ভারতে প্রথম দফায় ভোটগ্রহণ পর্ব শুরু হবে ১৯ এপ্রিল থেকে। এরপর দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ ২৬ এপ্রিল। তৃতীয় দফায় ভোটগ্রহণ হবে ৭ মে। চতুর্থ দফার ভোটগ্রহণ হবে ১৩ মে। ২০ মে হবে পঞ্চম দফায় ভোটগ্রহণ। ২৫ মে হবে ষষ্ঠ দফার ভোটগ্রহণ পর্ব এবং ১ জুন হবে সপ্তম দফার ভোটগ্রহণ। ভোটগণনা হবে ৪ জুন।
রাজীব কুমার জানিয়েছেন এ বার ভারতে ৯৭ কোটি ভোটার রয়েছে; যার মধ্যে ৪৯ কোটি ৭ লক্ষ পুরুষ এবং ৪৭ কোটি ১০ লক্ষ মহিলা। ১ কোটি ৮২ লক্ষ নতুন ভোটার রয়েছে। রাজীব কুমার জানিয়েছেন, নতুন ভোটারদের মধ্যে ৮৫ লক্ষের বেশি মহিলা। ৮২ লক্ষ এমন ভোটার রয়েছেন, যাঁদের বয়স ৮৫ বছরের বেশি। প্রবীণ এবং বিশেষ শারীরিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে যাঁদের, ফলে যাঁরা ভোট দিতে আসতে পারবেন না, তাঁদের ভোট বাড়ি গিয়ে নিয়ে আসা হবে।
এখন ঘটনা হল, এবার মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকেই চোখ রাঙাচ্ছে গরম। আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস এপ্রিল, মে এবং জুন মাসে প্রবল গরম পড়বে। স্বভাবতই, ভোটের প্রচার থেকে ভোটদান, রাজনৈতিক দলগুলোর চোখ থাকবে আকাশের দিকে। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, সূর্যের দিকে!
এদিকে, পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গেই বিহার এবং উত্তরপ্রদেশে সাত দফায় ভোট হবে। অন্যদিকে, মহারাষ্ট্রে এবং জম্মু-কাশ্মীরে ভোট হবে পাঁচ দফায়। চার দফায় ভোট হচ্ছে ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ এবং ঝাড়খণ্ডে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অসম এবং মাওবাদী অধ্যুষিত ছত্তীসগঢ়ে তিন দফায় ভোট হবে। দু’দফায় ভোট হবে কর্নাটক, রাজস্থান, ত্রিপুরা এবং গোষ্ঠী হিংসাদীর্ণ মণিপুরে। বাকি ২২টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে এক দফায় ভোট হবে। তার মধ্যে গুজরাতের পাশাপাশি রয়েছে, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলঙ্গানা, কেরল এবং তামিলনাড়ুর মতো বড় রাজ্যও।
স্বভাবত, কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছে, দফা বাড়িয়ে ভোট করানো নিয়ে। তাঁদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক সুবিধা নিতেই ষড়যন্ত্র করে পাঁচ বা সাত দফায় ভোট করানো হয়। অপরপক্ষে বিজেপির দাবি, নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ করতেই দফা বাড়ানো। পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক হিংসার কথা মাথায় রেখেই এরাজ্যে আসন্ন লোকসভা ভোট হবে সাত দফায়।
পাশাপাশি, এবার লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গে দেশের চার রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করা হলেও ব্রাত্য জম্মু কাশ্মীর। প্রায় এক দশক পরও দেশের বৃহত্তম কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিধানসভা নির্বাচন এখনই হচ্ছে না। তবে বিধানসভা নির্বাচন না হলেও জম্মু কাশ্মীরের পাঁচ লোকসভা আসন ও লাদাখের একটি লোকসভা আসনে নির্বাচন হচ্ছে। লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন হবে অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, অরুণাচল প্রদেশ এবং সিকিমে। আগামী ৪ জুন লোকসভা ভোটের সঙ্গেই হবে চার রাজ্যের বিধানসভা ভোটের গণনা।
ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশের পর সাত দফায় লোকসভা নির্বাচনকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ভোটঘোষণার পরেই এক্স হ্যান্ডলে প্রধানমন্ত্রী মোদী লিখেছেন, গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় উৎসব এসে গিয়েছে। নির্বাচন কমিশন ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের দিন ঘোষণা করে দিয়েছে। তারপরেই নির্বাচন নিয়ে পোস্ট করেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডাও। তিনি এক্সে লিখেছেন, আমি নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি। এই নির্বাচন গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় উৎসব। এই নির্বাচনই সুশাসন এবং উন্নয়নের পথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যম। আমি সারা দেশের মানুষের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, আপনারা প্রচুর সংখ্যায় ভোট দিতে আসুন এবং বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রের ভিত আরও সুদৃঢ় করুন।
সোশ্যাল মিডিয়া এক্সে পোস্ট করেছেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও। লিখেছেন, এই দেশ সুশাসন, নিরাপত্তা এবং সর্ব ক্ষেত্রে সংস্কৃতির পুনর্গঠনের ইতিহাস তৈরি হতে দেখেছে। উন্নয়নের পথে ভারতের এই যাত্রায় শান্তি বজায় রাখতে এমন ব্যক্তিকে ভোট দিন, যিনি দেশের উন্নতির জন্য কাজ করেন।
এদিকে, এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে জুনের শুরু, প্রায় দেড় মাস ধরে, ৪৭ দিন ধরে সাত দফায় ভোট হবে পশ্চিমবঙ্গে। নির্বাচন কমিশন ভোটের এই নির্ঘণ্ট ঘোষণা করার পরেই ক্ষুব্ধ পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। পশ্চিমবঙ্গের শাসক দলের অভিযোগ, প্রতিবারের মতো এবারও বাংলায় সাত দফায় ভোট ঘোষণা করা হয়েছে; যেখানে দেশের অনেক বড় বড় রাজ্যে ভোট হবে এক কিংবা দু’দফায়। রাজ্যের মন্ত্রী এবং তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেছেন, তাঁরা বার বার বলেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এই নির্বাচন একটি বা দু’টি দফায় হোক। কিন্তু দেখলেন আগের মতোই ৭ দফায় নির্বাচন ঘোষণা করা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে।
চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেছেন, ২০১৯ সালেও সাত দফায় ভোট হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গে। ২০২১ সালের বিধানসভায় ভোট হয়েছিল আট দফায়। কিন্তু সে বার বলা হয়েছিল, কোভিডের জন্য দফা বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এবার তো কোভিড নেই। এবার তা হলে কী হয়েছে? এবার কেন সাত দফায় ভোট করানো হল? এই ভোট নির্ঘণ্ট অর্থবান দলগুলিকে সুবিধা করে দেবে বলেও মন্তব্য করেছেন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, অর্থবান দলগুলি তাদের টাকা কাজে লাগিয়ে ভোটের ফল নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তাদের পূর্ণ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে। অন্য দিকে, অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল রাজনৈতিক দলগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পিছিয়ে পড়ে।
অন্যদিকে, হিংসামুক্ত ভোট করানোর ব্যাপারে বদ্ধপরিকর থাকার কথা জানিয়েও জাতীয় নির্বাচন কমিশন মেনে নিয়েছে যে, তাদের সামনে চ্যালেঞ্জ ফোর এম, অর্থাৎ, চারটি ‘ম’। তবে সেগুলির মোকাবিলা করার বিষয়েও গুচ্ছ পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার। ফোর এম-এর কথা বলতে গিয়ে রাজীব কুমার জানিয়েছেন, মাসল মানে পেশিশক্তি, মানি মানে অর্থশক্তি, মিস ইনফরমেশন মানে ভুয়ো তথ্য এবং মডেল কোড অফ কনডাক্ট মানে আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধি। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, তাঁরা ভোটের আগে, ভোটের সময়ে এবং ভোটের পরে রক্তস্নান চান না। হিংসামুক্ত ভোট করানোর বিষয়ে তাঁরা বদ্ধপরিকর। কিন্তু তাঁদের সামনে ফোর এম-এর চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
আর, ভোটের মুখে আচমকাই ইস্তফা দিয়েছিলেন নির্বাচন কমিশনার অরুণ গোয়েল। লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার মধ্যেই তা নিয়ে প্রথম বার মুখ খুলেছেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার, সিইসি, রাজীব কুমার। সাংবাদিক বৈঠকে সিইসির দাবি, তাঁর পদত্যাগের নেপথ্যে ব্যক্তিগত কোনও কারণ থাকলে তাকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে। অরুণ গোয়েলকে সম্মানীয় সদস্য হিসেবে উল্লেখ করে রাজীব কুমার আরও বলেছেন, ভারতের নির্বাচন কমিশনে সর্বদাই ভিন্নমতের পরিসর থাকবে। উল্লেখ্য, ৯ মার্চ নির্বাচন কমিশনারের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন অরুণ গোয়েল। অথচ, পঞ্জাব ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত আইএএসের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৭ সালে। কমিশনের ফুল বেঞ্চের পশ্চিমবঙ্গ সফর শেষ হতে না হতেই ইস্তফা দেন অরুণ গোয়েল। তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা ছড়িয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের বৈমাতৃসুলভ মনোভাবের আতিশয্যে বিরক্ত হয়েই অরুণ গোয়েল পদত্যাগ করেছেন বলে সরাসরি দাবি তুলেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। বিরোধীদের দাবি ছিল, সিইসির সঙ্গে মতপার্থক্যের কারণেই পদ ছাড়তে হয়েছে অরুণ গোয়েলকে। কিন্তু কেন অরুণ গোয়েল পদ ছাড়লেন, তা নিয়ে এতদিন কমিশনের তরফে স্পষ্ট কোনও জবাব পাওয়া যায় নি। সেই জবাব মিলেছে ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার দিন।
এসবিএস রেডিও সম্প্রচার-সূচী হালনাগাদ করেছে, এখন থেকে প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার, বিকাল ৩টায়, এসবিএস পপদেশীতে আমাদের অনুষ্ঠান শুনুন, লাইভ।
কিংবা, পুরনো সময়সূচীতেও আপনি আমাদের অনুষ্ঠান শোনা চালিয়ে যেতে পারেন। প্রতি সোম ও শনিবার, সন্ধ্যা ৬টায়, এসবিএস-২ এ।
৫ অক্টোবর থেকে নতুন চ্যানেলে ও নতুন সময়ে যাচ্ছে SBS Bangla Credit: SBS
রেডিও অনুষ্ঠান পরেও শুনতে পারবেন, ভিজিট করুন: এসবিএস বাংলা।