উন্নত দেশগুলোসহ সারা বিশ্ব যখন COVID-19 মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে, তখন অস্ট্রেলিয়ার চিত্রটি ভিন্ন। এ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় সংক্রমণের সংখ্যা প্রায় ৬,৫০০ এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৬৩ জন। এছাড়া দৈনিক সংক্রমণের হারও অনেক কমে এসেছে। ১৭ই এপ্রিল সকাল ৬টা পর্যন্ত সারা অস্ট্রেলিয়ায় গত ২৪ ঘন্টায় ৩৯টি নতুন সংক্রমণ রেকর্ড করা হয়েছে এবং এ পর্যন্ত সর্বমোট টেস্ট করা হয়েছে ৩৮৪,০০০। (Source: Australian Government, Department of Health)
করোনা মোকাবেলার এই সাফল্যের জন্য অস্ট্রেলিয়ানরা সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ এবং এর স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রতি স্বস্তি প্রকাশ করেছে। গত সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত ১,০০০ অস্ট্রেলিয়ান নাগরিকের ওপর করা নিউগেট রিসার্চ নামে একটি সংস্থার এক সমীক্ষায় দেখা যায় প্রায় ৭৯ ভাগ অস্ট্রেলিয়ান সরকারের গৃহীত পদক্ষেপে আস্থাবান। অথচ ছয় সপ্তাহ আগেও এই হার ছিল ৫৫ শতাংশ।
সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের অন্তত ৮১ ভাগ সরকারের সামাজিক দূরত্বের বিধিগুলোকে সঠিক এবং যুক্তিযুক্ত বলে মনে করেন।

Source: SBS
COVID-19 মোকাবেলায় সরকারের পদক্ষেপ এবং আগামীর চিত্র টি কি হতে পারে এ বিষয়ে এসবিএস বাংলার সাথে কথা বলেছেন ফেডারেশন ইউনিভার্সিটির পাবলিক হেল্থ বিষয়ের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ আজিজ রহমান।
ডঃ রহমান পাবলিক হেল্থ এসোসিয়েশন অফ অস্ট্রেলিয়ার COVID-19 টেকনিকাল এক্সপার্ট রেসপন্স কমিটির এডভাইজরি গ্রুপের সদস্য মনোনীত হয়েছেন।
ডঃ আজিজ রহমান মনে করেন, করোনা মোকামেলায় অস্ট্রেলিয়া সারা বিশ্বের জন্য একটি উদাহরণ সৃষ্টি করেছে।
"মার্চ থেকেই অস্ট্রেলিয়ায় কঠোরভাবে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, যেমন বর্ডারগুলো বন্ধ করে দেয়া, লকডাউন এবং এতে প্রতিটি স্টেজেই সংক্রমণের সংখ্যা কমে এসেছে। বিশেষ করে স্টেজ-থ্রী লকডাউনের পর কেস সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমে এসেছে। আরো পদক্ষেপ যেমন ইনডোর-আউটডোর রেস্ট্রিকশন, বাড়ী থেকে কাজ করা, সামাজিক দূরত্বে কড়াকড়ি এগুলো সবই কেস সংখ্যা কমাতে সাহায্য করেছে।"
তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়া এ পর্যন্ত ৩,৮৪,০০০-এর মতো COVID-19 টেস্ট করেছে যা কেস খুঁজে পেতে একটি বড়ো পদক্ষেপ।

Dr Aziz Rahman Source: Supplied
তিনি বলেন, "যারা COVID-19-এ আক্রান্ত হয়েছেন এবং তাদের সাথে যারা সংস্পর্শে এসেছেন তাদের খুঁজে বের করা, বিচ্ছিন্ন রাখা, এবং নিয়ম করে ফলো-আপ করাও সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেছে। এই বিষয়গুলো মেইনটেইন করেই কিন্তু অস্ট্রেলিয়া সাফল্য পেয়েছে।"
অস্ট্রেলিয়া সরকার মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটির একটি মডেল শেয়ার করেছে সে বিষয়টি উল্লেখ করে ডঃ আজিজ বলেন, "আমরা যদি সংক্রমণ হ্রাসের জন্য গৃহীত পদক্ষেপের এই ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে পারি তবে একটা নির্দিষ্ট সময় পর সংক্রমণ অনেক কমে আসবে এবং ভাইরাসের বিস্তার পুরোপুরি বন্ধ করতে পারবো। তবে এজন্য ঠিক কতদিন অপেক্ষা করতে হবে তা আন্দাজ করা দুরূহ।"
তবে লকডাউন শিথিল করলে আবারো ভাইরাসের বিস্তার বেড়ে যেতে পারে বলে ডঃ রহমান আশংকা করছেন। তিনি বলেন, "অস্ট্রেলিয়া সরকার আগামী ছয় মাসের জন্য ভাইরাস প্রতিরোধের একটি কার্যকর পরিকল্পনা নিয়ে আগাচ্ছে যে কিভাবে এই সংক্রমণ প্রতিহত করা যায়।"
অস্ট্রেলিয়ায় কিছুদিনের মধ্যে Flu (Influenza) সিজন আসছে, করোনা ভাইরাসের সাথে Flu উপসর্গের অনেক মিল আছে, এ প্রসংগে তিনি বলেন, "যারা এখনো Flu ভ্যাকসিন নেননি তাদের উচিত যত শীঘ্রই ভ্যাকসিন নিয়ে নেয়া। Flu ভ্যাকসিন হয়তো করোনা থেকে রক্ষা করবে না, কিন্তু Flu-এর সাথে করোনার মিলিত প্রভাব অনেক খারাপ হতে পারে।"
আসছে শীতের মৌসুমে করোনা কতটুকু প্রভাব ফেলতে পারে এ বিষয়ে ডঃ আজিজ রহমান জানান ঠান্ডা বা গরমের কোন তাপমাত্রায় করোনা বিস্তার লাভ করবে এ ব্যাপারে কোন সঠিক তথ্য জানা এখনো সম্ভব হয় নি।
আরো পড়ুন: