অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শহরে বসবাসরত বাংলাদেশী আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারীর দুঃসহ কাল কীভাবে পার করছেন, সেই সাথে বর্তমান বাস্তবতায় তারা কী ভাবছেন, কেমন আছেন?
এই প্রতিবেদনটি যখন আপনি পড়ছেন বা শুনছেন, তখন বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের আরেকটি ঢেউ ধেয়ে আসছে। রাজধানী-সহ সারাদেশে আশঙ্কাজনক হারে সংক্রমণ বাড়ছে। লকডাউনের সময় সীমা প্রতি সপ্তাহে বাড়ানো হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ ও পরামর্শকরা দেশব্যাপী সর্বাত্মক লকডাউন এবং "শাট ডাউন" ঘোষণার সুপারিশ করেছেন।
ঠিক তখন, পৃথিবীর অন্য প্রান্তে, দক্ষিণ গোলার্ধের দেশ অস্ট্রেলিয়ায় আবারও করোনা-পরিস্থিতি বিরূপ আকার ধারণ করছে। গ্রেটার সিডনিতে সম্প্রতি দু’সপ্তাহের জন্য লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে, এবং অন্যান্য স্টেট ও টেরিটোরিগুলোতেও লকডাউন ও নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে। তবে, এর আগে, এক দীর্ঘ সময় ধরে, কিছু ব্যতিক্রম বাদে, অস্ট্রেলিয়ার প্রধান শহরগুলো প্রাণচাঞ্চল্যে মুখর হয়ে উঠেছিল। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রাণ ফিরেছিল এবং আগের মতই আবারও ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু হয়েছিল।
অথচ তার মাত্র এক বছর আগে, করোনা-সঙ্কটে ভোগা অস্ট্রেলিয়ার দৃশ্যপট একদম বিপরীত ছিলো। মহাসড়ক, জনপরিবহন, বিদ্যাপীঠ, কর্মস্থল, সমস্ত চরাচর জুড়ে ছিল ভূতুড়ে শূন্যতা। বৈশ্বিক মহামারীতে রোগাক্রান্তের ভিড় বাড়ছিল প্রতিদিন। এদিকে চাকুরি-কাজ হারিয়ে অনেকের আর্থিক সংকট তীব্র হয়েছে। সরকার বিদেশী শিক্ষার্থীদের কোন ভাতা বা সুবিধা দিচ্ছিলো না।
একদিকে দেশের আপনজনদের জন্য উৎকণ্ঠা, অন্যদিকে ভিনদেশে নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জীবন সংগ্রাম। এই টানাপোড়েনে দীর্ঘদিন থাকতে হয়েছে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের। গত বছরের তুলনায়, আজকে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা বেশ স্বস্তিতে আছেন। কিন্তু আজকের এই অবস্থায় পৌঁছানোর আগে কেমন কেটেছে তাদের দিন?
এখনো আমরা কেউ অতিমারীর শঙ্কামুক্ত হতে পারি নি। দেশের মানুষের কথা, পরিবার-পরিজনের জন্য আমরা আজো উৎকণ্ঠিত। এই চ্যালেঞ্জিং সময় বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা কীভাবে পার করেছেন, সেই সাথে বর্তমান বাস্তবতায় তারা কী ভাবছেন, কেমন আছেন?
করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারী শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কী রকম প্রভাব ফেলেছে তা জানতে আমরা বেশ কয়েকজনকে প্রশ্ন করেছিলাম। মেলবোর্নের লা ট্রোব বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্র লাবিবুল হক নিজের মনের কথা ব্যক্ত করার পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের সবার সুস্থতা কামনা করেছেন।
করোনাকালীন সময়ে শারীরিকভাবে সুস্থতার পাশাপাশি মনের স্বাস্থ্য রক্ষা নিয়ে একটা সাধারণ সচেতনতা গড়ে উঠেছিলো। বিভিন্ন কর্মস্থল এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই সর্বাঙ্গীন সুস্থতা বা ওয়েলবিইং নিয়ে বিভিন্ন সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন হতে দেখা গেছে।
লাবিবুল হক বলেন, “করোনাকালীন সংকটের শুরুতে অনেক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী সমস্যায় পড়েছিলেন, তবে তারা ধৈর্য্য, সাহসিকতা ও সময়োপযোগী পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে এই সংকট কাটিয়েছেন।”
এই স্বাস্থ্য সচেতনতা বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা কীভাবে ব্যক্তিগত, সামাজিক ও পারিবারিক জীবনে প্রতিফলিত করেছেন বলেছেন সিডনির তাছনিমুল ইসলাম। তাছলিম ম্যাককোয়্যার বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর অফ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পড়ছেন।
তাছনিমুল বলেন, “বন্ধুবান্ধব ও নিকটজনদের সাহচর্য্য করোনার আপদকালীন সময়ে খুব জরুরী।”
সাউথ অস্ট্রেলিয়ার এডিলেইড শহরে বসবাসরত এমারসন চাকমার পরিবার কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন। কোভিডে আক্রান্ত পরিবার পরিজনদের হারিয়েছেন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা। এই দুঃসহ সময়ে প্রবাসে কীভাবে তার দিন কেটেছে- নিজের অভিজ্ঞতায় তা বয়ান করেছেন এসবিএস এর পাঠক-শ্রোতাদের কাছে। এমারসন চাকমা ফ্লিন্ডার্স বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স অফ এডুকেশনে পড়ছেন।
এমারস চাকমা বলেন, “এমন তীব্র উৎকণ্ঠার মধ্যে মানসিক শক্তি ধরে রাখা অনেক চ্যালেঞ্জিং।”
এমারসন একা নন, কোভিডের শিকার হয়ে আপনজন হারিয়েছেন তাছলিমও। তার কাছে আমরা অতিমারীর মানসিক ও আবেগিয় চাপ সামলে কীভাবে সব দিক দিয়ে সুস্থ থাকা যায় তা জানতে চেয়েছিলাম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েলবিইং সেশনে অংশ নিয়েছিলেন। নিজের সচেতনতা তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন তার আপনজনদের মাঝে।
দেশে থাকা স্বজনদের নিয়ে আমরা সবাই আজও খুব উদ্বিগ্ন। এর মধ্যেই আমরা রোজকার জীবন-যাপন করছি। অস্ট্রেলিয়ায় অধ্যয়নরত বাংলাদেশী ছাত্ররা দেশের সবাইকে স্বাস্থ্য সচেতন হবার আহবান জানিয়েছেন এবং যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ করেছেন।
প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।
Follow SBS Bangla on FACEBOOK.