কোনো একটি দেশে অভিবাসনের পর সন্তান মানুষ করা বড় একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেয়। কেন? নতুন সমাজ, নতুন মূল্যবোধ ও আইন-কানুনের সঙ্গে কীভাবে মানিয়ে দেওয়া যাবে? এসবিএস বাংলার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ম্যাকোয়েরি ইউনিভার্সিটির এমেরিটাস অধ্যাপক এম রফিকুল ইসলাম।
ম্যাকোয়েরি ইউনিভার্সিটির এমেরিটাস অধ্যাপক এম রফিকুল ইসলাম অস্ট্রেলিয়ায় আসার আগে বাংলাদেশের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারম্যান ছিলেন।
সন্তান কার সঙ্গে মেলামেশা করবে সেটা কি বাবা-মা নির্ধারণ করতে পারেন? এ প্রশ্নের জবাবে ড. রফিক বলেন,
“অবশ্যই পারেন। সম্ভবত আপটু ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত উনারা করতে পারেন। তবে, বাবা-মায়েদের একটা জিনিস খেয়াল রাখতে হবে, এখানকার যে-সব আইন আছে, সেগুলো আপনাকে সমর্থন দিবে, যদি আপনি দেখেন, আপনার ছেলে বা মেয়ে কোনো ভায়োলেন্স বা এক্সপ্লয়টেশন বা এ রকম কোনো একটা এনভায়রনমেন্টে মিশছে, সেগুলো আপনি তাকে ব্যাখ্যা করতে পারেন। তবে, ল আবার এটাও বলছে যে, যত কম সম্ভব তাদের সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করা।”
তিনি আরও বলেন,
“তবে, সিদ্ধান্তে যে হস্তক্ষেপ করা যে যাবে না, এমন কিছু বলা নেই। অন্তত আপটু ১৮ বছর পর্যন্ত।”
হোম কান্ট্রি বা ছেড়ে আসা দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার সংস্কৃতির মিল-অমিল ও মানিয়ে নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন,
“এখানের আইন কিন্তু আপনাকে কালচার বিসর্জন দিয়ে এদের সঙ্গে মিশতে বলে নি। কিংবা রিলিজয়নকে বিসর্জন দিয়ে আপনাকে ওদের সঙ্গে মিশতে বলে নি।”
তার মতে,
“নিজেদের কালচার এবং রিলিজিয়ন মেনটেইন করেও এই সমাজে মেলামেশা করা যায়, চলাফেরা করা যায়। শুধু যদি এদের আইনকে আপনি ঠিকভাবে মেনে চলেন।”
ছোটবেলা থেকে সন্তানদের মাঝে বিভিন্ন মূল্যবোধ জাগ্রত করার প্রতি জোর দেন তিনি। সন্তানদের বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন,
“বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার এখানে কোনো এজ নাই। একটা ছেলে বা মেয়ে যে কোনো সময়ে আপনার বাড়ি থেকে চলে যেতে পারে।”
তারা চাইলে তাদের পড়াশোনাও ছেড়ে দিতে পারে, বলেন তিনি।
“একটা বাচ্চা ইচ্ছা করলে ইয়ার-টেন-এর পর সে স্কুলে ছেড়ে দিতে পারে।”
“কনসেন্ট টু হ্যাভ সেক্স” বা যৌন সম্পর্ক স্থাপনে সম্মতি প্রদানের বিষয়ে ড. রফিক বলেন,
“এখানকার আইন বলে, ১৬ বছর বয়সী একটা ছেলে বা মেয়ে এ ব্যাপারে পূর্ণ সম্মতি দিতে পারে, যেটা বাংলাদেশে নেই।”
এদেশে সন্তানকে কতোটুকু শাসন করা যাবে? এর সীমারেখাটা কী? তাদেরকে কি মারপিট করা যাবে?
সন্তানের গায়ে হাত তোলার বিষয়ে ড. রফিক বলেন,
“এটাকে এখানকার আইনে অ্যাসাল্ট হিসেবে দেখে।”
“শাসন করা মানে এই না যে, মারধোর করা বা ফিজিকাল টর্চার করা। আপনি বিভিন্নভাবে শাসন করতে পারেন। এখানকার আইন সবচেয়ে বেশি যেটার প্রতি গুরুত্ব দেয় সেটা হচ্ছে, পারসুয়েশন। ছেলে বা মেয়েকে বোঝানো।”
এ সম্পর্কে তিনি আরও বলেন,
“আমাদের দেশের সিস্টেমে মারপিট বা চড়-থাপ্পড়ও কিন্তু সবসময় কাজ করে না। অনেকসময় হিতে বিপরীত হয়ে যায়।”
“এখানকার আইন মারপিট কখনই প্রমোট করে না।”
ড. রফিকের মতে, সন্তানের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত তাদের গড়ে তোলার পেছনে অভিভাবকদের বড় ভূমিকা রয়েছে। তবে, শাসন করতে গিয়ে সহিংস হওয়া যাবে না, বলেন তিনি।
“গাইড করতে গিয়ে আপনি যদি সহিংস হন, তাহলে সেটা আবার আইন সমর্থন করে না।”
প্রফেসর এম রফিকুল ইসলামের সাক্ষাৎকারটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।
অস্ট্রেলিয়ায় সন্তান প্রতিপালন নিয়ে আমরা আপনার আশা-আকাঙ্ক্ষা, উদ্বেগ এবং অভিজ্ঞতার কথা শুনতে চাই। আমাদেরকে ইমেইল করুন bangla.program@sbs.com.au ঠিকানায় কিংবা যোগাযোগ করুন এসবিএস বাংলার ফেসবুক পেজে।
Follow SBS Bangla on FACEBOOK.
এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত। রেডিও অনুষ্ঠান পরেও শুনতে পারবেন, ভিজিট করুন: এসবিএস বাংলা
আমাদেরকে অনুসরণ করুন ফেসবুকে।