গত ২ বছর চিকিত্সা চলাকালীনও সবসময়ে হাসিখুশি ছিলেন কিংবদন্তী অভিনেতা ঋষি কাপুর। জীবনকে প্রাণ ভরে উপভোগ করতেন।পরিবার, বন্ধু, খাওয়াদাওয়া, সিনেমাই ছিল ওঁর জীবনের ফোকাস।এই সময়ে যাঁরাই ওঁর সঙ্গে দেখা করেছেন অবাক হয়ে গিয়েছেন লড়াকু মনোভাব দেখে।রোগ ওঁর মনে ভয় ঢোকাতে পারেনি। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তদের যে ভালোবাসা উনি পেয়েছেন তার জন্যে সব সময়ে কৃতজ্ঞ ছিলেন। ওঁর মৃত্যুর পর চোখের জল নয়, ওঁকে হাসি মুখে মনে করলেই সবচেয়ে বেশি খুশি হবেন।
বৃহস্পতিবার সকালে ঋষি কাপুরের দাদা রণধীর কাপুর সংবাদ সংস্থাকে ঋষি কাপুরের মৃত্যুর খবর জানান।ঋষির মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসতেই ফের শোকের ছায়া নেমে আসে গোটা ভারত জুড়ে।ক্যানসার ধরা পড়ার পরই নিউ ইয়র্কে চিকিতসা করাতে চলে যান ঋষি।স্ত্রী নিতু কাপুরকে নিয়ে ইয়র্কে পাড়ি দেন তিনি।চিকিতসা শেষ গত সেপ্টেম্বর মাসে দেশে ফেরেন বলিউডের বর্ষীয়ান অভিনেতা।কিন্তু শেষ রক্ষা হল না,দেশে ফেরার পর দুবার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি।বুধবার রাতে গুরুত্ব অবস্থায় মুম্বইয়ের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে।
ঋষি কাপুর ছিলেন ,রাজ কপূর ঘরানার উজ্জ্বল উত্তরসূরী।মেরা নাম জোকার ছবিতে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন, ১৯৭০ সালে। নিতান্তই শিশু তিনি তখন।কিন্তু প্রথম আত্মপ্রকাশেই জাতীয় পুরস্কার তাঁর অভিনয় জীবনের পথ তৈরিতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল।একরত্তি ঋষিকে প্রথম দেখা যায় রাজ কাপুর-নার্গিসের কাল্ট ছবি শ্রী ৪২০-এর বিখ্যাত গান প্যায়ারা হুয়া ইকরার হুয়া হ্যায়-তে।এরপর কিশোর ঋষির উপস্থিতি ১৯৭০-এ রাজ কাপুরের আরেকটি বিশ্বখ্যাত ছবি মেরা নাম জোকার-এ।সেখানে তিনি রাজের ছোটবেলায় অভিনয় করেছিলেন।
রোম্যান্টিক নায়ক হিসেবে তাঁর প্রথম আত্মপ্রকাশ ১৯৭৩ -এ ,ববি দিয়ে।সেখানে তাঁর বিপরীতে নায়িকা হিসেবে বলিউডে পা রাখেন ডিম্পল কাপাডিয়া।ঝড় তুলে দিয়েছিলেন ঋষি।রোম্যান্টিক নায়ক হিসেবে যৌবন তাঁকে স্বীকৃতি দিয়েছে আজীবন।দেখতে দেখতে ছয়ের দশকের চকোলেট বয় হিসেবে ঋষি একের পর এক অভিনয় করেছেন সাগর,নাগিনা, চাঁদনি, প্রেম রোগ, হেনা, প্রেমগ্রন্থ সহ বহু ছবিতে।নতুন তারকা জেবা বখতিয়ারের পাশাপাশি তিনি নায়ক হয়েছেন মাধুরী দীক্ষিত, দিব্যা ভারতীর মতো নয়ের দশকের নায়িকারও।তাঁর এবং দিব্যার রসায়ন সুপারহিট করেছিল দিওয়ানা ছবিকে।ছবিতে ছিলেন শাহরুখ খানও।
সেসময়ে ঋষি কাপুর মানেই সুইৎজারল্যান্ড, বরফে ঢাকা পাহাড়, রকমারি সোয়েটার আর সুপারহিট গান।আলিয়া ভাট-বরুণ ধাওয়ানের প্রথম ছবি, স্টুডেন্ট অফ দ্য ইয়ার-এও জমিয়ে অভিনয় করেছিলেন প্রবীণ ঋষি।তাঁর শেষ ছবি হয়ে রইল,১০২ নটআউট।সেই ছবিতে সহ অভিনেতা ছিলেন অমিতাভ বচ্চন।যিনি এদিন প্রকাশ্যে বলেছেন,আই অ্যাম ডেসট্রয়েড।বিগ বি আর ঋষি জুটি বেঁছে একাধিক সুপারহিট ছবিতে কাজ করেছিলেন।তালিকায় রয়েছে কভি কভি, অমর আকবর অ্যান্টনি, নসিব, কুলি-র মতো ছবি। ২০১২-য় তাঁরা ফের একসঙ্গে ফেরেন ১০২ নট আউট দিয়ে।
সেখানে বিগ বি-র ছেলের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন ঋষি কাপুর। হয়ে পুনরায় একত্রিত হয়ে পিতা এবং পুত্রের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।ঋষি কপূরের চলে যাওয়া অমিতাভকে এতটাই বিষণ্ণ করে তুলেছে।ঋষি কপূরের আত্মজীবনী খুল্লাম খুল্লা: ঋষি কপূর আনসেন্সরড, বিশ্ব চলচ্চিত্রে এক ঐতিহাসিক দলিল হয়ে থেকে যাবে।অভিনেতা ঋষি কপূর সম্প্রতি জানিয়েছিলেন,তিনি হলিউড ছবি ইনটার্ন-এর রিমেকের কথা ভাবছেন।যেখানে তিনি দীপিকা পাড়ুকোনের সঙ্গে কাজ করতে চেয়েছিলেন।
প্রথমে ইরফান খান, পরের দিনই ঋষি কাপুর,ভারতীয় অভিনয় জগতের দুই নক্ষত্রের পর পর খসে যাওয়ার ধাক্কা সামলে উঠতে পারছে না গোটা ভারত ।শোকাচ্ছন্ন রাজনীতির অঙ্গনও,বৃহস্পতিবার ঋষি কাপুরের মৃত্যুতে ট্যুইট করে শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে রাহুল গান্ধী-সহ অনেকেই। ঋষিকে প্রতিভার পাওয়ারহাউস বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।ট্যুইট বার্তায় শোক প্রকাশ করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী।ভারতীয় সিনেমার পক্ষে এক দুঃসহ সপ্তাহ যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
অসাধারণ অভিনেতা ঋষির প্রয়াণে ভারতীয় বিনোদন জগতের বড় ক্ষতি বলে মন্তব্য করেছেন রাহুল।ঋষির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুরও।তাঁর স্কুলে উঁচু ক্লাসে পড়তেন ঋষি।ট্যুইটে সেই কথা উল্লেখ করেছেন শশী। ঋষি কাপুরের মৃত্যুতে ট্যুইট বার্তায় শোক প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর।অসাধারণ অভিনেতা হওয়ার পাশাপাশি ঋষি কাপুর একজন অসামান্য মনের মানুষ ছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।