আট মাস পর অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে এল আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা

অস্ট্রেলিয়ায় আবারও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আগমন শুরু হয়েছে। নর্দার্ন টেরিটোরিতে ইতোমধ্যে ৬৩ জন বিদেশী শিক্ষার্থী এসেছেন। অন্যান্য রাজ্যেও শিক্ষার্থীরা আসবেন।

The first cohort of international students have arrived in Darwin.

Source: Supplied

করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারীর কারণে গত মার্চ থেকে বিভিন্ন সীমান্ত বন্ধ থাকায় অস্ট্রেলিয়ায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আগমন ও পুনরাগমন বন্ধ ছিল। প্রায় ৮ মাস পর এই প্রথম নর্দার্ন টেরিটোরিতে একদল শিক্ষার্থী এসেছেন।

সিঙ্গাপুর থেকে একটি চার্টার্ড ফ্লাইটের মাধ্যমে চীন, হংকং, জাপান, ভিয়েতনাম এবং ইন্দোনেশিয়ার ৬৩ জন শিক্ষার্থী গত সোমবার সকালে ডারউইনে আসেন।

তাদেরকে প্রি-ডিপারচার হেলথ স্ক্রিনিং করতে হয়। এরপর তাদেরকে হাওয়ার্ড স্প্রিংস-এর সরকারি ফ্যাসিলিটিতে পাঠানো হয়েছে। সেখানে তারা দু’সপ্তাহের জন্য কোয়ারেন্টিন করবেন। এরপর তারা চার্লস ডারউইন ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে ফিরে যাবেন।
ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর সাইমন ম্যাডক্স বলেন, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদেরকে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে প্রথমে থেকে দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছে চার্লস ডারউইন ইউনিভার্সিটি।

এক বিবৃতিতে তিনি বলেন,

“ফ্লাইটটিতে পুরনো এবং শিক্ষার্থীদের মিশ্রণ ছিল। তারা আন্ডারগ্রাজুয়েট, পোস্টগ্রাজুয়েট এবং ভেট প্রোগ্রামগুলো, যেমন, ল, নার্সিং, আইটি, টিচিং, অ্যাকাউন্টিং এবং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থী।”

এদের আগমন একটি পাইলট প্রোগ্রামের অংশ বলে নিশ্চিত করেছে নর্দার্ন টেরিটোরি সরকার। এর ফলে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা ব্যাপকভাবে অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে আসবে বলে ভাবা হচ্ছে।

ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন মিনিস্টার নিকোল ম্যানসন সোমবার এক বিবৃতিতে বলেন,

“এই টেরিটোরির অর্থনীতিতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা অনেক বড় অবদান রাখে। প্রত্যেক শিক্ষার্থী প্রতিবছর গড়ে ৪০,৬৯৩ ডলার করে অবদান রাখে।”

“এই টেরিটোরিতে এবং অস্ট্রেলিয়ায়, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদেরকে ফিরে আসার পথ করে দিয়ে, আমরা অর্থনীতিতে বৈচিত্র আনতে, জনসংখ্যা এবং স্থানীয় কর্ম-সংস্থান বৃদ্ধিতে সহায়তা করছি।”
এসিটি এবং সাউথ অস্ট্রেলিয়াতেও স্বল্প-সংখ্যক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ফিরিয়ে আনার জন্য পাইলট প্রোগ্রাম ঘোষণা করা হয়েছে।

ভিক্টোরিয়ায় কোভিড-১৯ সংক্রমণের প্রাদূর্ভাব ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় এসিটিতে সেই পাইলট প্রোগ্রাম ধরে রাখা হয়। আর, সাউথ অস্ট্রেলিয়ায় কোভিড-১৯ এর সাম্প্রতিক প্রাদূর্ভাবের কারণে এই পরিকল্পনা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

নর্দার্ন টেরিটোরি সরকার বলছে, আগামী বছরে আরও শিক্ষার্থী আনার জন্য তারা কাজ করছে।

সরকারের একজন মুখপাত্র এএপি-কে বলেন, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের এই প্রথম দলটি হলো “হিমশৈলের চূড়া” মাত্র।

মুখপাত্র এটা নিশ্চিত করেন যে, ফেডারাল সরকারের সঙ্গে কোয়ারেন্টিন সামর্থ্য দ্বিগুণ করার চুক্তি অনুসারে, হাওয়ার্ড স্প্রিংস-এর কোয়ারেন্টিন ফ্যাসিলিটিতে প্রতি সপ্তাহে ৫০০ জনের জন্য ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

এই চুক্তির ফলে বিদেশে আটকে পড়া অস্ট্রেলিয়ানরাও অধিক সংখ্যায় দেশে ফিরতে পারবেন।
ফেডারাল সরকার বারবার জোর দিয়ে বলছে যে, দেশে ফেরত আসা অস্ট্রেলিয়ানদেরকে কোয়ারেন্টিনের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে রাজ্যগুলোর সঙ্গে ফেডারাল সরকারের মতানৈক্য ও কলহও হয়েছে।

গত সপ্তাহে নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রিমিয়ার গ্লাডিস বেরেজিক্লিয়ান একটি পরিকল্পনা ঘোষণা করেন যে, শিক্ষার্থী এবং অভিবাসীদের জন্য প্রতি সপ্তাহে ১০০০টি পর্যন্ত কোয়ারেন্টিন প্লেস বরাদ্দ করা হবে। এভাবে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা হবে।

ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশন এই পরিকল্পনাটি সমর্থন করেছে। এর চিফ একজিকিউটিভ ফিল হানিউড এসবিএস নিউজ-কে বলেন, এর ফলে এই খাতে উপকার হবে।

হোটেল কোয়ারেন্টিন সামর্থ্য বৃদ্ধি করার জন্য ফেডারাল সরকার যেন রাজ্যগুলোকে প্রভাবিত করে সেজন্য ফেডারাল সরকারের উপরে চাপ বাড়ছে। গত শুক্রবার পর্যন্ত বিদেশে আটকে পড়া ৩৬,০০০ এরও বেশি অস্ট্রেলিয়ান দেশে ফিরতে চান বলে জানা গেছে।
সোমবার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অস্ট্রেলিয়ায় আগমন সম্পর্কে ফাইন্যান্স অ্যান্ড ট্রেড মিনিস্টার সাইমন বার্মিংহ্যামকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, দেশে ফিরে আসা অস্ট্রেলিয়ানরা অগ্রাধিকার পাবেন।

তিনি বলেন,

“অন্যান্য রাজ্যগুলো পাইলট প্রোগ্রাম চালানোর চেষ্টা করেছিল কিন্তু সামনে অগ্রসর হতে পারে নি। কারণ, আমরা অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে বলেছি যে, ফেরত আসা অস্ট্রেলিয়ানদেরকে অবশ্যই অগ্রাধিকার দিতে হবে।”

“সেসব ফেরত আসা অস্ট্রেলিয়ানের জন্য আমরা হোটেল কোয়ারেন্টিনের সুযোগ বৃদ্ধি করতে সমর্থ হয়েছি। হাওয়ার্ড স্প্রিংস-এ শত শত স্থান আমরা চালু করতে পেরেছি।”
Acting Foreign Affairs Minister Simon Birmingham.
Acting Foreign Affairs Minister Simon Birmingham. Source: SBS News
মিস্টার বার্মিংহ্যাম বলেন, অন্যান্য রাজ্যও তাদের সামর্থ্য বৃদ্ধি করেছে এবং আমরা “বর্তমানে প্রায় ৫,৬০০ জন গ্রহণ করতে পারি”।

এই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে আগামী সপ্তাহে ভিক্টোরিয়া যখন এতে যোগ দিবে। তিনি বলেন, তখন এই সংখ্যা ৬,৭০০ তে উন্নীত হবে।

ফেডারাল সরকারের পক্ষ থেকে গত বুধবার জানানো হয় যে, অস্ট্রেলিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গত বছর শুধুমাত্র বিদেশী শিক্ষার্থীরাই ১০ বিলিয়ন ডলার যুগিয়েছে।

কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারীর আগে এক হিসেবে দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক ফিজ-এর পরিমাণ হলো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পুরো উপার্জনের প্রায় তিন ভাগের এক ভাগের কাছাকাছি; সর্বমোট ৩৬.৫ বিলিয়ন ডলার।

করোনাভাইরাসের এই বৈশ্বিক মহামারীর কারণে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা দু’ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। যারা অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করছেন তারা আর্থিক সংগ্রামে নিপতিত হয়েছেন। আর যারা অস্ট্রেলিয়ার বাইরে আছেন, সীমান্ত বন্ধ হওয়ার কারণে তারা অস্ট্রেলিয়ায় আসতে পারছেন না এবং পড়াশোনা সম্পন্ন করতে পারছেন না।

With additional reporting by AAP.

Follow SBS Bangla on FACEBOOK.


Share

Published

By Emma Brancatisano
Presented by Sikder Taher Ahmad

Share this with family and friends


Follow SBS Bangla

Download our apps
SBS Audio
SBS On Demand

Listen to our podcasts
Independent news and stories connecting you to life in Australia and Bangla-speaking Australians.
Ease into the English language and Australian culture. We make learning English convenient, fun and practical.
Get the latest with our exclusive in-language podcasts on your favourite podcast apps.

Watch on SBS
SBS Bangla News

SBS Bangla News

Watch it onDemand
আট মাস পর অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে এল আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা | SBS Bangla