সোমবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা করেছেন, এবার থেকে দেশে উৎপাদিত মোট ভ্যাকসিনের ৭৫ শতাংশ কিনবে ভারত সরকার। সেই ভ্যাকসিন বিনামূল্যে তুলে দেওয়া হবে রাজ্য সরকারগুলির হাতে। রাজ্য সরকারকে ভ্যাকসিনের জন্য কোনও টাকা খরচ করতে হবে না। এই প্রক্রিয়া আগামী ২১ জুন যোগ দিবস থেকে শুরু হবে।
জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, এ বছর ১৬ জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের শেষ পর্যন্ত টিকাকরণ মূলত কেন্দ্রের হাতেই ছিল। দেশ বিনামূল্যে টিকাকরণের দিকে এগোচ্ছিল। কিন্তু তারপর অনেক রাজ্য টিকাকরণের ভার নিজেদের হাতে চাইছিল। স্বাস্থ্য যেহেতু মূলত রাজ্যের ব্যাপার, তাই ভারত সরকার রাজ্যগুলির উপর টিকাকরণের ভার ছেড়েছিল।
ভারত সরকার গাইডলাইন তৈরি করেছিল যাতে রাজ্য সরকারগুলি নিজেদের মতো ব্যবস্থা করতে পারে। ১মে থেকে রাজ্য সরকারগুলিকে ২৫ শতাংশ করে টিকা দেওয়া শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, মে মাসের দুসপ্তাহের মধ্যেই অনেক রাজ্য সরকার বুঝতে পারে, আগের ব্যবস্থাই ভাল ছিল। অনেক রাজ্য সরকারের টিকা দানে সমস্যা হচ্ছিল। সেই সমস্যা মেটাতেই কেন্দ্র আগের মতো সব নাগরিকের টিকাকরণের দায়িত্ব নিল।
তবে, কেউ চাইলে বেসরকারি হাসপাতালেও টিকা নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে, বেসরকারি হাসপাতাল ভ্যাকসিনের দামের উপর সর্বোচ্চ দেড়শো টাকা সার্ভিস ট্যাক্স নিতে পারবে। এটা দেখাশোনার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের।
বস্তুতঃ এর ফলে কেন্দ্রের টিকা নীতিতে আমূল পরিবর্তন করা হলো। জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্পষ্টভাবে বলেছেন, সমস্ত রাজ্যকে টিকা কিনে বিনামূল্যে সরবরাহ করবে কেন্দ্র। ২১ জুন, থেকে ১৮ ঊর্ধ্ব সব নাগরিককে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়া হলে বলে ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। অর্থাৎ রাজ্য সরকারকে ভ্যাকসিনের জন্যে আলাদা করে আর কোনও টাকা খরচ করতে হবে না।

Prime Minister Narendra Modi. Source: AAP
সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে সমালোচনার মুখে পড়ে কেন্দ্রের টিকাকরণ নীতি। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়সহ বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা বারবার প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে কেন্দ্রের তরফে করোনা ভ্যাকসিন বা টিকা কিনে রাজ্যগুলিকে দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন।
জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, দরিদ্র-উচ্চবিত্ত-নিম্নবিত্ত সমস্ত দেশবাসীকেই বিনামূল্যে টিকা দেবে সরকার। রাজ্যের আর্জি মেনেই সমস্ত রাজ্যকে বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। তবে টিকা বণ্টন ও তাতে কোনও দুর্নীতি হচ্ছে কিনা তা খেয়াল রাখার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট রাজ্যের বলেই জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
অন্যদিকে, করোনা ও লকডাউনে যাতে গরিব মানুষ না খেয়ে থাকেন, তা নিশ্চিত করবে কেন্দ্রীয় সরকার, এমনটাই জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
সোমবার জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনার মেয়াদ দিপাবলি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ফলে, নভেম্বর পর্যন্ত দেশের ৮০ কোটির বেশি মানুষকে বিনামূল্যে রেশন দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, "গত বছর যখন করোনার জেরে দেশে লকডাউন হয়েছিল, এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৮০ কোটি দরিদ্র মানুষকে বিনামূল্যে রেশন দেওয়া হয়েছিল। চলতি বছর করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের জেরে মে ও জুন মাসে রেশন ব্যবস্থা চালু ছিল। কিন্তু, এবার সেই সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে।"
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, "মহামারীর এই সময়ে কেন্দ্রীয় সরকার দেশের সকল গরিব মানুষের পাশে রয়েছে। নভেম্বর পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনা চালু থাকবে। প্রতি মাসে গরিবেরা বিনামূল্যে আনাজ পাবেন। এর একটাই উদ্দেশ্যে দেশের কোনও গরিব ব্যক্তি ও তাঁর পরিবারকে না খেয়ে থাকতে হবে না।"
এসবিএস বাংলার রেডিও অনুষ্ঠান শুনুন প্রতি সোমবার এবং শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় এবং আরও খবরের জন্য আমাদের ফেইসবুক পেইজটি ভিজিট করুন।
আরো দেখুন: