন্য ।
এই শীর্ষ সম্মেলন নারীদের প্রতি সহিংসতা কমাতে একটি নতুন জাতীয় পরিকল্পনা প্রণয়নে সাহায্য করবে।
১২ বছর আগে গিলার্ড সরকারের অধীনে এমন একটি পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছিল - এবং এটির মেয়াদ আগামী বছর শেষ হবে।
প্রফেসর মার্সিয়া ল্যাংটনসহ অধিকারকর্মীরা যেসব ক্ষেত্রে নারীদের পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে সেখানে বৃহত্তর সম্প্রদায়ের সাথে পরামর্শ করে আরো উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যের জন্য আহ্বান জানাচ্ছেন।
তিনি বলেন, ইন্ডিজিনাস এবং টরে' স্ট্রেইট আইল্যান্ডার মহিলাদের পারিবারিক সহিংসতার কারণে ১১ গুণ বেশি মৃত্যুর সম্ভাবনা আছে, এবং ৩২ গুন বেশি বার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। জাতীয় পরিকল্পনা এবং এর পুনরাবৃত্তি আমাদের কমিউনিটিকে অনিচ্ছাকৃত পরিণতির দিকে পরিচালিত করেছে, জাতীয় পরিকল্পনা আমাদের জন্য কাজ করে না। আমি আবার বলব: জাতীয় পরিকল্পনা আমাদের জন্য কাজ করে না।
ইন্ডিজিনাস এবং টরে' স্ট্রেইট আইল্যান্ডার সোশ্যাল জাস্টিস কমিশনার জুন অস্কার ইন্ডিজিনাস মহিলাদের জন্য একটি পৃথক পদ্ধতির আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, এটি প্রমাণিত যে আদিবাসী মহিলাদের একটি স্বতন্ত্র পরিকল্পনা প্রয়োজন, শুধু ট্যাগ করা বা যুক্ত করা নয়। তারা তাদের নিজস্ব জাতীয় কর্মপরিকল্পনা চায়, অস্ট্রেলিয়ায় ফার্স্ট নেশন্স নারীদের জন্য যা কখনোই ছিল না।
এখন কথাকে কাজে পরিণত করার কঠিন কাজটি করতে হবে।
Follow SBS Bangla on FACEBOOK.