জেসুইট সোশ্যাল সার্ভিসেস প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখা গেছে যেসব পুরুষরা এসব ছকে বাধা ধারণার সাথে দৃঢ়ভাবে একমত হয়েছেন তাদের মহিলাদের প্রতি সহিংস বা প্রতিকূল মনোভাব পোষণ করার সম্ভাবনা বেশি। এমনকি তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা আরও খারাপ।
কুস্তিগীর কেভিন ভন এরিখের চরিত্রে জ্যাক এফ্রন অভিনয় করেছেন আয়ন ক্ল সিনেমায়। এটি হলিউডের বাস্তব জীবনের ঘটনা, এরিখের পরিবার ১৯৮০-এর দশকে কুস্তিতে আধিপত্য বিস্তার করেছিল।
এই সিনেমার লক্ষণীয় বিষয় হল এখানে পুরুষের চিত্রায়ন করা হয়েছে বলিষ্ঠ, বিশালদেহি কিংবা অনমনীয় - এমন উপলব্ধি থেকে।
পুরুষ হিসেবে নিজেকে ক্ষমতাবান বা শক্তিশালী ভাবার অর্থ কী সে সম্পর্কে দীর্ঘকাল ধরে চলমান থাকা উপলব্ধিগুলো নিয়ে আলোচনা আছে আধুনিক সমাজে। এবং অস্ট্রেলিয়ার সমাজও তার বাইরে না।
বলিষ্ঠ, বিশালদেহি কিংবা অনমনীয় - এই উপলব্ধিগুলিই এ মাসে জেসুইট সোশ্যাল সার্ভিসেস প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণার বিষয় হিসেবে এসেছে, যেখানে পুরুষত্বের প্রতি পুরুষদের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে।
সমীক্ষায় অংশ নেয়া পুরুষদের ১৯টি বিবৃতি থেকে প্রতিক্রিয়া জানাতে বলা হয়েছে যাকে "ম্যান বক্স" বলা হচ্ছে।
মাইকেল ফ্লাড, কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজির গবেষক যিনি রিপোর্টের জন্য কাজ করেছেন, তিনি "ম্যান বক্স" কথাটির ব্যাখ্যা করেন।
তিনি বলেন, "ম্যান বক্স হল একজন পুরুষ হওয়ার বিষয়ে ঐতিহ্যগত বা ছকে বাধা প্রত্যাশাকে বোঝায়। এই প্রত্যাশাটি হলো যে বালক এবং পুরুষদের সবসময় কঠোর, আক্রমনাত্মক, ঝুঁকি গ্রহণকারী, বিষমকামী, আবেগ প্রকাশ করতে অপারগ এবং প্রভাবশালী হতে হবে।"
গবেষকরা একটি অনলাইন সমীক্ষা এবং ফোকাস গ্রুপ ব্যবহার করে অস্ট্রেলিয়া জুড়ে ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সী ৩,৫০০ জনেরও বেশি পুরুষের উপর জরিপ করেছেন।
তারা দেখেছেন যে ৩৬ শতাংশ পুরুষ 'ম্যান বক্স' নিয়মগুলি অনুসরণ করার জন্য সামাজিক চাপ অনুভব করেছেন।
২৪ শতাংশ পুরুষ ব্যক্তিগতভাবে এই চাপ মেনে তা অনুসরণ করার জন্য একমত হয়েছেন, যার অর্থ চারজনের মধ্যে তিনজন সেটা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
একই সমীক্ষা করা হয়েছিল ২০১৮ এবং ২০২০ সালে।
তবে মাইকেল ফ্লাড বলেন যে আগের রিপোর্টের তুলনায় কিছু ভাল এবং কিছু খারাপ ফল এসেছে।
সমীক্ষা থেকে দেখা যায় যে ৩১ থেকে ৪৫ বছর বয়সী ২২ শতাংশ পুরুষ এবং ১১ শতাংশ অল্পবয়সী বালকেরা মনে করে সম্মান পাওয়ার প্রয়োজনে সহিংস হওয়া যেতে পারে।
এবং যথাক্রমে তাদের ২৪ শতাংশ এবং ২০ শতাংশ বিশ্বাস করেন যে একজন পুরুষের তার বিয়ে বা সম্পর্কের বিষয়ে নিজের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
এবং সমস্ত পুরুষদের মধ্যে ৩৫ শতাংশ একমত যে একজন "প্রকৃত পুরুষের" যতগুলো সম্ভব যৌন সঙ্গী থাকতে পারে।
এ বিষয়ে আবার মাইকেল ফ্লাড বলেন, "দুঃসংবাদের বিষয়টি হল যে অল্পবয়সী পুরুষরা নির্মম হওয়া, এবং নারী-পুরুষ লিঙ্গ বিচার করে পুরুষত্বের মডেলটিকে এখনো সমর্থন করে যা পাঁচ বছরে খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি।"
গবেষণায় পুরুষদের এই বিশ্বাস এবং আচরণের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কও পাওয়া গেছে।
যেসব পুরুষরা সবচেয়ে বেশি দৃঢ়ভাবে 'ম্যান বক্স' নিয়মের সাথে একমত, তাদের পার্টনারদের সাথে যৌন সহিংসতা করার সম্ভাবনা তাদের আট গুণ বেশি, এবং শারীরিকভাবে সহিংস হওয়ার সম্ভাবনা পাঁচগুণ বেশি, যারা বিবৃতির সাথে পুরোপুরি একমত ছিলেন না তাদের তুলনায়।
এমনকি তাদের আত্মহত্যার চিন্তাভাবনাও আট গুণ বেশি এবং মদ্যপানের সম্ভাবনা দ্বিগুণ।
চেয়ার অফ রেসপেক্ট ভিক্টোরিয়া কেট ফিটজ-গিবন বলেছেন যে ফলাফলগুলি থেকে দেখা যায় ক্ষতিকারক স্টেরিওটাইপ বা ছকে বাধা চিন্তা এবং সহিংসতার মধ্যে একটি সম্পর্ক আছে।
ফিলিপ রিপার হচ্ছে 'নো টু ভায়োলেন্স'-এর প্রধান নির্বাহী; তার সংগঠন পারিবারিক সহিংসতা অবলম্বনকারী পুরুষদের সাথে কাজ করে।
তিনি বলছেন, "পারিবারিক সহিংসতা নারীর প্রতি অসম্মান দিয়ে শুরু হয় এবং তার সাথে পুরুষ এবং পুরুষত্বের ধারণার কি সম্পর্ক তা নিয়ে এই গবেষণাটির অনেক বিষয় পরিষ্কার হয়েছে আমাদের সামনে।
এই প্রতিবেদনে সহিংসতা প্রতিরোধের কৌশল বিকাশে নীতি পরিবর্তন এবং পুরুষত্ব নিয়ে সুস্থ ধারণা জাগ্রত করতে কমিউনিটির মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো সহ চারটি বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে।
এসবিএস নিউজকে দেওয়া এক বিবৃতিতে, সমাজসেবা মন্ত্রী আমান্ডা রিশওয়ার্থ বলেছেন:"বালকদের তাদের সমবয়সী এবং নিজেদের মধ্যে সুস্থ, সম্মানজনক সম্পর্ক বজায় রাখা এবং তাদেরকে ইতিবাচক রোল মডেলের দীক্ষা দেয়া সহিংসতার চক্রের অবসানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।"
তিনি বলেন, নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধে জাতীয় পরিকল্পনার প্রথম কর্মপরিকল্পনার আওতায় সরকার বিভিন্ন ধরনের পাইলট কার্যক্রমে বিনিয়োগ করছে।
আলবানিজি সরকারও তিন বছরের জন্য ৩.৫ মিলিয়ন ডলারের একটি ট্রায়াল কর্সূচির ঘোষণা করেছে ক্ষতিকারক জেন্ডার স্টিরিওটাইপগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করতে যেখানে অনলাইনে তরুণ বয়সী ছেলেদের লক্ষ্য করে ছড়ানো হয়।
সিডনির আইনজীবী নাভ সিং বলেছেন যে সময়ের সাথে সাথে পুরুষত্ব সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তিত হয়েছে, বিশেষ করে তার তিন কন্যার জন্মের পর।
তবে তিনি স্বীকার করেন যে তার এখনও এই বিষয়ে আরো কাজ করতে হবে, তিনি এখন জানেন একজন পুরুষ হওয়ার অর্থ কী।
পুরো প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।
এসবিএস রেডিও সম্প্রচার-সূচী হালনাগাদ করেছে, এখন থেকে প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার, বিকাল ৩টায়, এসবিএস পপদেশীতে আমাদের অনুষ্ঠান শুনুন, লাইভ।
কিংবা, পুরনো সময়সূচীতেও আপনি আমাদের অনুষ্ঠান শোনা চালিয়ে যেতে পারেন। প্রতি সোম ও শনিবার, সন্ধ্যা ৬টায়, এসবিএস-২ তে।
আরও দেখুন

অস্ট্রেলিয়ায় পুরুষরা ১০ বছর বেশি বাঁচে










