এসবিএস বাংলার কলকাতা প্রতিনিধি পার্থ মুখোপাধ্যায়ের পাঠানো খবরে
প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর সোয়া তিনটে নাগাদ কলকাতা লাগোয়া শালিমার স্টেশন থেকে ছাড়ে আপ করমণ্ডল এক্সপ্রেস। তার চার ঘণ্টার মধ্যে ওড়িশার বালেশ্বরের বাহানগা বাজারের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ২৩ কামরার এই ট্রেনটি।
স্থানীয় সূত্রে খবর, করমণ্ডল এক্সপ্রেস প্রথমে পিছন থেকে ধাক্কা মারে একটি মালগাড়িতে। এর ফলে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের প্রথম তিনটি কামরা বাদে সব ক’টি কামরাই লাইন থেকে ছিটকে পড়ে।
দুর্ঘটনার অভিঘাত এতটাই বেশি ছিল যে, করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনটি মালগাড়ির উপর উঠে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে পাশের উল্টোদিকের লাইন দিয়ে হাওড়াগামী যশবন্তপুর এক্সপ্রেস আসছিল।
সেই ট্রেনটি করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ছিটকে পড়া কামরার উপর দিয়ে চলে যায়। এতে লাইন থেকে ছিটকে যায় যশবন্তপুর এক্সপ্রেসেরও তিন থেকে চারটি কামরা।
এই রেল দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের অনেক যাত্রী রয়েছেন। এর জেরে হাওড়া থেকে দক্ষিণ ভারতগামী সমস্ত ট্রেন বাতিল করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ওড়িশাগামী ট্রেনও চালানো যাচ্ছে না।
রেলের মুখপাত্র অমিতাভ শর্মা জানিয়েছেন, বাহানোগা বাজার স্টেশনের কাছে দুর্ঘটনায় অভিঘাত এত বেশি ছিল যে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের বেশ কয়েকটি কামরা একে ওপরের ওপর উঠে যায়। দুমড়ে গেছে ইঞ্জিন লাগোয়া অন্তত ছয়টি কামরা।
আর, করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন সামনের মালগাড়ির ওপর উঠে যায়। দুর্ঘটনার জেরে প্রচণ্ড শব্দ শুনে ছুটে আসেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তারাই প্রথম দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেন দুটির কামরাগুলো থেকে বের করে আনতে থাকেন একের পর এক রক্তাক্ত দেহ।
রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়েছেন, ভুবনেশ্বর, কলকাতা থেকে উদ্ধারকারী দল আনা হয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, রাজ্য সরকারের উদ্ধারকারী দল এবং বায়ুসেনার দলকে কাজে লাগানো হয়েছে।
বালেশ্বরে নজিরবিহীন ট্রেন দুর্ঘটনায় শতাধিক যাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন দেশের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, রাষ্ট্রপতি দ্রুপদী মুর্মু, রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব থেকে ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক ট্রাজিক এই মৃত্যুর খবরে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
শনিবার সকালেই ঘটনাস্থলে যাচ্ছেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী। টুইটে প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, ওড়িশায় ট্রেন দুর্ঘটনায় আমি মর্মাহত। এই দুঃসময়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা রইল। আহতরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন।
তিনি জানিয়েছেন, রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। কী পরিস্থিতি, তার খোঁজখবর রাখছেন। তৎপরতার সঙ্গে উদ্ধারকাজ চলছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
করমণ্ডল দুর্ঘটনায় টুইট করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও। তিনি লিখেছেন, ওড়িশার বালেশ্বরে ট্রেন দুর্ঘটনার পর জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দল, এনডিআরএফ ইতোমধ্যেই দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। অন্যান্য দলও উদ্ধারকাজে যোগ দিয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইটে জানিয়েছেন, ওড়িশা সরকার এবং রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করতে এবং উদ্ধার অভিযানে সহায়তা করার জন্য ঘটনাস্থলে মন্ত্রী-সাংসদসহ ৫-৬ সদস্যের একটি দল পাঠানো হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ রাখছেন। ওড়িশা সরকার এবং রেলের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখছেন নিজেও। করমণ্ডলের যাত্রী এবং পরিজনদের সাহায্যের জন্য চালু হয়েছে ২৪ ঘণ্টার হেল্প লাইন নম্বর।
এদিকে স্থানীয় সূত্রে খবর, ভারতীয় সময় সন্ধ্যা ৭:০২ নাগাদ দুর্ঘটনা ঘটলেও সরকারি ও রেলের সাহায্য পৌঁছুতে পৌঁছুতে রাত ৯টা হয়ে যায়।
স্থানীয় মানুষজনই দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া কামরার দরজা-জানলা ভেঙে কিছু যাত্রীকে রক্তাক্ত অবস্থায় বের করে রেল লাইনের পাশে রেখে প্রাথমিক শুশ্রূষার চেষ্টা করেন।
রাত হয়ে যাওয়ায় এবং অন্ধকারের জন্য, দুর্ঘটনার পর পরই উদ্ধার অভিযান শুরু করা যায় নি। তারপর পুলিশ এসে গ্যাস কাটার নিয়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেস এবং যশবন্তপুর এক্সপ্রেসের বেলাইন হওয়া কামরাগুলো থেকে আটকে থাকা যাত্রীদের বের করার কাজ শুরু করে।
এরমধ্যেই খবর, দুর্ঘটনার তীব্রতায় বেশ কিছু যাত্রী প্রায় উড়ে গিয়ে পাশের খালে পড়েন। রাতে লাইট জ্বালিয়ে তাদের খোঁজ করা হচ্ছে। বাহানোগা বাজার থেকে রেলের রিলিফ টিম যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে তখন শুধুই যন্ত্রণার আর্তনাদ, আর হাহাকার।
কারুর মাথা কাটা গেছে, কারুর হাত নেই, কারুর পা বাদ পড়েছে। একটা পর্যায়ে চাদরে জড়িয়ে মৃতদেহ এম্বুলেন্সে তুলেছে স্থানীয় মানুষজন। ফলে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে মৃত্যুর সংখ্যাও।
রাতে করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবার এবং আহতদের জন্য ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়েছেন, ওড়িশায় মর্মান্তিক এই রেল দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবার পিছু ১০ লক্ষ ভারতীয় টাকা ক্ষতিপূরণ দেবে তাঁর মন্ত্রক। গুরুতর আহতদের দুই লক্ষ ভারতীয় টাকা করে সহায়তা দেওয়া হবে।
ঘটনাস্থলে পৌঁছচ্ছেন রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান অনিলকুমার লাহোটি।
এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা অডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত।












