ভারতে দ্বিতীয় দফার লক ডাউনের মেয়াদ শেষের আগে,সোমবার, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বৈঠক করবেন সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে।লকডাউন আরও বাড়ানো উচিত কিনা এই নিয়ে আলোচনা হবে বৈঠকে।তার আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী ও সাধারণ নাগরিক হিসেবে তিনি মনে করেন লকডাউন ধাপে ধাপে তুলে নেওয়া উচিত।৪ মে থেকে পরবর্তী দু'সপ্তাহের মধ্যে লকডাউন তুলে নেওয়া উচিত বলে জানিয়েছেন তিনি।সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকে তাঁর কাছ থেকে লকডাউন সম্পর্কে মতামত চাওয়া হলে তিনি তা জানিয়ে দেবেন বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার মতে তৃণমূল নেত্রী ও একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে তিনি মনে করেন,একবারে নয়, ধাপে ধাপে লকডাউন তোলা উচিত।
এর আগে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে চিঠি দিয়ে তোপ দেগেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।বৃহস্পতিবার দীর্ঘ পাঁচ পাতার চিঠি মুখ্যমন্ত্রী পাঠান রাজভবনে।সেখানে রীতিমতো চাঁচাছোলা ভাষায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন,আপনার বলার ভঙ্গি, শব্দচয়ন অসাংবিধানিক।আপনার নিজেকেই বিচার করা উচিত।আপনার মন্তব্য আমার অফিসকে অপমান করেছে,আমার মন্ত্রিসভাকে অপমান করেছে।এখানেই থেমে থাকেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।তিনি লিখেছেন,আমার ও মন্ত্রিসভার পরামর্শ অগ্রাহ্য করতে পারেন,কিন্তু আম্বেদকরের কথা অগ্রাহ্য করা আপনার উচিত নয়।আপনি বোধহয় ভুলে গিয়েছেন আমি নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী, আর আপনি মনোনীত রাজ্যপাল।শুধু তাই নয়, মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন,যে রাজ্যের রাজ্যপাল আপনি, সেই রাজ্যের সরকারের প্রতি আক্রমণ করাটাই আপনার কাজ হয়ে উঠেছে।উল্লেখ্য,করোনা আবহে রাজ্য সরকারের ধারাবাহিক সমালোচনা করে চলেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। রেশন থেকে ত্রাণ, করোনার গঠিত অডিট কমিটি নিয়ে বারবার রাজ্যের দিকে আক্রমণ শানাচ্ছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সহযোগিতা করার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশেও বার্তা দিয়েছেন তিনি। কেন্দ্রীয় দলকে অসহযোগিতা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ তাঁর।
এদিকে ভারত জুড়ে ক্রমশ দাপট বাড়াচ্ছে করোনা।আর তাকে প্রতিহত করতে ততই তৎপর হচ্ছে রাজ্য প্রশাসন।বৃহস্পতিবারও পথে নেমে রাজ্যবাসীকে লকডাউন মানতে আবেদন জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।একইসঙ্গে করোনা নিয়েও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। এ নিয়ে টানা তিনদিন রাস্তায় নামলেন তিনি।করোনা যুদ্ধে একবারে সামনের সারি থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।স্রেফ নিয়ম, নির্দেশ দিয়েই দায় সারেননি,বরং বারবার রাস্তায় নেমে অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।কখনও রাস্তায় নেমে বাজার, হাসপাতালে হালহকিকত খতিয়ে দেখেছেন।কখনও আবার চক দিয়ে গন্ডি কেটে সামাজিক দূরত্বের পাঠ পড়িয়েছেন তিনি।আবার কখনও মাস্ক বিলি করেছেন।
করোনার দাপটে গোটা রাজ্য যখন জড়োসড়ো, তখনও নিজের কর্তব্যে অবিচল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।বৃহস্পতিবার মধ্য কোলকাতার মৌলালি এলাকায় হাজির হন মুখ্যমন্ত্রী।তবে লকডাউন চলছে বলে গাড়ি থেকে রাস্তায় নামেননি তিনি।গাড়িতে বসেই মাইকের মাধ্যমে সচেতনতার প্রচার করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।প্রথমেই লকডাউনে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন।বলেছেন,আপনাদের অসুবিধার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।কিন্তু করোনাকে হারাতে ঘরেই থাকতে হবে।শান্ত থাকুন,ঘরে থাকুন,সামাজিক দূরত্ব মেনে চলুন।একইসঙ্গে, তিনি শহরবাসীর মনে সাহস জুগিয়ে বলেছেন,করোনা হলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। পুলিশকে জানান।ওঁদের সাহায্য নিয়ে হাসপাতালে যান। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেছেন,মানুষের পাশে থাকবই।করোনা ভাইরাসকে আমরা ভয় পাই না।মানুষকে সচেতন করতে রাস্তায় বের হচ্ছি। তাতে যদি আমার করোনা হয়, হোক।