দুরারোগ্য মোটর নিউরন রোগে (MND) আক্রান্ত হয়েছেন মেলবোর্নের বাসিন্দা খাইরুল ইসলাম। তিনি এবং তার স্ত্রী উম্মে সালমা এসবিএস বাংলার সাথে কথা বলেছেন তার চিকিৎসা এবং সাপোর্ট নেটওয়ার্ক নিয়ে।
গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো
- খাইরুল ইসলাম দুরারোগ্য মোটর নিউরন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন এক বছরেরও বেশি আগে
- মোটর নিউরন রোগে মস্তিস্ক ও স্পাইনাল কর্ডের স্নায়ু আক্রান্ত হয় এবং ধীরে ধীরে স্নায়ুতে তথ্য আদান-প্রদান হ্রাস পায়, ধীরে ধীরে আক্রান্ত ব্যক্তি কর্মক্ষমতা হারায়
- রোগটি এখন আর বিরল না হলেও এর কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা আজও আবিস্কৃত হয়নি
খাইরুল ইসলাম দুরারোগ্য মোটর নিউরন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন এক বছরেরও বেশি আগে। তিনি এখন কারো সাহায্য ছাড়া চলাফেরা করতে পারেন না। তাকে সার্বক্ষণিক সেবা দিচ্ছেন তার স্ত্রী উম্মে সালমা।
মোটর নিউরন রোগে মস্তিস্ক ও স্পাইনাল কর্ডের স্নায়ু আক্রান্ত হয় এবং ধীরে ধীরে স্নায়ুতে তথ্য আদান-প্রদান হ্রাস পায়। এর প্রভাবে সাধারণত ধীরে ধীরে রোগের তীব্রতা বেড়ে যায় এবং দেহ আক্রান্ত হয়।
যে কোনো বয়সে এ রোগ দেখা দিতে পারে। রোগের লক্ষণগুলোর মধ্যে আছে ব্যথা ও অস্বস্তি, পেশির অসাড়তা, অস্থিসন্ধি শক্ত হয়ে যাওয়া, পেশিগুলোর সংযোগহীনতার অভাব এবং অস্থিরতাবোধ, খাদ্য গ্রহণে সমস্যা, শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা ইত্যাদি।
মিঃ খাইরুল ইসলাম বলেন, রোগটি এখন আর বিরল না হলেও এর কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা আজও আবিস্কৃত হয়নি এবং এখনও গবেষণা চলছে।
শুরুর দিনগুলো
মিঃ ইসলাম ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়ায় আসেন পড়াশোনা করতে, এরপর ২০০৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি এবং ২০১০ সালে নাগরিকত্ব পান।
তিনি বলেন, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে প্রথম তিনি তার এই অসুখের বিষয়ে নিশ্চিত হন।
"যখন আমার পায়ের বৃদ্ধাঙুলটি ব্যাথা এবং কাজ করছিলো না, ....হাঁটতেও সমস্যা হতো, তখন আমি ডাক্তারের কাছে যাই এবং অনেকগুলো টেস্টের পর তারা আমাকে জানায় যে তারা মনে করছে যে আমি এই রোগে আক্রান্ত; অবশেষে ২০২০ সালের ২৭ জানুয়ারিতে তারা আমার আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে। তবে তখনও আমি সব কাজ করতে পারতাম।"
খাইরুল ইসলামের স্ত্রী উম্মে সালমার সার্বক্ষণিক সেবা
খাইরুল ইসলাম তার স্ত্রী উম্মে সালমা সম্পর্কে বলেন, "সেই আমাকে সবসময় সাহস দিয়ে রাখে। যেহেতু আমি কোন কাজ করতে পারি না তাই পুরোটাই আমাকে করতে হয়। ...সকাল বেলা ওঠা থেকে শুরু করে রাতে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত সব কাজই তাকে করতে হয়।"
খাইরুল ইসলামের এমএনডি নিশ্চিত হলে এমএনডি ভিক্টোরিয়ার ম্যানেজার তাদের সাথে যোগাযোগ করে।
মিজ উম্মে সালমা চিকিৎসা সহায়তা এবং এমএনডি সাপোর্ট নেটওয়ার্ক সম্পর্কে বলেন, "তারা আমাদের জানায়, আমরা সরকারি সহায়তা পাবো বিনামূল্যে।"
তিনি বলেন, সেসময় তারা রোগটি বিস্তারের প্রতি ধাপে বিভিন্ন ধরণের ইকুইপমেন্ট সরবরাহ থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সবকিছুই তারা দিচ্ছে।
এছাড়া সাপোর্ট নেটওয়ার্কটির অন্যতম প্রতিষ্ঠান এনডিআইএসের মাধ্যমেও তারা প্রয়োজনীয় সহায়তা পাচ্ছেন, যেমন পার্সোনাল কেয়ারার, ফিজিও বা ডায়েটিশিয়ান তাদের সহায়তায় পাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
যেভাবে দিন কাটে খাইরুলের
খাইরুল ইসলাম বলেন, শরীর খারাপ লাগার কারণে তিনি সব জায়গায় যেতে পারেন না। তবে হুইল চেয়ার এক্সেসিবল ট্যাক্সির সুবিধা থাকায় তিনি প্রায়ই বাইরে যান।
বন্ধুবান্ধব বা আত্মীয় স্বজনদের বাসা ছাড়াও মেলবোর্নের বাইরেও যাওয়া হয় বলে জানান তিনি।
সার্বক্ষণিক সেবা দিতে কেমন চ্যালেঞ্জ অনুভব করেন, প্রশ্ন করেছিলাম মিজ সালমাকে।
তিনি বলেন, "আমি কখনোই ভাবতেও পারিনি এমন একটি চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে আমাকে যেতে হবে, যেদিন আমি অস্ট্রেলিয়ায় পা রাখলাম সেদিনই ওকে ডাক্তারের কাছে যেতে হয়, আর আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে। ...প্রথমে বিশ্বাস হচ্ছিলো না যে এমন কিছু হতে যাচ্ছে, কিন্তু পরবর্তীকালে মেন্টালি একসেপ্ট করে নিতে নিতে অনেক সময় লেগেছে আমাদের।"
তিনি বলেন, শুরুতে চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে ছিল এখানে আমাদের স্থায়ীভাবে থাকার ব্যবস্থা না থাকা। এছাড়া ডাক্তারের এপয়েন্টমেন্ট, বাজার করা ইত্যাদি বিষয়গুলো কোভিড পরিস্থিতিতে অনলাইনে সম্পন্ন করেন, তবে বাইরে যেতে হলে হুইল চেয়ার এক্সেসিবল ট্যাক্সির সহায়তা নেন বলে জানান তিনি।
আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে মানসিক সহায়তা
মেলবোর্নে বেশ কয়েকজন নিকট আত্মীয়-স্বজনও রয়েছে খাইরুল ইসলামের যাদের সহায়তা তারা পান।
মিজ সালমা বলেন যে তিনি এদিক থেকে ভাগ্যবান এখানে তাদের বোন-ভগ্নিপতি, নিকট আত্মীয়-স্বজন ছাড়াও অনেক বন্ধুবান্ধব আছেন যাদের কাছ থেকে মানসিক সহায়তা ছাড়াও অন্যান্য সহায়তা পাওয়া যায়। আর তাই কখনো তারা একা হয়ে যান না।
খাইরুল ইসলাম বলেন, "এমএনডি এখন আর এতটা বিরল নয়, এটি প্রতি তিনশ মানুষের মধ্যে একজনের হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এর জন্য অনেক এওয়ারনেস দরকার, অনেক রিসার্চেরও প্রয়োজন আছে।"
এমএনডি নিরাময়ের জন্য প্রয়োজন আরও গবেষণা সহায়তা
রোগটির ওপরে এখনো কোন গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা হয়নি উল্লেখ করে মিঃ ইসলাম বলেন, এটা নিরাময়ের জন্য এখনো পর্যন্ত কোন প্রতিষেধক বের হয়নি।
"যেসব সংগঠনই এ নিয়ে রিসার্চ করছে, আমি অনুরোধ করবো সবাই যেন তাদেরকে সাহায্য করে যাতে ভবিষ্যতে কাউকে এই কষ্টের মধ্যে দিয়ে যেতে না হয়।"
এমএনডি আক্রান্তদের মানসম্পন্ন ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন যাপনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে উম্মে সালমা বলেন, "আমরা কেউই জানিনা এই রোগটা কেন হয়, এটা যে কারো যেকোন সময় হতে পারে, এজন্য বলবো সবসময় স্বাস্থ্যকর খাবার বা জীবন যাপনের মাধ্যমে কিছুটা হয়তো এটা প্রতিরোধ করা যায়।"
খাইরুল ইসলাম এবং উম্মে সালমার পুরো সাক্ষাৎকারটি বাংলায় শুনতে উপরের অডিও প্লেয়ারে ক্লিক করুন।
এসবিএস বাংলার রেডিও অনুষ্ঠান শুনুন প্রতি সোমবার এবং শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় এবং আরও খবরের জন্য আমাদের ফেইসবুক পেইজটি ভিজিট করুন।
Follow SBS Bangla on FACEBOOK.
আরো দেখুন: