যদিও এই আইবিডি রোগের নির্দিষ্ট কারণ এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি, তবে আমরা ধীরে ধীরে শিখছি কীভাবে এই রোগ নিয়ে বাঁচা যায় — এমনকি হয়তো একদিন প্রতিরোধও করা যেতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে পড়ার সময় যখন নাটাশা জিওয়ানির বন্ধুদের সাথে আনন্দ উপভোগ করার কথা, তখন তিনি নিয়মিত পেটব্যথায় ভুগতে থাকেন।
পরবর্তীতে তার ক্রোনস ডিজিজ ধরা পড়ে।
ক্রোনস (Crohn’s) ডিজিজ এবং আলসারেটিভ কোলাইটিস — এই দুই রোগকেই একত্রে ইনফ্ল্যামেটরি বাওয়েল ডিজিজ বা আইবিডি বলা হয়। এটি একটি অটোইমিউন রোগ, যেখানে শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিজের অন্ত্রকেই আক্রমণ করে বসে।
ক্রোনস ডিজিজ হজম প্রক্রিয়ার যেকোনো অংশে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, তবে সাধারণত তা অন্ত্রে প্রভাব ফেলে।
অন্যদিকে, আলসারেটিভ কোলাইটিস, সংক্ষেপে "কোলাইটিস" নামেও পরিচিত, কোলন এবং রেকটামে প্রদাহ ও ঘা সৃষ্টি করতে পারে।
ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট ভিনসেন্ট হো বলেন, এই দুটি রোগই ডায়রিয়া এবং পেটব্যথার মতো একাধিক উপসর্গ সৃষ্টি করে, কিন্তু বাইরের মানুষদের কাছে এগুলো অদৃশ্যই থেকে যায়।
অস্ট্রেলিয়ায় আইবিডি আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে — দশ বছর আগেও যেখানে সংখ্যা ছিল প্রায় ১ লক্ষ, এখন তা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজারে। এবং আগামী দশ বছরে তা ২ লক্ষ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে "স্টেট অব দ্য নেশন" রিপোর্টে বলা হয়েছে।
ড. হো বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় আইবিডি রোগের হার বিশ্বে সর্বোচ্চ।
তাঁর মতে, যদিও প্রদাহের সুনির্দিষ্ট উৎস জানা যায়নি, তবে আমরা এখন কিছু কারণ সম্পর্কে জানতে শুরু করেছি।
এর একটি ঝুঁকিপূর্ণ দিক হলো খাদ্যাভ্যাস।
ওয়াল্টার অ্যান্ড এলাইজা হল ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল রিসার্চ একটি প্রাক-চিকিৎসা গবেষণা প্রকাশ করেছে যা সাম্প্রতিক বিশ্বে-প্রথম। এতে দেখা গেছে, মাত্র কয়েকটি স্যাচুরেটেড ফ্যাটযুক্ত খাবার খাওয়াই শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।
এই ধরনের খাবার একটি আইএল-২২ নামের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন-এর উৎপাদনও কমিয়ে দেয়, যা প্রদাহ প্রতিরোধে সহায়ক।
গবেষণায় ব্যবহার করা হয়েছিল ইঁদুর, এবং দেখা যায় যে স্যাচুরেটেড ফ্যাট (যেমন ফাস্ট ফুড বা প্রক্রিয়াজাত মাংস) আইএল-২২ কমায়।
তবে বাদাম ও অ্যাভোকাডোর মত খাদ্যে পাওয়া যায় আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট — যা এই প্রোটিনের উৎপাদন বাড়াতে পারে।
ড. হো বলেন, এটি আইবিডির মতো দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনিত রোগে আক্রান্ত মানুষের জন্য দারুন আশার বার্তা।
নাটাশা বলছেন, ভালো খাবার খাওয়ার ফলে তার উপসর্গগুলোর ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
যদিও আইবিডি একটি নিরাময়হীন দীর্ঘস্থায়ী রোগ, তবে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্ত করা জরুরি। লক্ষণগুলো হলো: অস্বাভাবিক মলত্যাগ, মলে রক্ত বা শ্লেষ্মা, পেটব্যথা, পেট ফাঁপা ও ফোলাভাব।
ক্রোনস অ্যান্ড কোলাইটিস অস্ট্রেলিয়ার সিইও লিয়েন র্যাভেন বলেন, আইবিডি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ালে রোগ সনাক্তকরণ, সহায়তা ও চিকিৎসায় সুবিধা হবে।
নাটাশা বলেন, আগের তুলনায় আইবিডি নিয়ে সমাজে লজ্জা বা কুসংস্কার কিছুটা কমলেও, এখনো অনেক বেশি মানুষকে এ নিয়ে কথা বলতে হবে।
সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি শুনতে অডিও প্লেয়ারে ক্লিক করুন।
এসবিএস বাংলা এখন অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত দক্ষিণ এশীয় সকল জনগোষ্ঠীর জন্য এসবিএস সাউথ এশিয়ান চ্যানেলের অংশ।
এসবিএস বাংলা লাইভ শুনুন প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় এসবিএস সাউথ এশিয়ান-এ, ডিজিটাল রেডিওতে, কিংবা, আপনার টেলিভিশনের ৩০৫ নম্বর চ্যানেলে। এছাড়া, এসবিএস অডিও অ্যাপ-এ কিংবা আমাদের ওয়েবসাইটে। ভিজিট করুন www.sbs.com.au/bangla
আর, এসবিএস বাংলার পডকাস্ট এবং ভিডিওগুলো ইউটিউবেও পাবেন। ইউটিউবে সাবসক্রাইব করুন এসবিএস সাউথ এশিয়ান চ্যানেল। উপভোগ করুন দক্ষিণ এশীয় ১০টি ভাষায় নানা অনুষ্ঠান। আরও রয়েছে ইংরেজি ভাষায় এসবিএস স্পাইস