মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন, পরিকল্পনামাফিক পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে বিপদে ফেলতে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। মূলত মতুয়া সম্প্রদায়ের আধার কার্ড বাতিল করা হচ্ছে বলে দাবিও করেছেন তিনি।
এর পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, সমস্যা সমাধানে রাজ্যের তরফে বিকল্প কার্ডের ব্যবস্থা করা হবে যেখানে নাগরিকত্ব বিষয়ে সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা মিলবে। এই গা-জোয়ারি রাজ্য মানবে না, প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, এটা অসম, উত্তরপ্রদেশ, বিহার নয়, এটা বাংলা। আধার কার্ড বাতিল হলে কেন বিজেপির পার্টি অফিসে জানাতে হবে? সরকারকে জানাবে না তো আর কাকে জানাবে? প্রশ্ন করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিকে, আধার কার্ড নিয়ে অসত্য তথ্য ছড়াচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতায় বিধানসভার বাইরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এমনই চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে কারও কোনও আধার নম্বর বাতিল করেনি ইউআইডিএআই অথবা কেন্দ্রীয় সরকার৷ আধার কার্ড বাতিল হওয়া নিয়ে যে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে তার নেপথ্যে আসলে বড় কোনও চক্রান্ত কাজ করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিরোধী দলনেতা৷ এর জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারের দিকেই আঙুল তুলেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী৷ তাঁর দাবি, এর পিছনে কোনওরকমের অনিয়ম ধরা পড়লে কেন্দ্রীয় এজেন্সি দিয়েও তদন্ত করানো হবে৷
অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গে পূর্ব বর্ধমান, নদিয়া-সহ বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে আধার বাতিলের চিঠি এসেছে বলে অভিযোগের দাবি করেছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস৷ শুভেন্দু অধিকারী অবশ্য দাবি করেছেন, রাঁচির কোনও একটি সংস্থাকে দিয়ে এই আধার বাতিলের চিঠি পাঠানো হচ্ছে৷
এরই মধ্যে আধার কার্ড সমস্যার জন্য সাধারণ মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী তথা মতুয়া সম্প্রদায়ের নেতা শান্তনু ঠাকুর। আধার কার্ড নিষ্ক্রিয় হওয়া রুখতে অবশেষে সক্রিয় হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর বলেছেন, সম্পূর্ণ প্রযুক্তিগত ত্রুটির জন্যই এই সমস্যা হয়েছে। এই নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রামন্ত্রী অমিত শাহ এবং তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়েছে। সেখানে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি এবং সাংসদ সুকান্ত মজুমদারও ছিলেন। বৈঠকে অমিত শাহ তাঁকে এই সমস্যা মেটানোর দায়িত্ব দিয়েছেন।
মতুয়া সম্প্রদায়ের নেতা শান্তনু ঠাকুর জানিয়েছেন, যাদের সমস্যা হয়েছে তাদের একটি ফর্ম পূরণ করে নতুন করে আধার কার্ড সক্রিয় করার আবেদন করতে হবে। তিনিও গোটা কাজটা করে দেবেন জানিয়ে বলেছেন, তাঁর ফোনে বা ইমেল করে ফর্ম পাঠাতে হবে। এরপরে তিনিই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে জমা দিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সব আধার কার্ড সক্রিয় করে দেবেন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যাবতীয় সঙ্কট কাটিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেবেন তিনি। সাংবাদিক বৈঠকে একটি ফোন নম্বর ৯৬৪৭৫৩৪৪৫৩ ও ইমেল আইডিও সাধারণের জন্য দিয়েছেন শান্তনু ঠাকুর। এই প্রসঙ্গে তৃণমূল এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও সমালোচনা করেছেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর।
এর আগে রাজ্যের অন্তত ৬০ জনের কার্ড বাতিল করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে নানা জনের সমস্যাও প্রকাশ্যে আসতে থাকে। ঘটনাচক্রে, ক’দিন আগে রাজ্য বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছিলেন, যাতে ভোট দিতে না পারে, সেই কারণে অনেকের আধার বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে। তার পরেই আধার বাতিলের খবর প্রকাশ্যে আসায় এ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ করতে শুরু করেছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। পাল্টা জবাব দিয়েছে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দল বিজেপিও। এর পরেই তৃণমূলের পক্ষে দলের রাজ্য সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ দাবি করেন, বিজেপি অবশেষে স্বীকার করে নিয়েছে আধার কার্ড নিষ্ক্রিয় হচ্ছে। বিজেপি শাসিত কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা মেনে নেওয়া হয়েছে।



