নিউ সাউথ ওয়েলস ইউনিভার্সিটির গবেষণায় ৭৩ শতাংশ অভিভাবক মনে করেন যে, শিশুরা নিজস্ব স্ক্রিন-ভিত্তিক ডিভাইস পাওয়ার পর থেকে তাদের সন্তানদের ডিজিটাল আসক্তি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।
ট্যাশ ডাউলিং নিউ সাউথ ওয়েলসের মধ্য উত্তর উপকূলে বেলিংজেনের একজন মা।
তিনি বলেছেন যে তার ছেলের স্ক্রিন আসক্তি তিনি প্রথম লক্ষ্য করেছিলেন যখন তার বয়স ১৬ বছর।
তিনি বলছেন, "দুঃখজনকভাবে আমি লক্ষ্য করেছি যে যখনই তার হাতে স্ক্রিন দেখেছি - তা ফোন, গেমিং, এমনকি নেটফ্লিক্স - তখন থেকে তার আচরণের পরিবর্তন লক্ষ্য করতে শুরু করেছি। আমি জানতাম না কী হচ্ছে। তার সাথে দূরত্ব তৈরী হলো, এবং আমরা স্ক্রিন টাইম নিয়ে অনেক তর্ক করতে শুরু করলাম, অথচ আমরা আদতে কোন দিন কোন কিছু নিয়েই তর্ক করতাম না। এটি বাড়ির প্রধান সমস্যা হয়ে ওঠলো।"
জাতীয় নির্দেশিকা সুপারিশ করে যে দুই বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের স্ক্রীন টাইম থাকা উচিত নয়, ২ থেকে ৫ বছরের বাচ্চাদের প্রতিদিন এক ঘন্টার বেশি স্ক্রীন টাইম নয় এবং ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীদের জন্য প্রতিদিন দুই ঘন্টার বেশি বিনোদনমূলক স্ক্রীন টাইম নয়।
তবে ট্যাশ বলেছেন যে এভাবে তার ছেলের স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা বেশ ক্লান্তিকর ছিল।
তিনি বলছেন, "এই ইন্টারনেট-ভিত্তিক সমস্যাটির সবচেয়ে বেদনাদায়ক এবং সবচেয়ে ক্লান্তিকর অংশ হচ্ছে এগুলো নিয়ে বাচ্চাদের সাথে সংঘাত, যার ফল পরিবারগুলি ভোগ করছে। কারণ এটি পিতামাতা এবং শিশুদের মধ্যে একটি বড় ব্যবধান করে দিচ্ছে। অভিভাবক হওয়া যথেষ্ট কঠিন। স্ক্রীন টাইম নিয়ে প্রতিদিনের তর্ক করা ক্লান্তিকর - এবং এটি দুঃখজনক কারণ ইন্টারনেট আপনার সন্তানদের সাথে একটি সুন্দর সম্পর্কের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ যেখানে আপনি আপনার সন্তানদের মূল্যবোধ শেখাবেন, সেখানে এই সংঘাত এত ক্লান্তিকর হয়ে ওঠে যে আপনি হাল ছেড়ে দিতে বাধ্য হন।"
ট্যাশের অভিজ্ঞতা অস্বাভাবিক নয়।
নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের গনস্কি ইনস্টিটিউট ফর এডুকেশনের ২০২১ সালের একটি গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে পাঁচজনের মধ্যে চারজন শিশুরই অন্তত একটি স্ক্রিন-ভিত্তিক ডিভাইস রয়েছে।
এতে আরো দেখা যায় যে অস্ট্রেলিয়ায় চার বছরের কম বয়সী শিশুদের অন্তত একটি স্ক্রিন-ভিত্তিক ডিভাইস রয়েছে এবং মাত্র ৪৬ শতাংশ অভিভাবক মনে করেন যে তাদের সন্তান এটি ছাড়া একটি দিন কাটাতে পারবে।
এই কারণেই ডেকিন ইউনিভার্সিটি প্রাকৃতিক পরিবেশে সময় কাটালে স্ক্রীন টাইমের সাথে সম্পর্কিত আচরণগত সমস্যাগুলি কমাতে সাহায্য করতে পারে কিনা তা তদন্ত করতে একটি গবেষণা শুরু করেছে।
পিএইচডি গবেষক মেরিনা তোরজিনস্কি তিন অংশের এই আন্তর্জাতিক গবেষণায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
তিনি বলছেন যে, "আমরা জানি যে অস্ট্রেলিয়ান পিতামাতারা তাদের বাচ্চাদের স্ক্রীন ব্যবহার এবং স্ক্রীন টাইমের সাথে যুক্ত সম্ভাব্য আচরণগত এবং উন্নয়নমূলক ফলাফল সম্পর্কে সত্যিই উদ্বিগ্ন। তবে, সাম্প্রতিক গবেষণায় আমরা যে একটি জিনিস দেখেছি তা হল যখন অভিভাবকরা বাড়িতে স্ক্রীন টাইম নিয়ন্ত্রণ করেন, তখন তাদের বেগ পেতে হয়। এতে পিতামাতারা চাপ অনুভব করেন এবং তাদের অপরাধবোধ হয় এবং বাড়িতে এই স্ক্রীন টাইম সীমিত করার চেষ্টার কারণে প্রায়ই পারিবারিক দ্বন্দ্বের সূচনা হয়। তাই আমরা এমন কিছু উপায় খুঁজেছিলাম যাতে পিতামাতারা উপকৃত হন।"
গনস্কি ইনস্টিটিউ রিপোর্ট থেকে দেখা যায় ৬৫ শতাংশ অভিভাবক মনে করেন যে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িতে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে।
তাহলে কীভাবে একটি পরিবারকে আউটডোরে করা কিছু বিষয় এই চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে?
মিজ তোরজিনস্কি ব্যাখ্যা করে বলেন, "প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রকৃতির সান্নিধ্য শারীরিক এবং মানসিক চাপ হ্রাস করে, এবং যখন আমরা মতামত পর্যালোচনা করি তখন আমরা এটিও দেখেছি যে প্রকৃতির সান্নিধ্যে পারিবারিক অভিজ্ঞতা ইতিবাচক হয় যা শিশুদের অবসর সময় কীভাবে কাটবে এ বিষয়ে ভিন্ন কিছু অভিজ্ঞতা হয় যা তাদের আরো উৎসাহ দেয়।"
লুসি প্যাটন সিডনির কাছেই হিথকোটের বাসিন্দা, এবং দুই সন্তানের মা।
তিনি তার ছেলেদের জন্য স্ক্রীন টাইম সীমিত করেছেন। কারণ ডিভাইসগুলি বাড়িতে দ্বন্দ্ব তৈরি করতো।
লুসি বলছেন যখন তারা বাইরে বেশি সময় কাটাতেন তখন তিনি তাদের আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখেছিলেন।
তিনি বলছেন " এসময় তারা অনেক বেশি শারীরিক এবং মানসিকভাবে শান্ত। তারা কম আক্রমনাত্মক। আমি দেখতে পেলাম যে তাদের যদি খুব বেশি স্ক্রিন টাইম দেয়া হয়, তবে তাদের মধ্যে আরও বেশি উত্তেজনা থাকে।"
অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম টেলিকমিউনিকেশন প্রদানকারীর সকলেরই কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যার লক্ষ্য পিতামাতাদের তাদের সন্তানদের স্ক্রীন টাইম নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করা।
ভোডাফোনের একটি ফ্যামিলি স্ক্রিন টাইম সেটিং আছে, অপটাসের অপটাস পজ ফিচার আছে এবং টেলস্ট্রার মোবাইল প্রোটেক্ট আছে যাতে বাবা-মা দিনের সময়সীমা সেট করতে পারে।
ইসেফটি কমিশনার জুলি ইনম্যান গ্রান্ট এক বিবৃতিতে বলেন যে এটি একটি সমস্যা যার সমাধানে প্রতিটি পিতামাতার নিজে থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
পুরো প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও প্লেয়ারে ক্লিক করুন।
এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা অডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত।