গতকাল মঙ্গলবার দুপুর দেড়টা নাগাদ ল্যান্ডফল প্রক্রিয়া শুরু করে মিগজাউম। অন্ধ্রপ্রদেশের নেল্লোর এবং মছিলিপত্তনমের মাঝামাঝি জায়গা দিয়ে ঘূর্ণিঝড় ভূভাগে প্রবেশ করছে। 
এই আবহে অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলে ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১১০ কিমি বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইছে। উত্তাল সমুদ্রে দেড় ফুট উচ্চতার ঢেউ আছড়ে পড়ছে উপকূলে।
ইতিমধ্যেই অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলে ভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলের প্রায় সর্বত্রই মাঝারি বৃষ্টিপাত জারি থাকবে। যার মধ্যে দক্ষিণ অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়তে চলেছে। 
প্রবল বৃষ্টিতে বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হওয়ার আশঙ্কায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে সেনাবাহিনী। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরকেও সতর্ক করা হয়েছে।খোলা হয়েছে কন্ট্রোলরুম। 
ইতিমধ্যে উপকূলবর্তী এলাকার মানুষদের নিরাপদে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।অন্যদিকে, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে একাধিক ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। সকাল থেকে চেন্নাই-হায়দরাবাদ বিমানবন্দরে বিমান ওঠানামায় রাশ টানা হয়েছে। 
অন্ধ্রপ্রদেশে সরকার আট জেলায় সতর্কতা জারি করেছে। তিরুপতি, নেল্লোর, প্রকাশম, বাপাতলা, কৃষ্ণা, পশ্চিম গোদাবরী, কাকিনাড়া, কোনাসীমার প্রশাসনকে সতর্ক করা হয়েছে। 
উপকূল থেকে বাসিন্দাদের সরানো হয়েছে। অবস্থা বুঝে আধিকারিকদের দ্রুত পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছেন অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী জগনমোহন রেড্ডি। পুদুচেরির উপকূলবর্তী এলাকায় জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা।
আশঙ্কা অনুযায়ী দক্ষিণ ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলের বাপাতলার কাছে স্থলভাগে আছড়ে পড়ছে মিগজাউম। শেষ ছ’ঘণ্টায় সমুদ্রের উপর এর গতিবেগ ছিল ১০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। তবে আছড়ে পড়ার সময় মিগজাউমের গতি ছিল ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার। 
মিগজাউমের প্রভাবে তামিলনাড়ুর চেন্নাইয়ে মারা গিয়েছেন আট জন। জলমগ্ন শহরের বহু এলাকা।
জানা গেছে মিগজাউমের প্রভাবে ভারী বর্ষণে ইতিমধ্যেই ভেসে গিয়েছে চেন্নাই। প্রবল বৃষ্টিপাতের জেরে বহু এলাকা জলমগ্ন। 
ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে রাস্তাঘাট কার্যত নদীতে পরিণত হয়েছে। বহু যানবাহন জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে। জায়গায় জায়গায় বড় বড় গাছ, দেওয়াল এবং বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে পড়েছে। 
বন্যার জল প্রবেশ করায় বেশ কয়েকটি হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরিষেবা সাময়িক ভাবে স্থগিত। জলরুদ্ধ হয়ে পড়েছে মেট্রো স্টেশনগুলি। অবিরাম বর্ষণের কারণে বেশ চেন্নাইয়ের কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ এবং ইন্টারনেট সংযোগ বিঘ্নিত হয়েছে। 
প্রশাসনের তরফে চেন্নাইয়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ রাখার ঘোষণা করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বেসরকারি অফিসের কর্মীদেরও বাড়ি থেকে কাজ করতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে চেন্নাইয়ে গিয়ে বন্যার কবলে পড়েছিলেন বলিউড অভিনেতা আমির খানও। তিনি তার মায়ের চিকিৎসার জন্যে চেন্নাইতে ছিলেন। 
অবশেষে নৌকায় করে উদ্ধার করা হয়েছে বলিউড তারকাকে। সাধারণ নাগরিকদের মতো নৌকায় চেপে নিরাপদ স্থানে পৌঁছান আমির। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ছবি ভাইরাল।
এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে মঙ্গলবার কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের সব জেলায় বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু পশ্চিম বর্ধমানে বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। বুধবার সব জেলায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। তবে জেলার সব জায়গায় বৃষ্টি হবে না। 
বৃহস্পতিবারও দক্ষিণের জেলাগুলিতে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর।




