প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের বাইরে ইসরায়েলি সেনারা গুলি চালিয়েছে, যেখানে অন্তত ৪৬ জন গাজাবাসী নিহত হয়েছে—এই নিয়ে মে মাসের শেষ দিক থেকে বেসরকারিভাবে পরিচালিত একটি সংস্থা ত্রাণ বিতরণ শুরু করার পর ত্রাণকেন্দ্রের বাইরে নিহতের সংখ্যা দাঁড়াল ৪১০ জনে।
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ১২ দিনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর একটি ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি এখনো পর্যন্ত টিকে আছে।
এটি ২০ মাসের যুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত গাজার ফিলিস্তিনিদের জন্য কিছুটা আশার আলো জাগিয়েছে।
দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে আবু সালমান আল-বুরেইম বলেন, “এই কষ্টের পরিমাণ ও ব্যাপ্তি ভাষায় বর্ণনা করা যায় না।”
ক্ষুধার্ত অবস্থায় প্রতিদিনই প্রাণঘাতী হামলা চালানো হচ্ছে—ফলে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধের পর গাজায় মৃতের সংখ্যা এখন ৫৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
স্থানীয় চিকিৎসক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গাজায় ত্রাণ নিতে গিয়ে নতুন করে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে অন্তত ৪৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি বলেছে, এসব হামলার দুটি ঘটনা ঘটে — একটি কেন্দ্রীয় গাজায়, আরেকটি দক্ষিণে।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বলেছে, তারা তাদের সেনাদের গুলিতে হতাহতের ঘটনাগুলোর তদন্ত করছে, বিশেষ করে সেই ঘটনার, যেখানে একদল মানুষ নেটজারিম করিডোরের কাছে সৈন্যদের দিকে এগিয়ে আসে বলে দাবি করা হচ্ছে।
এই ঘটনায় বেঁচে যাওয়া ১৯ বছর বয়সী আবদাল্লাহ আল-নাজ্জার এখন আল-শিফা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
হাসপাতালটির প্রধান হাসান আল-শায়ের জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় তাদের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট চরমভাবে ব্যস্ত।
এদিকে জাতিসংঘ বলছে, গত এক মাসে—মানে মে মাসের শেষ থেকে—গাজায় ত্রাণ নেওয়ার সময় নিহত মানুষের সংখ্যা এখন দাঁড়িয়েছে ৪৫৬।
এইসব ঘটনা ঘটেছে চারটি বিতরণ কেন্দ্রের বাইরে, যেগুলো পরিচালনা করছে গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন বা জি-এইচ-এফ। এই সংস্থা মার্কিন নিরাপত্তা ঠিকাদারদের মাধ্যমে কাজ করে এবং এটি ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে পরিচালিত হচ্ছে।
এই জি-এইচ-এফ বর্তমানে জাতিসংঘের পরিবর্তে গাজায় প্রধান ত্রাণ সরবরাহকারী হিসেবে কাজ করছে।
এই চারটি ত্রাণকেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে ইসরায়েলি সামরিক অঞ্চলে, যেখানে স্বাধীন গণমাধ্যমের প্রবেশ নিষেধ।
এক বিবৃতিতে জি-এইচ-এফ বলেছে, তারা তাদের ত্রাণকেন্দ্রের আশপাশে কোনো সহিংস ঘটনার খবর পায়নি। তাদের দাবি, তাদের কেন্দ্রটি নেটজারিম করিডোর থেকে কয়েক কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থার প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেন, গাজায় প্রায় ২০ লাখ মানুষ বর্তমানে অনাহারের মুখে।
তিনি বলেন, জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থার ত্রাণ প্রবেশে বাধা দেওয়ার যে কৌশল ইসরায়েল নিচ্ছে, তা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র হামাসের বিরুদ্ধে ত্রাণ চুরি করার অভিযোগ করলেও, তারা কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি।
জাতিসংঘ বলেছে, হামাসের দ্বারা ত্রাণ আত্মসাতের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক নজির নেই এবং তারা ত্রাণের যথাযথ বিতরণ নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রেখেছে।
জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফের বৈশ্বিক মুখপাত্র জেমস এলডার বলেন, শিশুদের ওপর প্রভাব ভয়াবহ। কেবল মে মাসেই গাজায় পুষ্টিহীনতার শিকার হয়েছে পাঁচ হাজারের বেশি শিশু।
এবং তিনি বলেন, গাজার শিশুদের জন্য আরেকটি নতুন বিপদ তৈরি হচ্ছে।
ইসরায়েলের সেনাপ্রধান বলেছেন, ইরানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি স্থাপনের পর তাদের মনোযোগ আবার গাজায় ফিরবে।
প্রধান সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়ায়াল জামির এক বিবৃতিতে বলেন, তাদের মূল লক্ষ্য এখনো একই—সব জিম্মিদের মুক্ত করা এবং হামাসকে ধ্বংস করা।
অন্যদিকে, জাতিসংঘ কর্মকর্তা লাজারিনি ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, এই শান্তি গাজাতেও সম্প্রসারিত হওয়া উচিত।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে ১২০০ জনকে হত্যা করে এবং প্রায় ২৫০ জনকে অপহরণ করে।
তাদের মধ্যে অনেককে পরবর্তী দুটি যুদ্ধবিরতির সময় মুক্তি দেওয়া হয়। তবে এখনো প্রায় ৫০ জন জিম্মি গাজায় আটক রয়েছেন।
সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও প্লেয়ারে ক্লিক করুন।
এসবিএস বাংলা এখন অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত দক্ষিণ এশীয় সকল জনগোষ্ঠীর জন্য এসবিএস সাউথ এশিয়ান চ্যানেলের অংশ।
এসবিএস বাংলা লাইভ শুনুন প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় এসবিএস সাউথ এশিয়ান-এ, ডিজিটাল রেডিওতে, কিংবা, আপনার টেলিভিশনের ৩০৫ নম্বর চ্যানেলে। এছাড়া, এসবিএস অডিও অ্যাপ-এ কিংবা আমাদের ওয়েবসাইটে। ভিজিট করুন www.sbs.com.au/bangla
আর, এসবিএস বাংলার পডকাস্ট এবং ভিডিওগুলো ইউটিউবেও পাবেন। ইউটিউবে সাবসক্রাইব করুন এসবিএস সাউথ এশিয়ান চ্যানেল। উপভোগ করুন দক্ষিণ এশীয় ১০টি ভাষায় নানা অনুষ্ঠান। আরও রয়েছে ইংরেজি ভাষায় এসবিএস স্পাইস