অস্ট্রেলিয়ায় নতুন নতুন কুইজিন বা রন্ধন-প্রণালী পরীক্ষা করে দেখার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে সিডনি সিবিডির একটি জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট ‘কিচেন বাই মাইক’। সম্প্রতি উইকডে-তে লাঞ্চের ব্যস্ত সময়ে ভোক্তারা সেখানে একটি নতুন ও কৌতুহল-জাগানিয়া খাবার চেখে দেখার সুযোগ পেয়েছেন। বলা যায়, অস্ট্রেলিয়ায় এক্ষেত্রে তারাই প্রথম, যারা এই সুযোগ পেলেন।
খ্যাতনামা শেফ মাইক ম্যাক-এনার্নি-র বহুল প্রশংসিত সাওরডো (Sourdough) ব্রেড এখন পরিবেশন করা হচ্ছে, যাকে বলা হয় ‘কালচারড জাপানিজ কোয়েল স্প্রেড’, অর্থাৎ, ল্যাবে তৈরি জাপানি কোয়েল পাখির মাংসের মাখনজাত স্প্রেডের সঙ্গে।
এটির অভিনবত্ব তাহলে কোথায়?

Chef Mike McEnearney's popular sourdough bread is now being served with cultured quail compound butter at a restaurant in Sydney. Source: SBS
‘কালচারড মিট’ বলতে বোঝানো হয় পশুর শরীর থেকে সামান্য পরিমাণ কোষ সংগ্রহ করে, কারখানার মতো পরিবেশে সেটিকে বৃদ্ধি করা, যাতে শেষ পর্যন্ত এক ধরনের মাংসজাত পণ্য উৎপন্ন করা যায়। এক্ষেত্রে কোয়েল পাখির সামান্য পরিমাণ কোষ নিয়ে ফ্যাক্টরিতে এই মাংস উৎপাদন করা হয়েছে।
হ্যাটেড রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে পাব পর্যন্ত, এই জুলাই মাসে অস্ট্রেলিয়া জুড়ে ডজন খানেক রেস্টুরেন্টে এই কালচারড কোয়েল মাংস পরিবেশন করা শুরু হয়েছে। আর, এ মাসের শেষ নাগাদ আরও ডজন খানেক রেস্টুরেন্টের মেনুতেও এটি যোগ করা হবে।

Vow's chief operating officer, Ellen Dinsmoor, said the company is not trying to replace regular meat, but is using unique ways to create new products. Source: SBS
এর আগে, খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রক সংস্থা Food Standards Australia New Zealand বা FSANZ এর মাধ্যমে এর অনুমোদন পেতে দু’বছরেরও বেশি সময় লেগেছে। Vow এর চিফ অপারেটিং অফিসার অ্যালেন ডিনসমোর জোর দিয়ে বলেছেন যে, তাদের কোম্পানি মাংসের বিকল্প তৈরি করার চেষ্টা করছে না।
তিনি বলেন, কোয়েলের কোষগুলো একটি বায়ো-রিয়েক্টরে বৃদ্ধি করা হয়, যা মূলত একটি বড় স্টেইনলেস স্টিলের ট্যাঙ্ক। এ ধরনের ট্যাঙ্ক ব্রিউয়ারি বা বিয়ার তৈরির কারখানায় দেখা যায়।
মনাশ ইউনিভার্সিটির বায়োটেকনোলজির প্রফেসর পল উড বলেন, এই পণ্য বড় পরিসরে উৎপাদিত না হওয়া পর্যন্ত এটি ফার্মিং বা চাষাবাদের তুলনায় কতোটা টেকসই হবে তা পরিষ্কারভাবে বোঝা যাবে না।
তিনি আরও বলেন,
পুষ্টির দিক থেকে এবং খরচের দিক থেকে বিষয়টি চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়াবে।
তবে, কেউ কেউ মনে করেন, ভবিষ্যতের খাদ্য সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এই শিল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কোনো কোনো হিসাব মতে, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে ২০৫০ সাল নাগাদ কৃষিজাত উৎপাদন ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়াতে হবে।

The animal cells are grown inside a large stainless steel tank in what Vow describes as a "nutrient-dense broth". Credit: Supplied / Vow
কালচারড মিট নিয়ে অনেক ভ্রান্ত-ধারণা রয়েছে।
কফি থেকে শুরু করে পাম অয়েল, চামড়া এবং চকলেটসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি করতে ব্যবহৃত হচ্ছে এই প্রযুক্তিটি।
তবে, শিল্পের ব্যাপক প্রসার এখনও একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে এবং উন্নত বিনিয়োগের প্রয়োজন রয়েছে। বিশেষ করে যখন কালচারড খাবারের বিক্রয় ও খাওয়া নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নিচ্ছে বিভিন্ন দেশ, যাদের মধ্যে রয়েছে ইতালি, ফ্রান্স এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি অঙ্গরাজ্য।
এই বিরোধের মূল কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে গুণগত মান নিয়ে উদ্বেগ এবং ফার্মার বা কৃষকদের প্রতি হুমকির বিষয়টি।
ইতালির কৃষক সংগঠন এটিকে ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন মিট’ হিসেবে অভিহিত করেছে।
তবে, এই শিল্পের এখনও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। কালচারড মিট বিপণনের জন্য বিশ্বজুড়ে অনুমোদনপ্রাপ্ত মাত্র তিনটি কোম্পানির মধ্যে একটি হচ্ছে Vow. বিভিন্ন সরকার, বিনিয়োগকারী এবং ভোক্তাদের সমর্থন লাভ করাটাই তাদের জন্যে এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারে ক্লিক করুন।