এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তল্লাশি চলাকালে বিবিসির দুই অফিসেই কর্মীদের মোবাইল ফোনগুলি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তারপরই তাঁদের বাড়ি চলে যেতে বলেন আয়কর দপ্তরের আধিকারিকরা।
এক বিবৃতিতে বিবিসি বলেছে, তারা আয়কর দপ্তরের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করছে।
‘’আমরা আশা করছি, যত দ্রুত সম্ভব এই পরিস্থিতির সমাধান হয়ে যাবে,’’ সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলেছে বিবিসি।
উল্লেখ্য, কয়েক সপ্তাহ আগেই দু’ পর্বে প্রকাশিত হয় বিবিসির একটি তথ্যচিত্র, 'ইন্ডিয়া: দ্য মোদী কোয়েশ্চেন'।
আজকের ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, সেই সময় ২০০২ সালে রাজ্যে সাম্প্রদায়িক হিংসা নিয়ে গবেষণা করে তথ্যচিত্রটি তৈরি করে বিবিসি, যা ভারতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় সরকার।
সমস্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে তথ্যচিত্রটি তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে।
টুইটার, ইউটিউবকেও ওই সংক্রান্ত সমস্ত টুইট এবং ভিডিও মুছে ফেলতে বলা হয়। তা নিয়ে দেশজুড়ে বিরোধীরা বিভিন্ন জায়গায় সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে তথ্যচিত্রটির প্রদর্শনের ব্যবস্থা করে।
কলকাতা ,দিল্লি ,মুম্বাই -তে পড়ুয়ারা বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে তথ্যচিত্রটি দেখান। তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও বিতণ্ডা হয় পড়ুয়াদের। কোথাও আবার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়।
এই অবস্থায় মঙ্গলবার,ওই তথ্যচিত্রের নির্মাতা ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন বা বিবিসি-র দিল্লি এবং মুম্বইয়ের অফিসে আয়কর দফতরের অভিযান চলছে।
এর মধ্যে ভারতে বিবিসির সম্প্রচার বন্ধের আবেদন করে আদালতে জনস্বার্থ মামলাও করা হয়েছিল। যদিও সেই আবেদন খারিজ হয়ে যায়। সেই বিতর্কের মাঝেই বিবিসির অফিসে অভিযান চালানো হচ্ছে।
এদিকে ভারতের বিরোধী দলগুলোর দীর্ঘ দিনের অভিযোগ,সি বি আই ,ই ডি বা ইনকাম ট্যাক্সের মত কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতাসীন কেন্দ্রীয় সরকার সামগ্রিক বিরোধিতাকে ধামাচাপা দিতে চাইছে।
এই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে তথ্যচিত্র ঘিরে তোলপাড়ের মধ্যেই বিবিসির অফিসে আয়কর অভিযান অনেকগুলি প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। বিরোধী দল কংগ্রেস এই বিষয়টি নিয়ে টুইটও করেছে।
অন্যদিকে, বিবিসির তথ্যচিত্র ইন্ডিয়া: দ্য মোদী কোয়েশ্চেন নিয়ে এ বার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পাশে দাঁড়িয়েছেন ব্রিটেনের রাজনীতিবিদ বব ব্ল্যাকম্যান।
ব্রিটেনের কনজ়ারভেটিভ এমপি মন্তব্য করেছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে বিবিসি-র তৈরি তথ্যচিত্র সম্পূর্ণ ভাবে অতিরঞ্জিত। বিবিসি-র মতামত নিজস্ব। তা কোনও ভাবেই ব্রিটিশ সরকারের মতামতকে উপস্থাপন করে না। তথ্যচিত্রটি অনৈতিক ভাবে তৈরি করা হয়েছে। ভারত ব্রিটেনের বন্ধু।
এর মধ্যে ভারতের শাসক দল বিজেপির দাবি, বিবিসি বিশেষ উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কলঙ্কিত করতে চাইছে। 
তাঁদের অভিযোগ,এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ২০০২ সাল থেকেই। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন,যতই ষড়যন্ত্র হোক না কেন, সত্যকে দীর্ঘদিন ধামাচাপা দিয়ে রাখা যায় না। সত্য বেরোবেই। 
দ্য ইকোনোমিক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিবিসির তথ্যচিত্র, ইন্ডিয়া: দ্য মোদী কোয়েশ্চেন প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের দাবি, ২০০২ সাল থেকেই নরেন্দ্র মোদীর পিছনে লেগে আছে ইংল্যান্ডের ওই সংবাদমাধ্যম।
মি শাহ বলেছেন, হাজারো ষড়যন্ত্র করেও সত্যকে চাপা রাখা যায় না। ২০০২ সাল থেকে লেগে আছে কিন্তু প্রতি বারই মোদীজি আরও শক্তিশালী, আরও জনপ্রিয় হয়ে বেরিয়ে এসেছেন।
অন্যদিকে, বিরোধী শিবিরের অনেকেরই মত, যে ভাবে মরিয়া হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরকার তথ্যচিত্রটির প্রদর্শন বন্ধ করতে লেগেছে, তাতে হিতে বিপরীত হয়েছে। যে মানুষ তথ্যচিত্র সম্পর্কে আপাত উদাসীন ছিলেন, তাঁকেও তা দেখার জন্য প্রলুব্ধ করা হয়েছে। 
এদিকে 'বিনাশকালে বুদ্ধিনাশ হয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকারের' - বিবিসি অফিসে আয়কর বিভাগের তল্লাশি প্রসঙ্গে এমনই মন্তব্য করেছে কংগ্রেস।
এই ঘটনায় সরব হয়েছেন তৃণমূল-সহ বিরোধী দলগুলিও।
কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেছেন, এই ঘটনা প্রমাণ করছে বিনাশকালে বুদ্ধিনাশ হয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকারের। দেশে অঘোষিত জরুরি অবস্থা চলছে। তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র বলেছেন, বিবিসির দিল্লির অফিসে তল্লাশি চলছে। ভীষণ অপ্রত্যাশিত। অন্যদিকে সেবির সঙ্গে আলোচনার সময় আদানিকে গুজরাটি স্ন্যাকস খেতে দেওয়া হচ্ছে।
সমাজবাদী পার্টি প্রধান অখিলেশ যাদব কেন্দ্রের এই পদক্ষেপকে আদর্শগত জরুরি অবস্থা বলে কটাক্ষ করেছেন।
পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি জানিয়েছেন, যারাই সত্যি কথা বলবে, তাদেরই মুখ বন্ধ করে দেওয়া হবে।
এডিটরস গিল্ড অফ ইন্ডিয়া জানিয়েছে, এই ঘটনা অতন্ত দুঃখজনক। এটি সাংবিধানিক গণতন্ত্রকে ক্ষুন্ন করেছে।
এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার 









