গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো
- অস্ট্রেলিয়ায় দুটি সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত সম্প্রচারমাধ্যম রয়েছে: অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (ABC) এবং স্পেশাল ব্রডকাস্টিং সার্ভিস (SBS)।
- করদাতারা ABC এবং SBS-এর অর্থ জোগান দেন একটি পাবলিক সার্ভিস হিসেবে।
- পাবলিক সম্প্রচারমাধ্যম রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত মিডিয়ার থেকে আলাদা।
- অস্ট্রেলিয়ায় বাণিজ্যিক ও কমিউনিটি মিডিয়া আউটলেটও রয়েছে, যারা বিজ্ঞাপন বা স্পনসরশিপের মাধ্যমে আয় করে।
যদিও অস্ট্রেলিয়ার সংবিধানে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা নেই, তবুও দেশটি ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রীডম ইনডেক্সের ( World Press Freedom Index) শীর্ষ ২৯টি দেশের মধ্যে রয়েছে।
তাহলে, গণতন্ত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা কী? অস্ট্রেলিয়ায় বেসরকারি ও সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত সম্প্রচার মাধ্যমগুলোর মধ্যে পার্থক্য কী? এ নিয়ে 'অস্ট্রেলিয়া সম্পর্কে জানুন' পর্বে আজকের প্রতিবেদন।
পাবলিক মিডিয়া কী?
অস্ট্রেলিয়ায় রয়েছে বহু গণমাধ্যম, যার মধ্যে রয়েছে ব্যক্তিমালিকানাধীন বাণিজ্যিক মিডিয়া ও স্পন্সরপ্রাপ্ত কমিউনিটি নেটওয়ার্ক।
সরকারি অর্থায়নে দুইটি পাবলিক সার্ভিস সম্প্রচারমাধ্যম পরিচালিত হয়: একটি অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (Australian Broadcasting Corporation - ABC) এবং আরেকটি স্পেশাল ব্রডকাস্টিং সার্ভিস (Special Broadcasting Service - SBS)।
বেসরকারি মূলধারার গণমাধ্যম লাভ করতে ও দর্শকসংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কনটেন্ট তৈরি করে। তারা তাদের পৃষ্ঠপোষকদের ও বাণিজ্যিক স্বার্থের কাছে জবাবদিহি করে। এর বিপরীতে, সরকারি সম্প্রচারমাধ্যমগুলো তাদের তহবিল প্রদানকারী জনগণের কাছে দায়বদ্ধ।
ক্রিস্টিয়ান পোর্টার হচ্ছেন পাবলিক মিডিয়া এলায়েন্সের (Public Media Alliance)সিইও, এটি বিশ্বের বৃহত্তম পাবলিক মিডিয়া সংস্থার জোট। এই জোট পাবলিক মিডিয়া ও সাংবাদিকতার মৌলিক মূল্যবোধের পক্ষে কাজ করে।
তিনি বলেন, পাবলিক সম্প্রচারমাধ্যমের দায়িত্ব হলো জনসাধারণকে সঠিক তথ্য সরবরাহ করা।
পাবলিক মিডিয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের অর্থায়ন ও ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি এবং ব্যয়ের বিবরণ স্বচ্ছভাবে প্রকাশ করতে হবে।
ওয়েন্ডি বেকন একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিক, রাজনৈতিক অ্যাক্টিভিস্ট এবং শিক্ষাবিদ। দুই দশক ধরে তিনি ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি সিডনি (ইউটিএস)-তে সাংবাদিকতা পড়িয়েছেন।
তিনি বলেন, পাবলিক মিডিয়া এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে বিভিন্ন মতামত ও অনুষ্ঠানধর্মী কনটেন্ট থাকে, যা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যময় চাহিদা ও দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করে। এটি রাষ্ট্রীয় বা সরকার-নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া থেকে ভিন্ন।

White megaphone with copy space Source: Moment RF / Emilija Manevska/Getty Images
স্বৈরশাসিত দেশগুলোতে সাধারণত সরকার-নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া দেখা যায়। তারা সরকার-বান্ধব ও ন্যাশনালিস্টিক কনটেন্ট প্রকাশ করে।
পাবলিক মিডিয়া গণতন্ত্রের একটি স্তম্ভ, কারণ এটি জনগণের মধ্যে বিতর্ক ও পর্যবেক্ষণকে উৎসাহিত করে।
নিজাত বাসার হচ্ছেন এসবিএস তুর্কিশ-এর এক্সিকিউটিভ প্রোডিউসার। তিনি অস্ট্রেলিয়ায় এসবিএস রেডিও-তে কাজ শুরু করার আগে তুর্কিয়ে-তে সাংবাদিকতা করতেন।
তিনি বলেন, সেখানে সরকার সরাসরি বা সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত মিডিয়া অথবা সরকারঘনিষ্ঠ মালিকদের মাধ্যমে সংবাদ পরিবেশনের পুরো নিয়ন্ত্রণ রাখে।
বাসার ব্যাখ্যা করেন, তুর্কিয়ে-তে সাংবাদিকরা সরকারবিরোধী কিছু প্রকাশ করলে তারা গুরুতর হুমকির মুখে পড়েন।
তিনি আরও বলেন, তুর্কিয়ে এবং অস্ট্রেলিয়ার মিডিয়া ফ্রিডমের পার্থক্য অত্যন্ত প্রকট।
এর মানে এই নয় যে, অস্ট্রেলিয়ার পাবলিক ব্রডকাস্টারগুলো বাইরের চাপ থেকে একেবারেই মুক্ত।
এবিসি-র এডিটোরিয়াল ডিরেক্টর গ্যাভিন ফ্যাং ব্যাখ্যা করে বলেন, "ABC-এর মতো বড় কোনো পাবলিক প্রতিষ্ঠানকে সবসময়ই চাপের মুখে পড়তে হয়—যাতে তারা স্বাধীনভাবে নয়, বরং অন্যের প্রভাবের মধ্যে থেকে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাই আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হলো—আমরা যেন সবসময় স্বাধীনভাবে কাজ করি এবং দর্শকদের স্বার্থকে আগে রাখি। এর মানে হলো, আমরা যেন বাইরের কোনো চাপ বা স্বার্থের দ্বন্দ্বে প্রভাবিত না হই। যদি আমরা বাইরের প্রভাব মেনে চলি, তাহলে দর্শকদের স্বার্থ সবার আগে রাখতে পারব না এবং আমাদের স্বাধীনতা বজায় থাকবে না। এটাই আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।"

The SBS and ABC logos. Credit: Credit: Getty/SPmmory
অস্ট্রেলিয়ায় এবিসি এবং এসবিএস-এর ভূমিকা
তাহলে, জনসাধারণ এবিসি এবং এসবিএস থেকে কী প্রত্যাশা করতে পারে?
এই দুইটি পাবলিক ব্রডকাস্টার পরিচালিত হয় তাদের নিজস্ব চার্টার, এডিটোরিয়াল পলিসি এবং কন্ডাক্ট কোড অনুসারে, যা ন্যায্য ও ভারসাম্যপূর্ণ কনটেন্ট নিশ্চিত করে।
এই মিডিয়ার মধ্যে এবিসি বৃহত্তর, যার রয়েছে অসংখ্য আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিউরো, অফিস ও স্টুডিও – অস্ট্রেলিয়ার সব স্টেটের ক্যাপিটালে এর উপস্থিতি আছে।
এটির রেডিও স্টেশন ও টিভি চ্যানেলও রয়েছে বিভিন্ন দর্শকের জন্য। এর মধ্যে রয়েছে নিউজ ও চিলড্রেন'স চ্যানেল।
এবিসি জরুরি অবস্থায়, বিপর্যয় বা সংকটকালে জনগণকে তথ্য সরবরাহ করে — সংকটকালে কীভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে, সতর্কতা প্রচার করে, এবং সংকট থেকে পুনরুদ্ধার সম্পর্কে জানায়।
গ্যাভিন ফ্যাং বলেন, "জরুরি পরিস্থিতিতে সম্প্রচার আমাদের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ, এবং এটা এখন আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
বিভিন্ন ধরনের জলবায়ু বিপর্যয় ও অন্যান্য সংকট বাড়তে থাকায়, অস্ট্রেলিয়ানদের নির্ভরযোগ্য তথ্যের উৎসের দিকে ফিরতে হয় – যখনই কোনো জরুরি অবস্থা শুরু হয়।
এই মুহূর্তে এবিসি'র পক্ষে এই দায়িত্ব পালন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এবিসি'র ব্যাপক উপস্থিতি রয়েছে, আর অনেক অন্য মিডিয়া হয় সেটা করতে পারে না, কিংবা করতে চায় না।"
এসবিএস হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার মাল্টিকালচারাল ও মাল্টিলিঙ্গুয়াল ন্যাশনাল পাবলিক ব্রডকাস্টার। এটির টিভি চ্যানেলগুলোতে আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠান ও বিভিন্ন ভাষায় নিউজ পরিবেশিত হয়, ইংরেজি ছাড়াও বহু ভাষায়।
এসবিএস ইংরেজির বাইরে অন্যান্য ভাষাভাষীদের নিজ নিজ দেশের তথ্য ও এন্টারটেইনমেন্ট প্রোগ্রাম প্রচার করে।
এসবিএস-এ রয়েছে এনআইটিভি – অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইন্ডিজিনাস টেলিভিশন – যেখানে ফার্স্ট নেশনস-এর দৃষ্টিকোণ থেকে কনটেন্ট প্রচার করা হয়।
এসবিএস একটি ন্যাশনাল পাবলিক ব্রডকাস্টার, তবে এটি সরকারি ও কমার্শিয়াল উভয় উৎস থেকে অর্থায়িত হয়। এটি এবিসি-র কমপ্লিমেন্ট, কারণ এটি অস্ট্রেলিয়ার মাল্টিকালচারাল ও মাল্টিলিঙ্গুয়াল ব্রডকাস্টার হিসেবে কাজ করে।

Copies of The Sydney Morning Herald newspaper, published by Fairfax Media Ltd., left, are displayed at a newsagent's shop in Sydney, Australia, on Thursday, July 26, 2018. Credit: Bloomberg/Bloomberg via Getty Images
তিনি বলেন, এসবিএস-এর সেবা মানুষকে অস্ট্রেলিয়া এবং এর সিস্টেম — যেমন গভার্নমেন্ট, অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, এডুকেশন, ইমারজেন্সি সার্ভিস ইত্যাদি — ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করে। এর ফলে, তারা নতুন পরিবেশে ভালভাবে জীবন শুরু করতে পারে।
কমিউনিটি রেডিও স্টেশন
অস্ট্রেলিয়ায় প্রায় ৪৫০টি কমিউনিটি রেডিও সার্ভিস রয়েছে। এই রেডিও সার্ভিসগুলো অলাভজনক এবং স্থানীয় সংগঠন দ্বারা পরিচালিত হয়।
এগুলোর মধ্যে রয়েছে ভাষাভিত্তিক, ধর্মীয়, সঙ্গীতকেন্দ্রিক বা এলজিবিটিকিউআইএ+ (LGBTQIA+) সম্প্রদায়ের রেডিও, যাদের কথা মূলধারার মিডিয়ায় তেমনভাবে উঠে আসে না।
কমার্শিয়াল মিডিয়া
অন্যদিকে, কমার্শিয়াল মিডিয়াও ডেমোক্রেটিক দেশে মিডিয়া ডাইভার্সিটি রক্ষায় জরুরি।
ক্যাসি ডেরিক হচ্ছেন মিডিয়া, এন্টারটেইনমেন্ট অ্যান্ড আর্টস অ্যালায়েন্স-এর মিডিয়া সেকশন-এর ডিরেক্টর। এমইএএ হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন, যা পাবলিক ও কমার্শিয়াল মিডিয়ার সাংবাদিকদের প্রতিনিধিত্ব করে।
তিনি বলেন, এই মিডিয়াগুলো পাবলিক ডিসকোর্স-এ তাৎপর্য যোগ করে।
প্রফেসর ওয়েন্ডি বেকন পাবলিক ও কমার্শিয়াল উভয় ধরনের মিডিয়াতে সাংবাদিকতা করেছেন।
তিনি বলেন, যদিও কিছু কমার্শিয়াল মিডিয়া প্রকৃত অর্থে পাবলিক ইন্টারেস্ট বিষয় নিয়ে সাংবাদিকতা করে, তবুও তাদের বেশিরভাগ কনটেন্ট তৈরি করা হয় বৃহৎ পরিসরে অডিয়েন্স টানার ও অ্যাডভার্টাইজিং রেভিনিউ আয়ের লক্ষ্যে।
নিউজ কর্প ছাড়াও অস্ট্রেলিয়ায় আরও কয়েকটি বড় মিডিয়া কনগ্লোমারেট আছে। এর মধ্যে রয়েছে সেভেন ওয়েস্ট মিডিয়া, যা এএসএক্স-এ তালিকাভুক্ত এবং অস্ট্রেলিয়ান ক্যাপিটাল ইকুইটি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত; এবং নাইন এন্টারটেইনমেন্ট, যা পাবলিশিং অ্যান্ড ব্রডকাস্টিং লিমিটেড (পিবিএল)-এর সাথে একীভূত হয়ে গঠিত। এই দুটি প্রতিষ্ঠানের ফাউন্ডার ছিলেন প্যাকার এবং ফেয়ারফ্যাক্স ফ্যামিলি।
পাবলিক মিডিয়া অ্যালায়েন্স-এর সিইও ক্রিস্টিয়ান পোর্টার বলেন, প্রাইভেট ওনারশিপ-এর দুর্বল দিক হলো — কিছু মিডিয়া আউটলেট এডিটোরিয়াল ক্ষেত্রে পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারে।
বিভিন্ন মত ও দৃষ্টিভঙ্গি নিশ্চিত করতে মিডিয়া ডাইভার্সিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই পর্বটি এর আগে ২০২২ সালে প্রকাশিত হয়েছিল এবং ২০২৫ সালে হালনাগাদ করা হয়েছে।
সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও প্লেয়ারে ক্লিক করুন।
আপনার নতুন জীবনে অস্ট্রেলিয়ায় মানিয়ে নিতে আরও তথ্য ও টিপস পেতে অস্ট্রেলিয়া এক্সপ্লেইনড পডকাস্ট সাবস্ক্রাইব করুন বা অনুসরণ করুন।
আপনার কি কোনো প্রশ্ন আছে? বা কোনো বিষয় নিয়ে জানতে চান? আমাদের ইমেল করুন: australiaexplained@sbs.com.au.
এসবিএস বাংলা এখন অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত দক্ষিণ এশীয় সকল জনগোষ্ঠীর জন্য এসবিএস সাউথ এশিয়ান চ্যানেলের অংশ।
এসবিএস বাংলা লাইভ শুনুন প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় এসবিএস সাউথ এশিয়ান-এ, ডিজিটাল রেডিওতে, কিংবা, আপনার টেলিভিশনের ৩০৫ নম্বর চ্যানেলে। এছাড়া, এসবিএস অডিও অ্যাপ-এ কিংবা আমাদের ওয়েবসাইটে। ভিজিট করুন www.sbs.com.au/bangla
আর, এসবিএস বাংলার পডকাস্ট এবং ভিডিওগুলো ইউটিউবেও পাবেন। ইউটিউবে সাবসক্রাইব করুন এসবিএস সাউথ এশিয়ান চ্যানেল। উপভোগ করুন দক্ষিণ এশীয় ১০টি ভাষায় নানা অনুষ্ঠান। আরও রয়েছে ইংরেজি ভাষায় এসবিএস স্পাইস