১৯৯১ সালে বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়া খালেদা জিয়া দীর্ঘ অসুস্থতার পর মারা গেছেন। গত বছর ছাত্র-ছাত্রীদের নেতৃত্বাধীন ব্যাপক আন্দোলনে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর ছিল কয়েক দশক ধরে তীব্র রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল ৮০ বছর।
তাঁর দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) জানিয়েছে, মঙ্গলবার দীর্ঘদিন রোগভোগের পর তিনি মারা যান। চিকিৎসকদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, তিনি লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস এবং হৃদ্রোগজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন।
খালেদা জিয়া ২০২৫ সালের শুরুতে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান এবং প্রায় চার মাস সেখানে থাকার পর দেশে ফেরেন।
২০০৬ সালের পর থেকে তিনি ক্ষমতার বাইরে ছিলেন এবং কয়েক বছর কারাবন্দি বা গৃহবন্দি অবস্থায় কাটালেও, তিনি ও তাঁর মধ্য-ডানপন্থী দল বিএনপি ব্যাপক জনসমর্থন ধরে রেখেছিল।
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকেই এগিয়ে থাকা দল হিসেবে দেখা হচ্ছে। তাঁর ছেলে ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (৬০) প্রায় ১৭ বছরের স্বেচ্ছা নির্বাসন শেষে গত সপ্তাহে দেশে ফেরেন। মি. রহমানকে প্রধানমন্ত্রী পদে শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে মনে করা হচ্ছে।
২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন আন্দোলনে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ একটি অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদায় এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ও ক্ষুদ্রঋণ আন্দোলনের পথিকৃৎ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
নভেম্বরে ছাত্র আন্দোলন দমনের ঘটনায় শেখ হাসিনাকে তাঁর অনুপস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
গাম্ভীর্যপূর্ণ স্বভাবের খালেদা জিয়া তাঁর দুই ছেলেকে লালন-পালন করার বিষয়ে নিযুক্ত ছিলেন, এজন্য শুরুতে তাঁকে একজন নিবেদিত নারী হিসেবে দেখা হতো।
তবে ১৯৮১ সালে তার স্বামী, সেনাপ্রধান ও তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এক ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে নিহত হওয়ার পর তাঁর রাজনৈতিক জীবন বদলে যায়।
তিন বছর পর তিনি বিএনপির নেতৃত্ব গ্রহণ করেন, যে দলটি তাঁর স্বামী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং “দারিদ্র্য ও অর্থনৈতিক পশ্চাৎপদতা থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করার” অঙ্গীকার করেন।
১৯৯০ সালে সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের পতনে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তিনি শেখ হাসিনার সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা ছিলেন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা ও আওয়ামী লীগের নেত্রী।
তবে সেই ঐক্য দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। তাদের তীব্র রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে দু’জনকে “ব্যাটলিং বেগমস” বা “সংঘাতরত বেগম” নামে ডাকা হতো।
সমর্থকদের চোখে খালেদা জিয়া ছিলেন ভদ্র ও কথাবার্তায় সংযত এবং স্টাইলের ক্ষেত্রে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার পরিচয় দিতেন। তবে দল রক্ষা ও প্রতিপক্ষের মোকাবিলায় তাঁকে দৃঢ় ও আপসহীন নেত্রী হিসেবেও দেখা হতো।
এর বিপরীতে শেখ হাসিনা ছিলেন অনেক বেশি স্পষ্টভাষী ও আক্রমণাত্মক। এই ভিন্ন ব্যক্তিত্বই দশকের পর দশক ধরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আধিপত্য করা তাঁদের প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে আরও তীব্র করে তোলে।
১৯৯১ সালে বাংলাদেশের প্রথম অবাধ নির্বাচনে খালেদা জিয়া শেখ হাসিনাকে হারিয়ে অপ্রত্যাশিত বিজয় অর্জন করেন। এর মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন এবং মুসলিম-প্রধান কোনো গণতান্ত্রিক দেশের দ্বিতীয় নারী সরকারপ্রধান হিসেবে ইতিহাসে স্থান পান। তাঁর আগে পাকিস্তানে বেনজির ভুট্টো এই কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন।
খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতি শাসনব্যবস্থার পরিবর্তে সংসদীয় ব্যবস্থা পুনর্বহাল করেন, যাতে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু থাকে প্রধানমন্ত্রীর হাতে।
তিনি বিদেশি বিনিয়োগে বিধিনিষেধ শিথিল করেন এবং বিনামূল্যে প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেন।
১৯৯৬ সালের নির্বাচনে তিনি শেখ হাসিনার কাছে পরাজিত হন, তবে পাঁচ বছর পর আবারও ভূমিধস বিজয়ের মাধ্যমে ক্ষমতায় ফেরেন।
২০০৬ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতার মধ্যে সেনা-সমর্থিত অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এলে তার দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হয়।
এসবিএস বাংলা এখন অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত দক্ষিণ এশীয় সকল জনগোষ্ঠীর জন্য এসবিএস সাউথ এশিয়ান চ্যানেলের অংশ।
এসবিএস বাংলা লাইভ শুনুন প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় এসবিএস সাউথ এশিয়ান-এ, ডিজিটাল রেডিওতে, কিংবা, আপনার টেলিভিশনের ৩০৫ নম্বর চ্যানেলে। এছাড়া, এসবিএস অডিও অ্যাপ-এ কিংবা আমাদের ওয়েবসাইটে। ভিজিট করুন www.sbs.com.au/bangla.
আর, এসবিএস বাংলার পডকাস্ট এবং ভিডিওগুলো ইউটিউবেও পাবেন। ইউটিউবে সাবসক্রাইব করুন এসবিএস সাউথ এশিয়ান চ্যানেল। উপভোগ করুন দক্ষিণ এশীয় ১০টি ভাষায় নানা অনুষ্ঠান। আরও রয়েছে ইংরেজি ভাষায় এসবিএস স্পাইস।
Share







