রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে ব্রাজিলে গ্রেফতার করা হবে না, এমনই মন্তব্য করেছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। একইসঙ্গে, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা ডা সিলভা বলেছেন, একশ্রেণির মানুষের হাতেই সব সম্পদ রয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ ক্ষুধার জ্বালা নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। সমাজ থেকে অসাম্য দূর করতে হবে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, খাদ্য, লিঙ্গ এবং জাতি বৈষম্য দূর করতে হবে।
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত মার্চ মাসে পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল। রাশিয়া যদিও সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
এদিকে, তিন বছর পরে, ২০২৬ সালে জি-২০ গোষ্ঠীর সভাপতিত্ব ফের আমেরিকা নেবে বলার পরে বিষয়টি নিয়ে সরাসরি আপত্তি তোলে চীন। আর তাদের এই আপত্তির সমর্থন করে রাশিয়া। সূত্রের খবর, চীন জানিয়েছে, এ নিয়ে তাদের আপত্তি নথিভুক্ত করা হোক। কিন্তু, কেন তাদের আপত্তি, তা নিয়ে কোনও বক্তব্য প্রকাশ্যে আসে নি।
জি-২০-ভুক্ত দেশগুলির সভাপতিত্ব প্রতিবছর বদল হয়। গত বছর ভারত এই পদটি পায়। চলতি বছরে, সভাপতি পদটি যাচ্ছে ব্রাজিলের কাছে। তার পরের বছর পদটি যাবে দক্ষিণ আফ্রিকার দখলে। ২০২৬ সালে জি-২০ এর সভাপতি হিসেবে আমেরিকা পরবর্তী সম্মেলন করবে।
এর আগে, আমেরিকার সহকারী জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন ফিনার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বলেছিলেন, ব্রিকসের তিন গণতান্ত্রিক সদস্য দেশ ভারত-ব্রাজিল-দক্ষিণ আফ্রিকা চলতি এবং পরবর্তী দু’টি জি-২০ এর সভাপতিত্ব পাচ্ছে। এই তিনটি দেশের পালা শেষ হলে ২০২৬ সালে আমেরিকা ফের জি-২০ সম্মেলনের আয়োজন করবে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রস্তাব দিয়েছেন আগামী নভেম্বরে যেন আরও একটি ভার্চুয়াল বৈঠক হয় জি-২০ এর নেতাদের। দিল্লির সম্মেলনে যে সকল প্রস্তাব জমা পড়েছে, তা নিয়ে আলোচনা কতদূর অগ্রসর হলো, তা খতিয়ে দেখতেই সেই বৈঠকে বসার প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই বৈঠকে সব দেশকে উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই সময় জি-২০ আলোচ্য বিষয় ও কাজের সমীক্ষা চালানো হবে। এই সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য ব্রাজিলের হাতে তুলে দেওয়া হবে ভারতের প্রতিনিধি দলের মাধ্যমে।
এর মধ্যে, জি-২০ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে দিল্লির রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিস্থলে গিয়ে তাঁকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপণ করেছেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতারা ও প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজঘাটে গান্ধীজিকে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলেন নাইজেরিয়া ও আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্টও। রাজঘাটে গান্ধীজিকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন নেদারল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট। গিয়েছিলেন ওমানের উপ-প্রধানমন্ত্রী আসাদ বিন তারিক বিন তৈমুর আল। রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন জাতিসঙ্ঘের সেক্রেটারি জেনারেল আন্তেনিও গুতেরাস, বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানম গ্রেবেয়াসিস, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের প্রেসিডেন্ট মাসাতিসুগু আসাকাওয়া, আইএমএফ-র ম্যানেজিং ডিরেক্টর ক্রিস্টালিনা জিওরগিভা-সহ জি-২০ সম্মেলনে আগত অন্যান্য অতিথিরা।
এদিকে, জি-২০ এর মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীর নেমপ্লেটের পর রাজঘাটে মোদির পুষ্পার্ঘ্যতেও ‘ইন্ডিয়া’র বদলে ‘ভারত’ লেখা দেখা গিয়েছে, যা চলতি বিতর্ক নতুন করে উস্কে দিয়েছে। লেখা হয়েছে, প্রাইম মিনিস্টার অফ দ্য রিপাবলিক অফ ভারত।
অন্যদিকে, এবারের জি-২০ সামিটে নজর কেড়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে দিল্লিতে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির প্রেসিডেন্ট মুহম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে ইতিমধ্যে ঢাকাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি। তারই পাশাপাশি জ্বালানি তথা শক্তিক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বিষয়টি উঠে এসেছে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের আলোচনায়।
বাংলাদেশে একটি খনিজ তেল পরিশোধনাগার গড়ে তোলার ব্যাপারে আরব আমিরশাহির প্রেসিডেন্টকে প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরশাহি থেকে আরও বিনিয়োগ টানতে আগ্রহী বাংলাদেশ। দেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তথা স্পেশাল ইকোনমিক জোনে এজন্য জমি দিতেও প্রস্তুত ঢাকা।
এর আগে, গত বছর দুবাই এক্সপোতে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। সে ব্যাপারে তাঁর সুখানুভূতির কথা সংযুক্ত আরব আমিরশাহি প্রেসিডেন্টকে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে প্রেসিডেন্ট মুহম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানকে তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশে একটি আরবি ভাষা কেন্দ্র গড়ে তুলতে তিনি আগ্রহী। কারণ, কাজের সূত্রে প্রচুর বাংলাদেশি নাগরিক সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে যান। এ ধরনের একটি ভাষা কেন্দ্র তৈরি হলে তাঁরা সহজে আরবি ভাষা শিখতে পারবেন।
READ MORE

সৌদি আরবে এখন বলিউডের সিনেমা
কূটনৈতিক সূত্রে বলা হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন, সে ব্যাপারে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন প্রেসিডেন্ট মুহম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান। তাঁর কথায়, লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তু রোহিঙ্গাকে মায়ের মতই আশ্রয় দিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর আগে, জি-২০ এর রাষ্ট্রনায়কদের নৈশভোজে সবুজ সিল্ক শাড়িতে ভারতীয় ঐতিহ্যকে শ্রদ্ধা জাপানের ফার্স্ট লেডি ইয়ুকো কিশিদা। শাড়ির মধ্যে ছিল সোনালি কারুকাজ। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর পাশে অনন্য সুন্দর লাগছিল জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার স্ত্রীকে। রাষ্ট্রপতির তরফে আয়োজিত নৈশভোজে ভারতীয় সঙ্গীতের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। খাবারের মধ্যে ছিল ফোর-কোর্স মিল। একাধিক বাজরার পদ ছিল তালিকায়, খবর সূত্রে।
ভারতীয় মণ্ডপম-এ রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বামী ফুমিও কিশিদাকে নিয়ে ছবিও তোলেন তিনি। তবে শুধু জাপানের ফার্স্ট লেডি নন। নৈশভোজের জন্য বিদেশিনী অভ্যাগতদের অনেককেই ভারতীয় পোশাক বেছে নিয়েছিলেন। ইন্টারন্যাশনাল মনিটরি ফান্ডের এমডি, ক্রিস্তালিনা জর্জিভা যেমন এসেছিলেন সালোয়ার কামিজে। পার্পল রংয়ের সালোয়ার কামিজের সঙ্গে বেজ রংয়ের ওড়নায় একেবারে অন্য রকম লাগছিল তাঁকে। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাপোসার স্ত্রী, সেপো মোস্তেফ আবার সেজেছিলেন ইন্দো-ওয়েস্টার্ন পোশাকে। মরিশাসের প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী কবিতা জুগনউথকে জমকালো শাড়িতে দুর্দান্ত দেখাচ্ছিল। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেছে নিয়েছিলেন বাংলা তথা ভারতের ঐতিহ্যশালী শাড়ি। সঙ্গে মানানসই মুক্তোর হার। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনকের স্ত্রী অক্ষতা মূর্তি অবশ্য শাড়ি বা সালোয়ার কামিজ পরেন নি। কিন্তু, তাঁর পোশাকে ঐতিহ্যের ছোঁয়া স্পষ্ট ছিল।
এর মধ্যে, বিশ্বের উন্নয়নে ভারত এবং ভারতের উন্নয়নে বিশ্ব পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করতে প্রস্তুত রয়েছে। জি-২০ এর সম্মেলনে এমনই বার্তা দিয়েছেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
একইসঙ্গে, জি-২০ সভাপত্বিতের মধ্যে দিয়ে ভারত বিশ্বের পিছিয়ে পড়া দেশগুলিকে সামনে তুলে ধরতে সাহায্য করবে। জয়শঙ্কর বলেছেন জি-২০ ভূ-রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তা সমস্যা সমাধানের প্ল্যাটফর্ম নয়, নেতারা স্বীকার করেছেন যে, তারা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য উল্লেখযোগ্যভাবে কাজ করবেন।
পাশাপাশি, জি-২০ দেশগুলি বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করার জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, এমনটাই বলেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্ণলা সীতারমন। তিনি বলেন, আরও ভালো, বৃহত্তর এবং আরও কার্যকর বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংকের চুক্তি হয়েছে। এটি উন্নততর প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে এমবিডি-তে উন্নয়নশীল দেশগুলির কণ্ঠস্বর বৃদ্ধিতে অবদান রাখবে।
এখন, বৈশ্বিক আর্থিক নেতা এবং ব্যাংকাররা অক্টোবরে ক্রিপ্টোকারেন্সির রোডম্যাপ নিয়ে আলোচনা করতে মিলিত হবেন। জি-২০ নেতারাও ক্রিপ্টো-সম্পদ, কার্যকলাপের নিয়ন্ত্রণ, তত্ত্বাবধান এবং তদারকির জন্য আর্থিক স্থিতিশীলতা বোর্ডের সুপারিশগুলিতে সম্মত হয়েছেন। তিনি আরও যোগ করেছেন যে, ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচারকেও জি-২০ ফিনান্সিয়াল ইনক্লুশন অ্যাকশন প্ল্যানে একীভূত করা হয়েছে। জাম্বিয়া, ঘানা এবং ইথিওপিয়ার মতো দেশগুলির জন্য ঋণ পুনর্গঠনের বিষয়ে, তিনি বলেছিলেন যে, একটি ভাল অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে এবং ফলাফলগুলি বহুপাক্ষিকতার প্রমাণ।










