Latest

ভারতে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পদদলিত হয়ে ১১৬ জনের মৃত্যু

ভারতের উত্তরপ্রদেশের হাথরসে এক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পদপিষ্টর ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার রতিভানপুরে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলছিল। অনুষ্ঠান শেষ হতেই একটা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। ঐ অনুষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক পুণ্যার্থী জমায়েত হওয়ায় পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে ওঠে এবং পদপিষ্টের পরিস্থিতি তৈরি হয়। আর তাতে‌ই বহু জনের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে।

More than 100 people dead in stampede at religious gathering in northern India	

epa11454071 Belongs left behind by stampede victims lay at the scene, in Hathras, Uttar Pradesh, India, 03 July 2024. According to state officials, more than 100 people were killed in a stampede at a satsang Hindu religious gathering in Hathras district in Uttar Pradesh state, northern India. EPA/HARISH TYAGI Source: AAP / HARISH TYAGI/EPA

উত্তরপ্রদেশের পুলিশ সুপার রাজেশ কুমার সিং জানিয়েছেন, হাথরসের মুঘলাগড়ি গ্রামে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলছিল। সেই সময় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

এখনও পর্যন্ত ১১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যে বেশি মহিলা এবং শিশু এবং একজন পুরুষও রয়েছে। কেন এবং কী ভাবে এই ঘটনা ঘটল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সূত্রের খবর, শিশু এবং মহিলা-সহ ১৫ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে এটা মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
More than 100 people dead in stampede at religious gathering in northern India	
epa11454065 The bodies of stampede victims lay on ice as they await identification at a hospital in Hathras, Uttar Pradesh, India, 03 July 2024. State officials said at least 100 people, including women and children, died in a stampede at a religious event or 'Satsang' in Uttar Pradesh's Hathras. EPA/HARISH TYAGI Source: AAP / HARISH TYAGI/EPA
পুলিশ সূত্রে খবর, একটি প্রার্থনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল মুঘলাগড়ি গ্রামে। একসঙ্গে প্রচুর মানুষ জমায়েত করেছিলেন ঐ সভায়। কী কারণে হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছিল, তা জানার চেষ্টা চলছে। মৃতদেহগুলো উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আর তাতে‌ই বহু জনের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে, স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ঘটনার খোঁজখবর নিয়েছেন। তিনি ইতোধ্যেই একটি তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। মুঘলাগড়ি গ্রামে গিয়েছেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী লক্ষ্মীনারায়ণ চৌধরী এবং সন্দীপ সিং। রাজ্য পুলিশের ডিজিও ঘটনাস্থলে গিয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রে খবর, নারায়ণ সাকার ওরফে ভোলে বাবা নামে স্বঘোষিত এক ধর্মীয় গুরুর জন্য মানব মঙ্গল মিলন সদ্ভাবনা অনুষ্ঠান কমিটি’র তরফে সকাল ১১টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত ঐ সৎসঙ্গের আয়োজন করা হয়েছিল মঙ্গলবার। অংশগ্রহণ করেছিলেন হাজার হাজার ভক্ত। ভক্তদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন মহিলা। উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ওই সৎসঙ্গে যোগ দিতে এসেছিলেন তাঁরা। সেখানেই ঘটে যায় বিপর্যয়। হুড়মুড়িয়ে বেরোনোর সময় পদপিষ্ট হয়ে মারা গিয়েছেন অনেকে। বেশিরভাগই মহিলা। ঠিক কীভাবে এমনটা ঘটল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে কী ভাবে সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেল এবং এই পদপিষ্টের ঘটনা শুরু হল তা পুরোপুরি স্পষ্ট নয়।

এর মধ্যে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সিকন্দরারাউ হাসপাতালে আহতদের নিয়ে গেলেও সেখানে চিকিৎসা করার মতো পর্যাপ্ত চিকিৎসক ছিল না। হাসপাতালে একজন চিকিৎসক ছিলেন। এছাড়াও ঘটনার পর দেড় ঘণ্টা কেটে গেলেও প্রশাসনের কোনও আধিকারিক আসেন নি। পুলিশের ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে মুঘলাগড়ি গ্রামে গিয়েছেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী লক্ষ্মীনারায়ণ চৌধরী এবং সন্দীপ সিং। রাজ্য পুলিশের ডিজিও ঘটনাস্থলে রয়েছেন।
সব মিলিয়ে আবারও খবরের শিরোনামে উত্তরপ্রদেশের হাথরস। উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর এই হাথরসেই এক দলিত কিশোরীর গণধর্ষণের ঘটনায় উত্তাল হয়েছিল গোটা দেশ। হাথরসের বুলগড়ি গ্রামে মায়ের সঙ্গে মাঠে কাজ করছিলেন এক দলিত তরুণী। কন্যার চিৎকারের আওয়াজ শুনে তাঁর মা ছুটে যান। সেখানে যেতেই দেখেন তাঁর কন্যা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। জিভ কেটে নেওয়া হয়েছে। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ না নেওয়ারও অভিযোগ ওঠে। তরুণীকে গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে জেএনএমসি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে ১৪ দিন ভর্তি ছিলেন। ২৯ সেপ্টেম্বর তরুণীর মৃত্যু হয়। এরপরেই পরিবারকে না জানিয়ে রাতারাতি ওই তরুণীর দেহ সৎকার করারও অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে।

সেই হাথরসেই মঙ্গলবার পদপিষ্টের ঘটনা ফের গোটা দেশে আলোড়ন ফেলে দিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে বিপর্যয়ের কারণ নিয়েও। পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় সৎসঙ্গের আয়োজক কমিটিকেই দায়ী করছেন অনেকে। প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের দাবি, সৎসঙ্গের জন্য যে প্যান্ডেল বাঁধা হয়েছিল, তা ব্যারিকেড দিয়ে ঘেরা ছিল। পাখার ব্যবস্থা করা হয় নি। প্যান্ডেল খোলামেলা থাকলেও আর্দ্রতা এবং গরমের কারণে সকলেই হাঁসফাঁস করছিলেন। ফলে সৎসঙ্গ শেষ হওয়ার পরেই মানুষ হুড়মুড়িয়ে মাঠের বাইরে বেরনোর চেষ্টা করেন। কিন্তু আসা-যাওয়ার জন্য যে গেট তৈরি হয়েছিল, সেটিও অত্যন্ত সংকীর্ণ হওয়ার কারণে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। অনেকে মাটিতে পড়ে যান। বাকিরা তাঁদের উপর দিয়েই বাইরে বেরনোর চেষ্টা করেন।
আর এরপরেই প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ইতোমধ্যে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ঘটনাটির বিশদ খোঁজ নিয়েছেন। একই সঙ্গে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। সেই তদন্ত কমিটির নেতৃত্বে থাকবেন আগ্রার অতিরিক্ত ডিজি। কী কারণে এই দুর্ঘটনা তা নিয়ে বিস্তারিত তদন্ত করা হবে এবং ঘটনার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সংসদে ভাষণ থামিয়ে হাথরসে পদপিষ্ট-র ঘটনায় গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে, বিরোধীরা পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। মঙ্গলবার যখন হাথরসের ঘটনার খবর প্রকাশ্যে আসে তখন লোকসভায় বক্তব্য প্রদান করছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু দুর্ঘটনার খবর আসতেই ভাষণ থামিয়ে দেন তিনি। এরপরেই হাথরসে পদপিষ্ট-র ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। একইসঙ্গে, সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু জানিয়েছেন, হাথরসে মহিলা এবং শিশু-সহ বহু মানুষের মৃত্যুর খবর দুঃখজনক। হাথরসের ঘটনায় মৃতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও। উত্তরপ্রদেশ সরকারকে আবেদন করেছেন আহতদের যথাযথ চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার। এবং ইন্ডিয়া জোটের কর্মীদের দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তিনি হৃদয় থেকে মৃতদের পরিবারের পাশে আছেন। শোকাহত স্বজনদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা। মৃতদের উদ্দেশ্যে শোক জ্ঞাপন করেছেন তিনি। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন।

Share

Published

Updated

By Partha Mukhopadhyay
Source: SBS

Share this with family and friends


Follow SBS Bangla

Download our apps
SBS Audio
SBS On Demand

Listen to our podcasts
Independent news and stories connecting you to life in Australia and Bangla-speaking Australians.
Ease into the English language and Australian culture. We make learning English convenient, fun and practical.
Get the latest with our exclusive in-language podcasts on your favourite podcast apps.

Watch on SBS
SBS Bangla News

SBS Bangla News

Watch it onDemand