সামনের বছর, দেশের সাধারণ নির্বাচন মানে লোকসভা ভোট, তার আগে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তিশগড়, তেলেঙ্গানার ভোট ছিল ভারতের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল, বি জে পি এবং কংগ্রেসের কাছে লিটমাস টেস্টের মতো। তারমধ্যে তিন রাজ্যেই ধরাশায়ী কংগ্রেস।
নরেন্দ্র মোদী ম্যাজিকেই আস্থা রেখেছে আমজনতা। কংগ্রেসের মান রেখেছে শুধুমাত্র তেলেঙ্গানা। সেখানে এক দশকের কেসিআর সরকারকে মসনদ চ্যুত করেছে কংগ্রেস।
কংগ্রেসের এই বেহাল দশা নিয়ে ইতিমধ্যেই সমালোচনা শুরু ইন্ডিয়া জোটে।
তবে জেডিইউ নেতা কেসি ত্যাগী বলেছেন, কংগ্রেসের পরাজয় মানে ইন্ডিয়া জোটের পরাজয় নয়। এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অক্ষম কংগ্রেস। এই সিনড্রোম থেকে কংগ্রেসকে বেরিয়ে আসতে হবে।
জোটের আরেক শরিক এনসিপি সুপ্রিমো শরদ পাওয়ার কংগ্রেসের হার ইন্ডিয়া জোটের উপর কোনও প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করলেও, এখনও বিশেষ কোনও মন্তব্য করতে চাইছেন না।
শরদ পাওয়ার জানিয়েছেন, তিনি দিল্লিতে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের বাড়িতে দেখা করে আলোচনা করবেন। যারা তৃণমূল স্তরের বাস্তব ছবির সঙ্গে অবগত, তাদের সঙ্গে কথা বলবেন।
অন্যদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেস বলছে, এই জয় বিজেপির সাফল্য নয়, কংগ্রেসের ব্যর্থতা। দেশে বিজেপিকে হারানোর লড়াইতে নেতৃত্ব দেওয়ার দল তৃণমূল কংগ্রেস।
মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং ছত্তিশগড় নির্বাচনে বিজেপির জয়জয়কার, আর সেই খুশির আমেজই ধরা পড়েছে দিল্লির বিজেপি সদর দফতরে। রবিবার সকালে জয়ের প্রত্যাশায় আগে থেকেই শুরু হয়েছিল প্রস্তুতি। লাড্ডু থেকে পুরি, হালুয়া তৈরি হচ্ছিল সবকিছুই।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ৩ রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিজেপির জয়ের ব্যবধান যত বাড়তে থাকে, ততই বিজেপির সদর দফতরে বাড়তে থাকে উল্লাস।বিজেপির নেতা-কর্মী-সমর্থক স্লোগন দিতে থাকেন, 'মোদী হো তো মুমকিন হ্যয়'।
ঢাক-ঢোল পিটিয়ে, রং, রঙীন ধোয়া উড়িয়ে জয়ের সেলিব্রেশন করতে দেখা গিয়েছে কর্মী-সমর্থকদের। রাত যত বেড়েছে দিল্লিতে বিজেপির দফতরের সামনে 'গেরুয়া' কর্মী এবং সমর্থকদের ভিড় আরও বেড়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিজেপির সদর দফতরে পৌঁছতেই শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তাঁরা। পশ্চিমবঙ্গেও, কলকাতা-সহ রাজ্যের নানা জেলায় আবির খেলে জয় উদযাপন করেছেন বিজেপি কর্মীরা। বিতরণ করা হয়েছে মিষ্টিও।
এই অবস্থায় ৩ রাজ্যের বিজেপির জয়ের হ্যাট্রিক ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের হ্যাটট্রিকের গ্যারান্টি দিচ্ছে, এমনই মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং ছত্তিশগড়ে বিজেপির জয়ের পর যে নরেন্দ্র মোদী বিশেষ বার্তা দেবেন, তা একপ্রকার স্পষ্টই ছিল।
রবিবার সেই লোকসভা নির্বাচনের সুর বেঁধে দিয়ে বিজেপির সদর দফতর থেকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যেখানে আশা শেষ হয়, সেখান থেকে নরেন্দ্র মোদীর গ্যারান্টি শুরু হয়। বিধানসভা ভোটের প্রচারে ইতিবাচক এমন হাওয়া হয়েছিল, তার সুফল এই মুহূর্তে গোটা দেশ দেখছে।
"১৪০ কোটির ভারতীয়র বিশ্বাসকে জাগিয়ে রাখতে হবে। যারা বিজেপিকে দূরে রয়েছে তাদের কাছে পৌঁছতে হবে। বিজেপির দায়িত্ব আরও অনেক বেড়ে গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ৩ রাজ্যের বিজেপির জয়ের হ্যাট্রিক ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের হ্যাটট্রিকের গ্যারান্টি দিচ্ছে। অনিয়ম, তোষণ এবং পরিবারতন্ত্র নিয়ে সাধারণ মানুষ জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছে।কেন্দ্রীয় সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইকে মানুষ সমর্থন করছে।"
পাল্টা হিসাবে, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলছেন, আদর্শের লড়াই জারি থাকবে। ৩ রাজ্যে গেরুয়া ঝড়ে কোণঠাসা কংগ্রেস, আর জনতার এই রায়কে মাথা পেতে নিয়েছেন কংগ্রেস নেতা।
সোশ্যাল মিডিয়ায় এক পোস্টে রাহুল গান্ধী বলেছেন, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় আর রাজস্থানের মানুষের রায়কে তাঁরা মাথা পেতে নিচ্ছেন। তবে আদর্শের লড়াই জারি থাকবে। তেলেঙ্গানার জনগণের কাছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ কংগ্রেস। অবশ্যই তেলেঙ্গনায় প্রতিশ্রুতি পূরণ করবেন তাঁরা। কঠোর পরিশ্রম এবং সমর্থনের জন্য সমস্ত কর্মীদের আন্তরিক ধন্যবাদ।
অন্যদিকে, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, তেলেঙ্গানার মানুষ কংগ্রেসকে যে দায়িত্ব দিয়েছে, তার জন্য তাঁরা কৃতজ্ঞ। পাশাপাশি ছত্তিশগড়, রাজস্থান এবং মধ্যপ্রদেশে যারা কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছেন, তাদের ধন্যবাদ। এই তিন রাজ্যে কংগ্রেসের ফল হতাশাজনক। তবে আগামী দিনে কংগ্রেস আরও শক্তিশালী হয়ে তিন রাজ্যেই ক্ষমতায় ফিরবে।
অন্যদিকে গুরুত্বপূর্ণ ৪ রাজ্যের বিধানসভার ভোটে ৩ রাজ্যে হার, এই নির্বাচনের ফলের কোনও প্রভাব বি জে পি বিরোধী, ইন্ডিয়া জোটে পড়বে না,এমনটাই জানিয়েছেন এনসিপি সুপ্রিমো শরদ পাওয়ার।
২০২৪ লোকসভা ভোটের আগে 'সেমিফাইনাল' ছিল ৫ রাজ্যের বিধানসভা ভোট। সেখানে একেবারে ভরাডুবি হয়েছে কংগ্রেসের। ৪ রাজ্যের মধ্যে কেবল দক্ষিণ ভারতের রাজ্য তেলঙ্গানায় মুখরক্ষা হয়েছে কংগ্রেসের।
এই আবহে মধ্যপ্রদেশের সাতারায় এনসিপি নেতা তথা ইন্ডিয়া জোটে কংগ্রেসের শরিক শরদ পাওয়ার বলেছেন, মল্লিকার্জুন খাড়গের দিল্লির বাসভবনে বসে ৫ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ফলাফলের কারণ বিশ্লেষণ করবেন। তারপরই কংগ্রেসের বিপর্যয়ের কারণ বলা যাবে।
এদিকে আবার ৬ ডিসেম্বর দিল্লিতে ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে যাচ্ছেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দল তৃণমূলের কংগ্রেসও ওই বৈঠকে হাজির থাকবে কিনা তা রবিবার রাত পর্যন্ত নিশ্চিত নয়। তৃণমূল কংগ্রেস সূত্রে খবর, সন্ধ্যা পর্যন্ত ইন্ডিয়া জোটের বৈঠক নিয়ে কংগ্রেস সভাপতি মাল্লিকার্জুন খাড়গের কোনও ফোন আসেনি নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে।
দল সূত্রে বলা হচ্ছে, ৬ তারিখেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তরবঙ্গ সফরে যাওয়ার কথা। ১২ ডিসেম্বর তাঁর কলকাতায় ফেরার কথা রয়েছে। অন্যদিকে, দলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় চোখের চিকিৎসার জন্য ব্যস্ত রয়েছেন। একই সঙ্গে কংগ্রেসের কাছ থেকে আমন্ত্রণ এলেও ওই বৈঠকে আর অন্য কোন দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে কিনা তা তৃণমূলের কাছে স্পষ্ট নয়।
এই অবস্থায় তৃণমূল বলছে, সদ্য সমাপ্ত রাজ্যের ভোটেও এই ইন্ডিয়া জোটকে সফল করতে কংগ্রেসের তরফে কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি। ফলে সে অর্থে বিরোধী জোট স্রেফ বৈঠকেই আবদ্ধ রয়ে গিয়েছে।
তৃণমূল কংগ্রেসের এক নেতা বলছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম থেকেই সর্বভারতীয় স্তরে ভোট ভাগাভাগি না হওয়ার কথা বলছিলেন। কিন্তু তাতে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। তার ফলই এই বিপর্যয়। এই অবস্থায় শেষ মুহূর্তে কি হবে অর্থাৎ ৬ তারিখের বৈঠকে তৃণমূলের কোনও প্রতিনিধিত্ব থাকবে কিনা তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপরেই ছেড়ে দিচ্ছে তৃণমূলের অন্য নেতারা।
আর দিল্লিতে দলের সদর দপ্তরে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে জয়ের আনন্দ ভাগ করে নিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন জাতপাতের ভিত্তিতে দেশভাগের অনেক চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু বিভেদের রাজনীতির বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে মানুষ। লোকসভা ভোটের আগে সেমিফাইনালে গেরুয়া ঝরে কার্যত ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছে কংগ্রেস।
এই জয়কে ঐতিহাসিক ও অভূতপূর্ব বলে আখ্যা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, দেশের চারটি জাত আছে। সেগুলি হল নারীশক্তি, যুবশক্তি, কৃষক এবং গরিব। এই চারটি জাতের ক্ষমতায়ন হলেই দেশের ক্ষমতায়ন হবে। বর্তমানে দেশের সব মহিলাদের মনে শুধুই বিজেপি ।নারীশক্তির বিকাশই বিজেপির বিকাশ মডেলের এক মহত্বপূর্ণ স্তম্ভ।
এরপরেই কংগ্রেসকে নিশানা করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দেশের আদিবাসী সমাজ প্রকাশ্যে তাদের মনের কথা জানিয়েছে। কংগ্রেসের নীতির জন্য আদিবাসী সমাজ ১০ বছর পিছিয়ে গিয়েছে। তাই আদিবাসী সমাজ এখন উন্নয়নের জন্য মুখিয়ে রয়েছে। আদিবাসী সম্প্রদায় জানে কেবল বিজেপি তাদের আকাঙ্খা পূরণ করবে।
এসবিএস রেডিও সম্প্রচার-সূচী হালনাগাদ করেছে, এখন থেকে প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার, বিকাল ৩টায়, এসবিএস পপদেশীতে আমাদের অনুষ্ঠান শুনুন, লাইভ।
কিংবা, পুরনো সময়সূচীতেও আপনি আমাদের অনুষ্ঠান শোনা চালিয়ে যেতে পারেন। প্রতি সোম ও শনিবার, সন্ধ্যা ৬টায়, এসবিএস-২ তে।