এখন চলছে ‘রেকনসিলিয়েশন উইক’, এটি এমন একটি সময় যখন নন-ইন্ডিজেনাস মানুষদের অ্যাবরিজিনাল ও টরে স্ট্রেইট আইল্যান্ডার জনগণ, তাদের সমাজ এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা এবং শেখা উচিত।
আজ আমরা দেখব কীভাবে বহু-সাংস্কৃতিক সম্প্রদায়গুলোর জন্যে রেকনসিলিয়েশনে অংশ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
আলফ্রেড পেক যখন কিশোর, তখন তিনি ইন্দোনেশিয়া থেকে অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসন করেন।
তিনি বলেন, ২০১৭ সালে আমি ২৩ বছর বয়সী ছিলাম। আমি ছিলাম একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক এবং আমি আমার দৃষ্টিভঙ্গি সম্প্রসারণ করতে চাচ্ছিলাম। বিশেষ করে দেশজুড়ে আদিবাসী জনগণের দুঃখ-দুর্দশা ও তাদের গল্পগুলো নিয়ে আরও গভীরভাবে জানার চেষ্টা করছিলাম।
ওই সময়ে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার পার্থের হেয়ারিসন দ্বীপে বিক্ষোভ চলছিল। এই দ্বীপটির নুউংগাহ (Nyoongar) নাম হলো মাতাগারাপ (Matagarup)।
এর আগে এই দ্বীপে বিক্ষোভের কারণ ছিল WA সরকারের নুউংগাহ জনগণের উদ্দেশ্যে ১.৩ বিলিয়ন ডলারের নেটিভ টাইটেলের প্রস্তাব, যা প্রত্যাখ্যান করা হয়। এর পাশাপাশি ছিল দূরবর্তী অ্যাবরিজিনাল সম্প্রদায়গুলোর বন্ধ হওয়া এবং ট্র্যাডিশনাল ভূমির অধিকার নিয়ে প্রতিবাদ।
কিন্তু এবার প্রতিবাদ হয়েছিল এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে যে রাজ্য সরকার আন্তর্জাতিক শরণার্থীদের সহায়তা দিচ্ছে, অথচ WA-র গৃহহীনদের কোনও সাহায্য করছে না।
আলফ্রেড বলেন, আমি জানতাম না যে একজন অভিবাসী হিসেবে আমিও অস্ট্রেলিয়ার ভূমি কেড়ে নেওয়ার সুবিধাভোগী। আমি যখন অস্ট্রেলিয়ায় এলাম, তখন ‘অস্ট্রেলিয়ান হওয়া’র অর্থ হিসেবে এটা শেখানো হয়নি। ক্লিনটন প্রায়রের সাথে কাজ করার আগ পর্যন্ত আমি পুরোপুরি বুঝিনি এই সংগ্রামগুলোর গভীরতা কতটা। সেটা আমার জন্য ছিল এক মোড় ঘোরানো মুহূর্ত।
মাতাগারাপের বিক্ষোভকারীদের একজন ছিলেন ক্লিনটন প্রায়র, তখন তার বয়স ছিল ২৭ বছর।
তিনি বলেন, এক বছর পরে, ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার পুলিশ চেয়েছিল আমরা চলে যাই এবং বিক্ষোভ বন্ধ করি। কিন্তু আমি লড়াইটা ছেড়ে দিতে চাইনি। তখন আমি নিজেই বলেছিলাম, আমি পার্থ থেকে ক্যানবেরা পর্যন্ত হেঁটে যাব এবং আমি লড়াই ও প্রতিবাদ চালিয়ে যাব।
আলফ্রেড চেয়েছিলেন ক্লিনটনের ঘটনাটা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে, তাই সে তার সাথে যোগাযোগ করে। আলফ্রেড ক্লিনটনের অভিজ্ঞতা ডকুমেন্ট করতে করতে, তাদের মধ্যে একটা বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।
এক বছর পরে প্রায় ৬ হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে আলফ্রেডকে সঙ্গে নিয়ে ক্লিনটন ক্যানবেরায় পৌঁছায়। পরবর্তী কয়েক দিনে ক্লিনটন বিভিন্ন রাজনীতিক এবং অন্যান্য অধিকারকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তবে ক্যানবেরা থেকে তাকে ভাঙা হৃদয় নিয়েই ফিরে যেতে হয়।
ক্লিনটন বলেন,
রেকনসিলিয়েশনকে সমর্থন করা অত্যন্ত জরুরি।
অস্ট্রেলিয়ায় রেকনসিলিয়েশনের ইতিহাস শুরু হয় ১৯৩৮ সালে, যখন ২৬ জানুয়ারি প্রথম ‘Day of Mourning’ প্রতিবাদ করা হয়। ১৯৯৬ সালে অ্যাবরিজিনাল রেকনসিলিয়েশন কাউন্সিল প্রথম ন্যাশনাল রেকনসিলিয়েশন উইক চালু করে।
ইয়োরটা-ইয়োরটা (Yorta-Yorta) সম্প্রদায়ের ইয়ান হ্যাম বলেন, অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে এই প্রক্রিয়ার রূপ ভিন্ন রকম হয়ে থাকে।
অস্ট্রেলিয়ার Voice to Parliament গণভোটের পরে ইয়ান যখন অনেকগুলো বহু-সাংস্কৃতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে যুক্ত হন, তখন দুটি ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি দেখতে পান তিনি।
তিনি বলেন,
রেকনসিলিয়েশনের পথে এগোতে হলে আপনাকে অভিবাসী সম্প্রদায়গুলোর জটিলতাও বুঝতে হবে।
শঙ্কর কাশিনাথন, ন্যাশনাল সেন্টার ফর রেকনসিলিয়েশন, ট্রুথ অ্যান্ড জাস্টিস-এর অ্যাডজাঙ্ক্ট সিনিয়র রিসার্চ ফেলো। তামিল সম্প্রদায়ের একজন সদস্য হিসেবে তিনি শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধ থেকে পালিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় আসেন।
আলফ্রেডের মতো শঙ্করও মনে করেন, বহু-সাংস্কৃতিক সম্প্রদায়ের মানুষদের রেকনসিলিয়েশনে সম্পৃক্ত হওয়া অত্যন্ত জরুরি।
তিনি বলেন, রেকনসিলিয়েশনের মূল বিষয়টি হলো সহমর্মিতা... আমরা যখন এই অস্ট্রেলীয় গল্পের অংশ হয়ে যাই, তখন এর সঙ্গে দায়িত্বও আসে... এটা নিয়ে ভাবা জরুরি যে আমরা কীভাবে সম্পর্ক গড়ে তুলবো আগামীতে।
সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।