নির্মীয়মাণ পাঁচ তলা বাড়িটির আশপাশে বেশ কিছু ঝুপড়ি ছিল। সেগুলির উপর ভেঙে পড়ে বহুতলটি। রাতেই খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন এলাকার বিধায়ক তথা মেয়র ফিরহাদ হাকিম। ছিলেন দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু। মেয়র জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত ১৫ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে নয় জনের মৃত্যু হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসার পরেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
মেয়র, দমকলমন্ত্রী ছাড়াও নগরপাল বিনীত গয়াল এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরা ঘটনাস্থলে রয়েছেন। এখনও উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এবং দমকল। কিন্তু চার ফুট চওড়া রাস্তার পাশে কী করে বহুতল নির্মাণ করা হলো, কোন উত্তর নেই খোদ মুখ্যমন্ত্রী থেকে পুরমন্ত্রী বা মেয়রের কাছেও।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, গার্ডেনরিচ থানার অন্তর্গত ওই এলাকায় বেশ কিছু দিন ধরে বহুতলটিতে নির্মাণ কাজ চলছিল। রাত ১২টা নাগাদ বিকট শব্দ করে সেটি পাশের একটি টালির বাড়ির উপর হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর রাস্তা বেশ সংকীর্ণ হওয়ায় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এবং দমকলের পৌঁছুতে বেশ কিছুটা সময় লেগে যায়; যা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
READ MORE

৪০টি শুকতারা!
এই ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এলাকাবাসীদের মধ্যে।আশপাশের বাড়ি এবং বহুতল থেকে বাসিন্দারা রাস্তায় নেমে আসেন। এই দুর্ঘটনায় ভেঙে পড়া বহুতলটি সংলগ্ন অপর একটি বহুতল ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝুপড়ি ঘরগুলিতে মোট কত জন ছিলেন তা নিশ্চিত করে জানা যায় নি এখনও। গ্যাস কাটারের সাহায্যে কংক্রিটের চাঁই কেটে চলেছে উদ্ধারকাজ। উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছেন স্থানীয়রাও।
একের পর এক মৃতদেহ, বুকফাটা কান্না, হাহাকার, চোখে শূন্য দৃষ্টি, বাঁচার আর্তি। সোমবার সারাদিন ধরে এই দৃশ্যই ধরে পড়েছে বহুতল নির্মাণ বিপর্যস্ত গার্ডেনরিচ জুড়ে। ভোরের আলো ফুটতেই দুর্ঘটনার বীভৎস চেহারা প্রকাশ্যে এসেছে, তাতে শুধু ভয়াবহতা আর হাহাকার। চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে লাশ। কেউ স্বজন হারিয়ে কাঁদছেন, কারও চোখেমুখে প্রিয়জনকে হারিয়ে শুধুই নিস্তব্ধতা। নির্মীয়মাণ বহুতল-সহ আশেপাশের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছে ভাঙা অংশ। ধ্বংসস্তূপ ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে আছে মানুষের দেহ। পাশে ছড়িয়ে আছে জামাকাপড়, ব্যাগপত্র। দেহের অধিকাংশই ভাঙা বহুতলের নীচে চাপা পড়ে রয়েছে। নির্মীয়মাণ বহুতলের ভাঙা অংশ ছিটকে পড়ে রয়েছে আশপাশে। পাশাপাশি আশেপাশের বাড়ির ছাদে উঠে দেখা হচ্ছে কোথাও কোনও মানুষ আটকে রয়েছে কিনা। কিংবা কোথাও কোনও সাধারণ মানুষ আধা জীবিত অবস্থায় বেঁচে রয়েছে নাকি। একইভাবে গার্ডেনরিচের ফতেহপুর ব্যানার্জি পাড়া লেনে পড়ে রয়েছে জামা-কাপড়, ঘরের আসবাবপত্র-সহ অন্যান্য ব্যবহৃত সামগ্ৰী। শুধু নেই সেগুলোর ব্যবহারকারীরা। ভয়াবহ দুর্ঘটনায় মিশিয়ে দিয়েছে সবকিছু।
খবর পেয়ে সকালেই মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়েই গার্ডেনরিচের দুর্ঘটনাস্থলে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিছু দিন আগে কপালে গভীর চোট পেয়েছেন তিনি। তাঁর কপাল এবং নাকে মোট চারটি সেলাই পড়েছে। চিকিৎসকেরা তাঁকে ১০ দিন বিশ্রামের পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু সোমবার সকালে দেখা গিয়েছে মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। গাড়ি থেকে নেমে সরু গলি দিয়ে বেশ খানিকটা হেঁটে ঘটনাস্থলে যান তিনি। ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে পোস্টও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। খুব সকালেই ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন তিনি।ঘোষণা করা হয়েছে ক্ষতিপূরণও। সোমবার সকালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ বিষয়েসোশ্যাল মিডিয়া এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, গার্ডেনরিচে নির্মীয়মাণ বহুতল ভেঙে পড়ে যে দুর্ঘটনা ঘটেছে, তাতে তিনি শোকাহত।
এর মধ্যেই গার্ডেনরিচে পাঁচ তলা বহুতল ভেঙে পড়ার ঘটনায় প্রমোটরকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন কলকাতার মেয়র তথা এলাকার বিধায়ক ফিরহাদ হাকিম। জানা যাচ্ছে, দুধ সাপ্লায়ার থেকে প্রোমোটার, রকেট গতিতে উত্থান গার্ডেনরিচকাণ্ডে ধৃত মহম্মদ ওয়াসিমের। নির্মীয়মাণ বেআইনি বহুতল ভেঙে সাত জনের মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া প্রোমোটার মহম্মদ ওয়াসিমের জীবন এমনই রঙিন। পাশাপাশি এই ঘটনায় কলকাতা পুরসভার অ্যাসিট্যান্ট, সাব-অ্যাসিট্যান্ট এবং এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারকে শোকজ করেছে পুরসভা। গার্ডেনরিচ থানার পুলিশ ধৃত প্রোমোটারের বিরুদ্ধে একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।
বলা হচ্ছে, যে জায়গায় বহুতলটি নির্মাণ হচ্ছিল সেখানে আগে পুকুর ছিল। সেই পুকুর ভরাটের অভিযোগও দায়ের হয়েছে। ধৃত প্রোমোটার থানায় জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়েছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার থেকে শুরু করে উচ্চপর্যায়ের পুলিশ আধিকারিকরা। পুলিশ আপাতত জানতে পেরেছে, এই ভবনটির দোতলা পর্যন্ত অনুমোদন ছিল। কিন্তু দেখা গিয়েছে, বেআইনিভাবে আরও চারটি তলা নির্মাণ করছিলেন প্রোমোটার। পাশাপাশি গার্ডেনরিচের মতো ঘিঞ্জি এলাকায় একের পর এক অবৈধ নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। সেক্ষেত্রে পুরপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ তুলে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন কলকাতার বন্দর এলাকা গার্ডেনরিচের বাসিন্দারা।
এই অবস্থায় বিরোধীরা অভিযোগ করছেন, কলকাতাজুড়ে প্রোমোটিং হলে স্কোয়ারফিট অনুযায়ী টাকা কাটমানি নেন শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের কাউন্সিলররা। গার্ডেনরিচে নির্মীয়মাণ বহুতল ভবন বিপর্যয়ের পর তৃণমূল কংগ্রেস ও কলকাতা পুরসভাকে দায়ী করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তিনি বলেছেন তৃণমূল নেতারা প্রতি স্কোয়ার ফিটে টাকা নেয়। প্রতি স্কোয়ার ফিটে যদি টাকা নেন তাহলে মেরুদণ্ডে প্রতিবাদ করার জোর থাকার কথাও নয়। আজকে একটা ভেঙেছে, পরে আরো বাড়ি ভাঙবে। উত্তর কলকাতা, দক্ষিণ কলকাতা, চেতলা সব জায়গায় কাউন্সিলররা স্কোয়ার ফিটে টাকা নেয়। এরা হচ্ছে স্কোয়ার ফিট কাউন্সিলর।
সব মিলিয়ে গার্ডেনরিচের ঘটনায় রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে তোপ দাগতে শুরু করেছে বিরোধীরা। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সোশ্যাল মিডিয়া এক্সে লিখেছেন, গার্ডেনরিচের ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে পাঁচ তলা বাড়ি ভেঙে পড়েছে। এই এলাকাটি কলকাতার মেয়র এবং রাজ্যের মাননীয় পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের দুর্গ বলে পরিচিত। তাঁর কাছে অনেক ফোন আসছে। বিজেপি-র অভিযোগ স্থানীয় বিধায়ক এবং কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের প্রতেক্ষ মদতে ওই এলাকায় প্রচুর বেআইনি বাড়ি তৈরি হচ্ছে। তাই পুলিশ ও প্রশাসন সব জেনেও চোখ বুঁজে থাকে।
এসবিএস রেডিও সম্প্রচার-সূচী হালনাগাদ করেছে, এখন থেকে প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার, বিকাল ৩টায়, এসবিএস পপদেশীতে আমাদের অনুষ্ঠান শুনুন, লাইভ।
কিংবা, পুরনো সময়সূচীতেও আপনি আমাদের অনুষ্ঠান শোনা চালিয়ে যেতে পারেন। প্রতি সোম ও শনিবার, সন্ধ্যা ৬টায়, এসবিএস-২ এ।

৫ অক্টোবর থেকে নতুন চ্যানেলে ও নতুন সময়ে যাচ্ছে SBS Bangla Credit: SBS








