অ্যাডভোকেট এবং ফ্রন্টলাইন কর্মীরা পরিবারের সদস্যদের দ্বারা বয়স্ক অস্ট্রেলিয়ানদের নির্যাতন মোকাবেলা করার জন্য স্টেট এবং ফেডারেল সরকারগুলির কাছ থেকে আরও দ্রুত ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
অ্যাডভোকেট এবং ফ্রন্টলাইন কর্মীরা বলেন যে ভাইরাস মহামারীর সময়ে বিভিন্ন ধরণের প্রবীণ নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে - এর মধ্যে আছে আর্থিক, আইনি, মানসিক, শারীরিকভাবে লাঞ্ছনা এবং অবহেলা।
এবং সমস্যাটি মোকাবেলায় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলির মধ্যে একটি হল লজ্জাবোধ।
মহামারী বিধিনিষেধের মধ্যেই বয়স্ক অস্ট্রেলিয়ান* এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা তাদের পরিচিতদের দ্বারাই নির্যাতন, অবহেলা এবং শোষণের শিকার হচ্ছেন এবং এসব ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে ৷
নিউ সাউথ ওয়েলসের এইজিং এন্ড ডিস্যাবিলিটি (বার্ধক্য এবং প্রতিবন্ধী) কমিশনার রবার্ট ফিটজেরাল্ড বলছেন যে তিনি কমিশনের হটলাইনে পাওয়া রিপোর্টের সংখ্যা তদারকি করেন।
তিনি বলছেন যে গত আর্থিক বছরে এটি দ্রুত বাড়ছিল এবং এই বছর কেস সংখ্যা আরও উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে বলে আশংকা করছেন।
গত বছর ক্রিসমাসের তিন দিন আগে প্রকাশিত অস্ট্রেলিয়ার ফার্স্ট ন্যাশনাল প্রিভেলেন্স প্রতিবেদন থেকে দেখা যায় যে, বৃদ্ধ নির্যাতনের ঘটনা পূর্বে যা অনুমান করা হয়েছিল তার চেয়ে বেশি।
অস্ট্রেলিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ফ্যামিলি স্টাডিজের গবেষণায় দেখা যায় যে ১৫ শতাংশ বয়স্ক অস্ট্রেলিয়ান - যাদের সংখ্যা প্রায় ৬৩০,০০০ - তারা ফেব্রুয়ারি এবং মে ২০২০-এর মধ্যে জরিপ হওয়ার ১২ মাস আগে কোন না কোনভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
এর মধ্যে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বয়স্ক ব্যক্তি নির্যাতনের শিকার হলেও সাহায্য চাননি।
২০১৭ সালে শেষ হওয়া অস্ট্রেলিয়ার দীর্ঘমেয়াদী পঞ্চবার্ষিক রয়্যাল কমিশন ইন ইনস্টিটিউশনাল রেসপন্সেস টু চাইল্ড সেক্সুয়াল অ্যাবিউস-এর পাবলিক ইনকোয়ারি কমিশনার হিসাবে মিঃ ফিটজেরাল্ড শিশুদের সাথে দুর্ব্যবহার সম্পর্কে ভালভাবে পরিচিত ছিলেন।
তিনি বয়স্ক নির্যাতন বিষয়ে যা আবিষ্কার করেছেন সেটিও উদ্বেগজনক। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে এখানে আর্থিক বিষয়ও জড়িত।
হটলাইনে রিপোর্ট করা একটি ঘটনা থেকে দেখা যায় যে একজন মা তার প্রতিবন্ধী ছেলের পক্ষে একটি ট্রাস্ট ফান্ডের সিদ্ধান্তের বিষয়ে সুযোগ নিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে।
অভিযোগে বলা হয়েছিল যে তিনি তার ছেলের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সহায়তা নিতে তার ছেলের সুযোগ কমিয়েছেন এবং যদিও ওই মায়ের কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ছিল না।
সেবাকর্মীরাও সরাসরি তার সাথে পরামর্শ করেননি। কমিশনের তদন্ত এবং হস্তক্ষেপের ফলে, প্রতিবন্ধী লোকটি এখন তার নিজের বাড়িতে আরও বেশি স্বাধীনভাবে থাকছে।
কমিশনার ফিটজেরাল্ড বলছেন যে তার তদন্ত করা, বিষয়গুলি পুলিশে রেফার করা বা অভিভাবক এবং আর্থিক ব্যবস্থাপক নিয়োগে হস্তক্ষেপ করার যথেষ্ট ক্ষমতা আছে।
তিনি বলেন, বয়স্কদের আর্থিক কারণে কষ্ট দেয়ার ঘটনাই সবচেয়ে দ্রুত বাড়ছে।
ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার কিম্বারলি রিজিওনের আদিবাসী সম্প্রদায়ের সদস্যরা এই সমস্যাটি মোকাবেলা করছেন।
কিম্বারলি কমিউনিটি লিগ্যাল সার্ভিসেসের কাছে এসব ঘটনার রিপোর্ট বাড়ছে, এতে তারা কিম্বারলি বার্ডস কনসালটিং গ্রুপকে তদন্ত করতে বলেছে।
সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা, জারু সম্প্রদায়ের নারী নাতাশা শর্ট বলছেন যে প্রকল্পটি সম্পূর্ণ হতে ছয় মাস সময় লেগেছে এবং এতে দেখা যাচ্ছে যে ঘটনাটি ব্যাপক এবং কিছু ক্ষেত্রে এত গুরুতর যে হস্তক্ষেপের প্রয়োজন ছিল।
তিনি বলছেন যে নির্যাতনের একাধিক কারণ রয়েছে -- এবং ঘটনার শিকারদের লজ্জাবোধের কারণে এগুলো রিপোর্ট হয় না।
বয়স্ক ব্যক্তিদের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব মোকাবেলা করা, বয়সজনিত বৈষম্য এবং তাদের সাথে সম্মানের সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা - এগুলোই কমিউনিকেশন ক্যাম্পেইনের মূল বিষয়।
নাতাশা শর্ট বলছেন যে বহু-ভাষিক অ্যানিমেশন ভিডিওগুলিতে আর্থিক নিপীড়ন কী তা বয়স্কদের কাছে বর্ণনা করা হয়েছে, যেটি 'নো মোর হামবাগ' বা 'আর ছলচাতুরী নয়' কথাটি ব্যবহার করে সমস্যাটি বোঝানো হয়েছে।
মিজ শর্ট বলছেন যেখানে আর্থ-সামাজিক বঞ্চনা, বেকারত্ব এবং মাদক সমস্যাগুলোর প্রতিরোধ কৌশল থাকা দরকার, এসব মামলাগুলি যাতে না বাড়ে তা রোধ করার জন্য সরকারের কাছ থেকে আরও অনেক সহায়তার প্রয়োজন আছে।
প্রতিবেদন প্রকাশের ১৪ মাসেরও বেশি সময় পরে, তিনি বলছেন যে সুপারিশগুলি এখনও কার্যকর করা হয়নি।
২০১৯ সালে অস্ট্রেলিয়া বয়স্ক অস্ট্রেলিয়ানদের নির্যাতনের বিষয়ে ভূমিকা নিতে প্রথমবারের মত চার বছরের জাতীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করে।
ন্যাশনাল প্রিভেলেন্স স্টাডি ছিল প্রথম স্বল্পমেয়াদী লক্ষ্যগুলির মধ্যে একটি। এছাড়া অন্যান্য লক্ষ্যগুলির মধ্যে আছে: অ্যাটর্নির ক্ষমতার জাতীয় অনলাইন রেজিস্টার তৈরির সম্ভাব্যতা তদন্ত করা, স্টেট এবং ফেডারেল স্তরে আইনী সুরক্ষাগুলি শক্তিশালী করা এবং সারা দেশে ফ্রন্ট-লাইন সহায়তা পরিষেবাগুলির মূল্যায়ন করা৷
ব্যাঙ্কগুলি তাদের প্রতিক্রিয়ায় বলছে, আর্থিক ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট পারিবারিক সহিংসতা সনাক্ত করার জন্য তাদের উন্নত সিস্টেম আছে।
অস্ট্রেলিয়ান ব্যাঙ্কিং অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান নির্বাহী আন্না ব্লাই বলছেন যে ব্যাঙ্ক বোর্ড এবং সিইওরা এ সম্পর্কে অনেক বেশি সচেতন হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে তারা অনুসরণ করে ২০১৭ সালের রয়্যাল কমিশন টু ব্যাঙ্কিং এন্ড ফাইনান্সিয়াল সার্ভিসেস৷
অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম ব্যাংক, সিবিএর ড: ব্রেন্ডন ফ্রেঞ্চ বলছেন বয়স্কদের সাথে আর্থিক কেলেঙ্কারি এবং নিপীড়ন সনাক্ত করতে ১৫,০০০ ফ্রন্টলাইন কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেশন অফ এথনিক কমিউনিটি' কাউন্সিলের চেয়ারপার্সন মেরি প্যাটেটোস বলছেন, ইংরেজি ভাষী নয় বাড়িতে থাকা এমন ব্যাকগ্রাউন্ডের সিনিয়র অস্ট্রেলিয়ানদের জন্য আর্থিক স্বাধীনতা জরুরী।
আপনি যদি প্রবীণ নির্যাতনের ঘটনার শিকার, সাক্ষী বা সন্দেহ করেন, গোপনীয় তথ্য এবং সহায়তার জন্য 1800 ELDERHelp বা 1800 353 374 এই নম্বরে ন্যাশনাল এল্ডার এবিউজ (National Elder Abuse) - এর ফোন লাইনে কল করতে পারেন।
পুরো প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।
Follow SBS Bangla on FACEBOOK.
এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত। রেডিও অনুষ্ঠান পরেও শুনতে পারবেন, ভিজিট করুন: https://www.sbs.com.au/language/bangla/program
আমাদেরকে অনুসরণ করুন ফেসবুকে।
আরও দেখুন: