মিস্টার ট্রেন্টের তিন মেয়ে। নয় বছর বয়সী জমজ দুই মেয়ে ভিভিয়ান ও সানি এবং পাঁচ বছর বয়সী জেসমিন। কাজ শেষ করে দিনের শেষে ট্রেন্ট যখন ঘরে ফিরেন তখন মেয়েরা খুব খুশি হয়।
স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মেলবোর্নে বসবাস করেন মিস্টার ট্রেন্ট। জাপানি ভাষা চর্চা করে এবং জিমনাস্টিক্স-এর সাপ্তাহিক লেসন নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটে তাদের।
READ MORE

নতুন এসবিএস রেডিও অ্যাপ ডাউনলোড করুন
জমজ দুই মেয়ে সানি এবং ভিভিয়ানকে আলাদা করা যায় না। তবে, জন্মের পর তারা কিন্তু কিছুটা ভিন্নতা নিয়েই জীবন শুরু করেছে।
সানির বয়স যখন মাত্র ছয় সপ্তাহ, তখন তার লিভার বা যকৃতে একটি বিরল রোগ সনাক্ত করা হয়। তখন ট্রেন্ট ও তার স্ত্রী মিনাককে বলা হয়, সানীকে বাঁচাতে হলে অঙ্গ-প্রতিস্থাপন করতে হবে।
বিলিয়ারি আট্রেসিয়া হলো এক ধরনের বিরল রোগ যা শিশুদের যকৃতকে আক্রান্ত করে। এর ফলে এক বা একাধিক বাইল ডাক্ট বা পিত্তনালী অস্বাভাবিকভাবে সঙ্কোচিত কিংবা রুদ্ধ হয়ে যায় কিংবা এটা থাকেই না। ফলে যকৃত ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
অস্ট্রেলিয়ায় শিশুদের মাঝে লিভার ট্রান্সপ্লান্টের অন্যতম কারণ হলো এটি। সেজন্য, সানীর যখন দু’বছর বয়স ছিল তখন প্রথমবারের মতো তার লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করা হয়।
কিন্তু, খুব বেশি দিন অতিবাহিত না হতেই তার প্রথম ট্রান্সপ্লান্ট ব্যর্থ হয় এবং সানীকে আবারও অপেক্ষমান তালিকায় রাখা হয়।
তার তৃতীয় জন্মদিনের তিন সপ্তাহ আগে যথার্থ সুযোগটি আসে।
সানীর জন্য এটি সাফল্যের ঘটনা হলেও এখনও এমন অনেকেই আছে, যারা অপেক্ষায় দিন গুণছে। আর, করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারীর কারণে ট্রান্সপ্লান্টের সুযোগও আরও অনেক সীমিত হয়ে পড়েছে।
স্বাস্থ্য-সেবা বিভাগের সকল ক্ষেত্রেই কোভিড-রোগীদের চাপ ও কর্মী স্বল্পতার কুপ্রভাব পড়েছে।
লিভারপুল হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার স্পেশালিস্ট, ডাক্তার রামনাথন লক্ষণা বলেন, অর্গান ডোনেশনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে ইন্টারস্টেট বা আন্তঃরাজ্য ভ্রমণের ক্ষেত্রে আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলোর কারণে।
বিগত দুই বছরে অস্ট্রেলিয়ায় অর্গান ডোনেশনের হার কমেছে ২৫ শতাংশ। আর, অর্গান-গ্রহীতার সংখ্যাও কমেছে ১৯ শতাংশ।
অর্গান ট্রান্সপ্লান্ট অথরিটির ন্যাশনাল মেডিকেল ডাইরেক্টর, প্রফেসর হেলেন ওপডাম বলেন, এই ন্যাশনাল রেজিস্টারে যোগদান অর্থাৎ নিবন্ধনের জন্য এ রকম গুরুত্বপূর্ণ সময় এর আগে কখনও আসে নি।
অর্গান ডোনার হতে হলে, কোনো ব্যক্তিকে হাসপাতালে, সাধারণত, ভেন্টিলেটরে, মারা যেতে হবে।
হাসপাতালে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মাঝে মাত্র ২ শতাংশ লোকই এসব প্রয়োজনীয় শর্তাবলী পূরণ করতে পারে। এর মানে হলো, জীবনের শেষ মুহূর্তে অর্গান ডোনার হওয়ার চেয়ে এই জীবনে অর্গান-গ্রহীতা হওয়ার প্রয়োজনই বেশি দেখা যায়।
প্রিয়জন অর্গান-ট্রান্সপ্লান্ট ওয়েটিং লিস্টে থাকায় একই রকম অনুভুতি প্রকাশ করেন ২১ বছর বয়সী ইকরাম আহমেদ। তার ছোট ভাই হোসেনের কিডনি বিকল হয়ে গেছে। কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য চার বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে তাকে।
মেলবোর্নে বসবাসকারী এই পরিবারটির সদস্য সংখ্যা ১০ জন। একদিন খুব ভোরে একটি ফোন কল এসে তাদের প্রতীক্ষার অবসান ঘটায়।
নার্স হওয়ার জন্য পড়াশোনা করছেন ইকরাম। এখন তার ফাইনাল সেমিস্টার চলছে। তিনি বলেন, তার ভাইয়ের জীবন রক্ষার ক্ষেত্রে নার্সদের ভাল ভূমিকা আছে।
অর্গান ট্রান্সপ্লান্টের জন্য টেলিফোন কল পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন বর্তমানে প্রায় ২০০০ অস্ট্রেলিয়ান। অর্গান ডোনেশন রেজিস্টারে সাইন আপ বা নিবন্ধন করতে মাত্র মিনিট খানেক সময় লাগে। ১০০,০০০ অস্ট্রেলিয়ানকে সাইন আপ করানোর জন্য চেষ্টা করছে ডোনেট লাইফ।
ট্রেন্ট এবং ইকরামের জন্য, এই এক মিনিট সময়ই পুরো জীবনে পরিবর্তন নিয়ে আসার কারণ হয়।
পুরো প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।
READ MORE

এসবিএস বাংলা ফেসবুক নীতিমালা
এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত। রেডিও অনুষ্ঠান পরেও শুনতে পারবেন, ভিজিট করুন: এসবিএস বাংলা