‘হেলথ অব দ্য নেশন’ শিরোনামের এই শিল্প জরিপে প্রায় ২,৫০০ জন জিপির মতামত নেওয়া হয়েছে, যা আরও দেখিয়েছে যে, ক্রমবর্ধমান সংখ্যক সাধারণ চিকিৎসক এখন এমন অনেক রোগের চিকিৎসা করছেন, যা সাধারণত বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পরিচালিত হয়।
রোগীদের সঙ্গে দীর্ঘ এবং আরও জটিল পরামর্শের তাঁর অভিজ্ঞতাই এই বছরের শিল্প জরিপের কেন্দ্রবিন্দু — যা হেলথ অব দ্য নেশন রিপোর্ট নামে পরিচিত।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, অধিকাংশ জিপির গড় অ্যাপয়েন্টমেন্ট সময় এখন বেড়ে প্রায় ২০ মিনিটে (১৯.৭ মিনিট) পৌঁছেছে — যা প্রায় এক মিনিটের বৃদ্ধি।
রয়্যাল অস্ট্রেলিয়ান কলেজ অব জেনারেল প্র্যাকটিশনার্স-এর প্রেসিডেন্ট ড. মাইকেল রাইট বলেন, এই পরিবর্তন মোটেও বিস্ময়কর নয়।
ড. রম্যা রমন হলেন ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া-ভিত্তিক একজন সাধারণ চিকিৎসক বা জিপি এবং রয়্যাল অস্ট্রেলিয়ান কলেজ অব জেনারেল প্র্যাকটিশনার্স-এর ভাইস-প্রেসিডেন্ট।
ড. রমনের অভিজ্ঞতা অনুসারে, মানসিক স্বাস্থ্যই এই জটিলতার মূল কেন্দ্রবিন্দু।
ড. রাইট বলেন, ৭১ শতাংশ জিপি মানসিক স্বাস্থ্যকে রোগীদের উপস্থিতির প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন — সবচেয়ে সাধারণভাবে, উদ্বেগ ও বিষণ্ণতা। ২০১৭ সালে জরিপ শুরু হওয়ার পর থেকে এটি ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
একই সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী রোগ এবং বয়স্কদের সঙ্গে যুক্ত স্বাস্থ্য সমস্যার হারও বাড়ছে।
নেশনাল হেলথ রিপোর্টে বলা হয়েছে, চিকিৎসার খরচের কারণে ডাক্তার দেখাতে বিলম্ব করার মানুষদের সংখ্যা সামান্য বেড়েছে। তবে ভালো খবরও আছে — রিপোর্টে দেখা গেছে, জিপি খুঁজে পাওয়া আরও সহজ হয়ে গেছে।
যদিও মাত্র ১২ শতাংশ জিপি বলেছেন যে, তারা সব রোগীর খরচই বাল্ক-বিল করতে সক্ষম; রিপোর্টে দেখা গেছে আগের বছরের তুলনায় কম মানুষ তাদের ডাক্তার দেখার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করছে।
ডা. রমন বলেন, সেবা পাওয়া সহজ থাকা এখনও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি ভবিষ্যতে বড় কোনো স্বাস্থ্য সংকট এড়িয়ে যেতে সাহায্য করতে পারে।
কিন্তু জিপিদের জন্য এটি আরও জটিল হয়ে দাঁড়ায়; কারণ, তারা যেসব রোগের সম্মুখীন হচ্ছে, সেগুলো সাধারণত বিশেষজ্ঞরা চিকিৎসা করেন।
‘হেলথ অব দ্য নেশন’ রিপোর্টে বলা হয়েছে, ৮৬ শতাংশ জিপি এমন স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে কাজ করছেন, যা তারা সাধারণত বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে চিকিৎসা করানোর আশা করতেন। জিপিদের কাছে আসা রোগীদের মধ্যে কমন বা সাধারণ সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, ডায়াবেটিস এবং কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা।
ইন্ডিপেন্ডেন্ট এমপি সোফি স্ক্যাম্পস — যিনি স্বয়ং একজন প্রাক্তন জিপি — বলেছেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসার অভাবের কারণে জিপিদেরকে সেই চাহিদা পূরণ করতে হচ্ছে।
ড. স্ক্যাম্পস বলেন, এটি গুরুত্বপূর্ণ; কারণ, রোগ প্রতিরোধ এবং প্রাথমিক ব্যবস্থাপনা কখনও কখনও সবচেয়ে কার্যকর চিকিৎসা হতে পারে।
রয়্যাল অস্ট্রেলিয়ান কলেজ অব জেনারেল প্র্যাকটিশনার্স-এর প্রেসিডেন্ট ড. মাইকেল রাইট এই সমস্যাগুলোর সমাধানের জন্য একটি পরিচিত প্রস্তাবনা দিয়েছেন।
এই প্রতিবেদনের কিছু সমস্যার সমাধানের জন্য ইতোমধ্যেই পরিবর্তন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, বাল্ক-বিলিংয়ের জন্য অতিরিক্ত অর্থায়ন ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে, এবং মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসা পরিকল্পনার পর্যালোচনার জন্য মেডিকেয়ারের আইটেম নম্বরেও পরিবর্তন আনা হয়েছে।
এসবের পেছনে যে ধারণাটি ছিল হা হলো, জিপিদের পরামর্শকালীন কাজগুলো সহজ করা এবং প্রশাসনিক বোঝা কমানো—কিন্তু ড. রাইট বলেন, এটি এখনও যথেষ্ট নয়।
রিপোর্টে বৈষম্যের বিষয়টিকেও কাছ থেকে দেখা হয়েছে, যেখানে দেখা গেছে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জিপি গত বছরের মধ্যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় রোগীদের প্রতি বর্ণবৈষম্য দেখেছেন।
সাথে সাথে, প্রতি ১০ জনের মধ্যে ২ জন জিপি ব্যক্তিগতভাবে তাদের প্র্যাকটিসের এক জন রোগীর কাছ থেকে বর্ণবৈষম্যের সম্মুখীন হয়েছেন।
রয়্যাল অস্ট্রেলিয়ান কলেজ অব জেনারেল প্র্যাকটিশনার্স-এর অ্যাবোরিজিনাল অ্যান্ড টরে স্ট্রেইট আইল্যান্ডার হেলথ কাউন্সিল-এর চেয়ারপারসন ড. ক্যারেন নিকলস বলেন, বর্ণবৈষম্যের মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে।
জিপি কলেজ এই সমস্যার সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে অ্যাবোরিজিনাল ও টরে স্ট্রেইট আইল্যান্ডারদের জন্য একটি প্রশিক্ষণ কাঠামো চালু করা।
ড. রাইট বলেছেন, প্রতিষ্ঠানটি ভালোভাবে জানে যে, আরও অনেক কিছু করা প্রয়োজন।
ড. নিকলস এটি শুনে খুশি হয়েছেন।
সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।
এসবিএস বাংলা এখন অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত দক্ষিণ এশীয় সকল জনগোষ্ঠীর জন্য এসবিএস সাউথ এশিয়ান চ্যানেলের অংশ।
এসবিএস বাংলা লাইভ শুনুন প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় এসবিএস সাউথ এশিয়ান-এ, ডিজিটাল রেডিওতে, কিংবা, আপনার টেলিভিশনের ৩০৫ নম্বর চ্যানেলে। এছাড়া, এসবিএস অডিও অ্যাপ-এ কিংবা আমাদের ওয়েবসাইটে। ভিজিট করুন www.sbs.com.au/bangla.