ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশে গ্যাস লিক, মৃত ১১, হাসপাতালে প্রায় ৫ হাজারের বেশি

অন্ধ্রপ্রদেশের রাসায়নিক কারখানা থেকে বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে পড়ায় মৃত্যু হয়েছে এক শিশু-সহ ১১ জনের। হাসপাতালে প্রায় ৫ হাজারের বেশি মানুষ। ঘটনাস্থলে গিয়েছে দমকল, পুলিশের বিশাল বাহিনী ও অ্যাম্বুল্যান্স। বিশাখাপত্তনমের আর বেঙ্কটপুরমের এলজি পলিমারস ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেডের রাসায়নিক প্ল্যান্টে গ্যাস লিক করায় এলাকার মানুষের মধ্যে চোখ জ্বালা ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দেয় বলে জানিয়েছেন আধিকারিকরা। বিষাক্ত স্টাইরিন গ্যাস লিকে বিশাখাপত্তনমের এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।

People carry a woman affected by a chemical gas leak in Vishakhapatnam, India, Thursday, May 7, 2020. Chemical gas leaked from an industrial plant in southern India early Thursday, leaving people struggling to breathe and collapsing in the streets as they

People carry a woman affected by a chemical gas leak in Vishakhapatnam, India, Thursday, May 7, 2020. Source: AP

অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমের একটি রাসায়নিক কারখানা থেকে বৃহস্পতিবার সকালে বিষাক্ত গ্যাস লিক হয়ে এক শিশু-সহ মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। ঘটনার জেরে আশেপাশের এলাকার প্রায় ১ হাজারেরও বেশি জন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁদের ভর্তি করা হয়েছে বিশাখাপত্তনমের কিং জর্জ হাসপাতালে। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর একটি দল সেখানে পৌঁছে উদ্ধারের কাজ চালাচ্ছে। দক্ষিণ ভারতের বিশাখাপত্তনমের দক্ষিণ শহরতলির কাছে গোপালপত্তনম এলাকায় রয়েছে এলজি পলিমার ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড নামের ওই রাসায়নিক কারখানা। মূলত পলিয়েস্টার পলিথিন তৈরি হত ওই কারখানায়। সেই কাজে ব্যবহার করা হত স্টাইরিন নামের গ্যাস,যা মানব শরীরের পক্ষে বিষাক্ত।বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৩টে নাগাদ ওই কারখানা থেকে গ্যাস লিক শুরু হয়। সে সময় কারখানায় ছিলেন শুধু নিরাপত্তারক্ষীরা। সেই গ্যাস লিক হওয়ায় অচৈতন্য হয়ে পড়েন তাঁরা। ফলে তখন খবর দেওয়া সম্ভব হয় নি। এর পর গ্যাস ছড়িয়ে পড়তে থাকে লোকালয়ে। সাড়ে ৪টের দিকে আশেপাশের এলাকার বাসিন্দাদের চোখ জ্বালা ও শ্বাসকষ্ট শুরু হতে থাকে। যার জেরে ঘুম ভেঙে যায় অনেকের। জরুরি ভিত্তিতে উদ্ধারের কাজে নামে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী।

এদিকে বিশাখাপত্তনমে গ্যাস লিক কাণ্ডে জরুরি বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৈঠকের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক,জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সঙ্গে আলাদা করে কথাও বলেছেন তিনি। অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী জগনমোহন রেড্ডিকে সব রকম সাহায্যের আশ্বাসও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। গ্যাস লিকে অসুস্থদের দ্রুত আরোগ্য এবং মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দও। এ ছাড়া শাসক-বিরোধী সব রাজনৈতিক দলের নেতারাও মৃতদের পরিবারের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। অন্য দিকে গ্যাস লিক হওয়া বিশাখাপত্তনমের ওই সংস্থার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অন্ধ্রপ্রদেশের শিল্পমন্ত্রী এমজি রেড্ডি। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে জানানো হয়েছে, বিশাখাপত্তনমের পরিস্থিতি মোকাবিলায় একটি জরুরি বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী। গ্যাস লিকের মোকাবিলায় কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং আরও কী কী করা দরকার, তা নিয়ে কথা হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহদের সঙ্গে। অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী জগনমোহন রেড্ডির সঙ্গে কথা বলে সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন বলেও জানানো হয়েছে পিএমও-র ওই টুইটে। অন্যদিকে, গ্যাস লিক হওয়া দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্থা এলজি পলিমার্স-এর বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দিয়েছেন অন্ধ্রপ্রদেশের শিল্পমন্ত্রী এম জি রেড্ডি। তিনি বলেছেন, গ্যাস দুর্ঘটনার জন্য ওই সংস্থার পরিচালন বোর্ডই দায়ী।বোর্ডের সবাইকে এসে ব্যাখ্যা করতে হবে সব নিয়ম মানা হয়েছিল কি না, বা কী কী গাফিলতি ছিল। সেই অনুযায়ী ফৌজদারি কার্যবিধিতে সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অন্যদিকে বিশাখাপত্তনমের রাসায়নিক কারখানা থেকে বিষাক্ত গ্যাস লিকের দুর্ঘটনার কারণ হিসাবে গাফিলতির অভিযোগই তুলছে বিশাখাপতনম পুলিশ। তাদের মতে, যে ট্যাঙ্ক থেকে গ্যাস লিক করেছে তা রক্ষণাবেক্ষণই হত না। দুর্ঘটনার কিছু পরে অবশ্য বিবৃতি দিয়েছে এলজি পলিমার ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড নামে ওই কারখানাটির মূল সংস্থা দক্ষিণ কোরিয়ার এলজি কেম। তারা জানিয়েছে, লকডাউনের জেরে কারখানা বন্ধ ছিল। তবে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কর্মীরা ছিলেন।তার পরেও কী কারণে এমন দুর্ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে তারা। বস্তুত, বিশাখাপত্তনমের গোপালপতনমের কারখানা থেকে বিষাক্ত স্টাইরিন গ্যাস লিকের দুর্ঘটনার হাত ধরে ফিরে এসেছে ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনার স্মৃতি। দক্ষিণ কোরিয়ার ব্যাটারি প্রস্তুতকারক সংস্থা এলজি কেম-র বিবৃতির পরে কী ভাবে গ্যাস লিক হল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আরও বলা হয়েছে, সংস্থাটির দাবি, ওই গ্যাস নাকে গেলে মানুষের বমিভাব আসতে পারে ও মাথা ঘুরতে পারে। এ দিনের দুর্ঘটনায় এক শিশু-সহ ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার জেরে গোপালপতনমের আশেপাশের এলাকার প্রায় হাজার জন অসুস্থও হয়ে পড়েন।

বিশাখাপতনমের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার অব পুলিশ স্বরূপা রানি বলছেন, একটি বড় ট্যাঙ্ক থেকেই ওই বিষাক্ত গ্যাস লিক করেছে। কিন্তু সেই ট্যাঙ্কটি মার্চ মাসে লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে কোনওরকম ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় নি। কারখানা পুরোপুরি বন্ধ থাকার দাবি পুরোপুরি মানছেন না গ্রেটার বিশাখাপতনম মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের কমিশনার সৃজনা গুম্মালা। তাঁর মতে, দিন কয়েক আগে লকডাউন শিথিল হতেই ওই প্ল্যান্টটি চালু করা হয়েছিল। তবে এলজি কেম জানিয়েছে,রাতের শিফটে কাজ করা এক কর্মীই গ্যাস লিকের বিষয়টি আবিষ্কার করেন এবং কর্তৃপক্ষকে জানান।


Share

Published

Updated

By Partha Mukhopadhyay
Presented by Abu Arefin

Share this with family and friends


Follow SBS Bangla

Download our apps
SBS Audio
SBS On Demand

Listen to our podcasts
Independent news and stories connecting you to life in Australia and Bangla-speaking Australians.
Ease into the English language and Australian culture. We make learning English convenient, fun and practical.
Get the latest with our exclusive in-language podcasts on your favourite podcast apps.

Watch on SBS
SBS Bangla News

SBS Bangla News

Watch it onDemand