যা ঘটেছিল সেই রাতে
গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কের শেষ মাথায় লেকের তীরে হলি আর্টিজান বেকারির সবুজ লন ছিল বিদেশিদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। রোজার ঈদের মাত্র এক সপ্তাহ আগে যেদিন ওই হামলা হয়, সেদিন ছিল শুক্রবার। পিস্তল, সাব মেশিনগান আর ধারালো অস্ত্র হাতে পাঁচ তরুণ রাত পৌনে ৯টার দিকে ওই ক্যাফেতে ঢুকে শুরু করে নৃশংসতা।
গোলাগুলির খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান গুলশান থানা পুলিশের সদস্যরা। ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি দিয়ে রেস্তোরাঁর ভেতরে এলোপাতাড়ি গুলির খবর মুহূর্তেই পুলিশের ওয়্যারলেসে ছড়িয়ে পড়ে।
থানা পুলিশ ছাড়াও র্যাব, সদ্য গঠিত কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের শীর্ষ কর্মকর্তারাসহ সব সদস্য ছুটে আসেন। সবার দৃষ্টি চলে যায় এই রেস্তোরাঁ ঘিরে। সবাই নিশ্চিত হয় এটা জঙ্গিদের হামলা।
রাতেই তাদের দমনে অভিযান চালাতে গিয়ে বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিন এবং গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম মারা যান। আহত হন অনেক পুলিশ সদস্য।
কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ওই হামলার খবর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর শিরোনামে চলে আসে; তখনও অনেকে হলি আর্টিজানের ভেতরে কার্যত জিম্মি হয়ে ছিলেন।
রুদ্ধশ্বাস রাত পেরিয়ে ভোরে সেনাবাহিনীর কমান্ডোরা নামে অভিযানে; ‘থান্ডারবোল্ট’ নামের সেই অভিযানে হামলায় সরাসরি অংশ নেওয়া পাঁচ তরুণের সবাই মারা পড়ে। তখনই দেখা যায়, রাতে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে গলাকেটে হত্যা করেছে জঙ্গিরা। বেকারির ভেতর থেকে ১৩ জনকে উদ্ধার করা হয়।
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে ঢাকার কূটনৈতিকপাড়া গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে নজিরবিহীন ওই জঙ্গি হামলা সাধারণের মতো চমকে দিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও।
সন্ত্রাস, ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি ও বিছিন্ন জঙ্গি হামলার মতো ঘটনা মোকাবেলা করে অভ্যস্ত পুলিশ- র্যাবকে ওই প্রথম জঙ্গিদের সরাসরি মোকাবেলার পরীক্ষায় পড়তে হয়। জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ দমনে মাত্র চার মাস আগে গঠন করা ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সদস্যরাও এই হামলা সম্পর্কে প্রথমে বুঝতেই পারেননি।
তবে সেদিনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে পরবর্তীতে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে জঙ্গি দমনে বিশেষ সেল গঠন করার পাশপাশি ২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর সারা দেশের জন্য এন্টি টেররিজম ইউনিট নামে পৃথক একটি ইউনিট গঠন করা হয়। র্যাবেও রয়েছে জঙ্গি নিয়ে কাজ করার পৃথক সেল। কার্যত ওই জঙ্গি হামলা বাংলাদেশকে বদলে দেয় অনেকখানি।
মামলার পেপারবুক ছাপা শেষ পর্যায়ে
হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা ও লোমহর্ষক হত্যাযজ্ঞের তদন্ত শেষে গত বছরের নভেম্বরে সাত জঙ্গির ফাঁসি ও একজনকে খালাসের রায় দেন আদালত।
হলি আর্টিজান বেকারিতে চার বছর আগে নজিরবিহীন জঙ্গি হামলা চালিয়ে ২২ জনকে হত্যার দায়ে নব্য জেএমবির সাত সদস্যের মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য নথি (ডেথ রেফারেন্স) পেপারবুক তৈরির পর্যায়ে রয়েছে।
ঢাকা প্রতিনিধির পাঠানো প্রতিবেদন।