মূল বিষয়:
- ইন্ডিজেনাস ও নন-ইন্ডিজেনাস শিক্ষার্থীদের কার্যক্রমের মধ্যে যে ব্যবধান রয়েছে, তা কয়েক বছর ধরে কিছুটা কমেছে—তবুও তা এখনো বিদ্যমান।
- অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ফার্স্ট নেশনস-নেতৃত্বাধীন ও তাদের সংস্কৃতিভিত্তিক শিক্ষা উদ্যোগকে গ্রহণ করলে শুধু ইন্ডিজেনাস নয়, সকল শিশুর শিক্ষাগত ফলাফল উন্নত হতে পারে।
- একজন ইয়ার ১২ গ্র্যাজুয়েট তাঁর একাডেমিক সাফল্যের কৃতিত্ব দেন শিক্ষকদের সহায়তা এবং স্কুলের মাধ্যমে তাঁর সাংস্কৃতিক সংযোগের প্রতি।
শিক্ষা হল সম্ভাবনার এক পথ, কিন্তু বহুদিন ধরে সফলতার পথে নানান বাধার মুখে পড়েছে অস্ট্রেলিয়ার ইন্ডিজেনাস শিক্ষার্থীরা। যদিও অনেক চ্যালেঞ্জ এখনও রয়ে গেছে, তবে ইতিবাচক পরিবর্তনও দৃশ্যমান। এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি ইন্ডিজেনাস শিক্ষার্থী স্কুলের লেখাপড়া শেষ করছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ফার্স্ট নেশনস জ্ঞানকে সাদরে গ্রহণ করছে, আর কমিউনিটি-নেতৃত্বাধীন কর্মসূচিগুলো বাস্তবিক অনেক পরিবর্তন আনছে।
ইউরোপীয় উপনিবেশ স্থাপনের আগে ফার্স্ট নেশনস সংস্কৃতির নিজস্ব এক সমৃদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থা ছিল—যা ভূমি, জ্ঞান ও কমিউনিটির সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত।
সেই ঐতিহ্য আজও আমাদের জন্য মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি বহন করে।
তবুও শিক্ষাক্ষেত্রে আজও অসমতা রয়ে গেছে। ইন্ডিজেনাস শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্কুলে অনুপস্থিতির হার বেশি, সাক্ষরতা ও গণনায় পারদর্শিতা কম, এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলকভাবে প্রতিনিধিত্ব কম। এর পেছনে রয়েছে ঐতিহাসিক বৈষম্য, আজও চলমান বর্ণবৈষম্য, সাংস্কৃতিক অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার অভাব, ও আর্থসামাজিক বৈষম্য—যা একে দীর্ঘস্থায়ী করে তুলেছে।
২০০৮ সালে অস্ট্রেলিয়ান সরকার ইন্ডিজেনাস জনগণের প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখপ্রকাশ করে—বিশেষত তাদের সন্তানদের পরিবার, কমিউনিটি ও নিজ ভূমি থেকে জোরপূর্বক আলাদা করে নেওয়ার জন্য।
এই ক্ষমাপ্রার্থনার অংশ হিসেবে, সরকার প্রতিশ্রুতি দেয় যে ইন্ডিজেনাস ও নন-ইন্ডিজেনাস অস্ট্রেলিয়ানদের মধ্যে জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে, বিশেষত শিক্ষায়, বিদ্যমান ব্যবধান দূর করার জন্য কাজ করবে।

Sharon Davis, CEO of NATSIEC Source: Supplied / Sharon Davis
তিনি বলেন, শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যবধান দূর করার বিষয়ে আলোচনা করতে গেলে, ইন্ডিজেনাস শিশুদের বিরুদ্ধে ইতিহাসজুড়ে চলা বৈষম্যের বাস্তবতা স্বীকার করাটা অত্যন্ত জরুরি।
তবে জাতীয় চুক্তি ‘ক্লোজিং দ্য গ্যাপ’ এর একটি মূল দিক হলো—অ্যাবরিজিনাল ও টরে স্ট্রেইট আইল্যান্ডার জনগণের অভিজ্ঞতাভিত্তিক অসমতা দূর করতে, সরকারের কাজ করার পদ্ধতিতে আমূল সংস্কার আনা। বিশেষ করে, ফার্স্ট নেশনস জনগণ ও কমিউনিটির সঙ্গে কিভাবে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করা যায়, সেটাই এই সংস্কারের কেন্দ্রবিন্দু।
READ MORE

‘ক্লোজিং দ্য গ্যাপ’ কী?
শ্যারন ডেভিস ব্যাখ্যা করে বলেন, ইন্ডিজেনাস শিক্ষার ক্ষেত্রে সংস্কারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় যৌথ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং কমিউনিটি-নিয়ন্ত্রিত খাতকে শক্তিশালী করে তোলা। এসব উদ্যোগ ইন্ডিজেনাস সম্প্রদায়ের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও সাফল্যের পথ প্রসারিত করে।
ড. অ্যান্থনি ম্যাকনাইট একজন আওয়াবাকাল, গামেরয় ও ইউইন পুরুষ, যিনি ইউনিভার্সিটি অব উলংগং-এর উলিয়ুঙ্গা ইন্ডিজেনাস সেন্টারে কাজ করছেন।
তিনি বহু বছর ধরে শিক্ষা পাঠক্রম, নীতি ও শিক্ষাচর্চায় অ্যাবরিজিনাল প্যাডাগজি—অর্থাৎ আদিবাসী শিক্ষাদর্শ—সংযুক্ত করার ওপর গবেষণা ও শিক্ষাদান করে আসছেন।
ড. ম্যাকনাইট মনে করেন, ইন্ডিজেনাস শিক্ষার প্রসঙ্গে Closing the Gap বা ব্যবধান ঘোচানোর অর্থ এবং দৃষ্টিভঙ্গি পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন রয়েছে।
শ্যারন ডেভিস বলেন,
কেবল সাক্ষরতার স্কোর বা স্কুলে উপস্থিতির মতো সূচক দিয়ে শিক্ষায় সাফল্য মাপলে বৃহত্তর চিত্রটি ধরা যায় না।
তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, শিক্ষার ফলাফলের মধ্যে যে ব্যবধান রয়েছে, তা তুলে ধরা এখনও গুরুত্বপূর্ণ।

Dr McKnight has spent years teaching and researching how to embed Aboriginal pedagogy in curriculum, policy, and practice. Source: Supplied / MichaelDavidGray
তিনি নিউ সাউথ ওয়েলসে এখন পর্যন্ত ইন্ডিজেনাস শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বড় ব্যাচের একজন, যারা সফলভাবে ইয়ার ১২ শেষ করেছে।
মিজ লেইন বলেন,
সহায়ক ও সহানুভূতিশীল এক শিক্ষার পরিবেশই তার এই অর্জনে মূল পরিবর্তন এনে দিয়েছে।
তাঁর সহায়ক নেটওয়ার্কে ছিলেন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা, ইন্ডিজেনাস শিক্ষক ও কর্মীরা, এবং ন্যাশনাল অ্যাবরিজিনাল স্পোর্টস করপোরেশন অস্ট্রেলিয়া (NASCA)-র প্রতিনিধিরা। এই সংগঠনটি নিউ সাউথ ওয়েলস ও নর্দার্ন টেরিটরি জুড়ে কর্মসূচি চালায়, যার লক্ষ্য হলো ইন্ডিজেনাস শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের সঙ্গে সংযোগ ঘটানো এবং স্কুলে তাঁদের সাফল্য নিশ্চিত করা।

Retori Lane (L) with her mother, Jenadel Lane. Source: Supplied / Retori Lane
তিনি ছিলেন তাঁদের পরিবারে প্রথম ব্যক্তি যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়েছিলেন। তিনি ইন্ডিজেনাস শিক্ষায় প্রজন্মগত পরিবর্তনের কথা বলেন—কীভাবে এক সময় যেটা ছিল অসম্ভব, আজ তা অর্জনের পথ খুলে দিচ্ছে নতুন প্রজন্মের জন্য।
রেটোরি এখন ইন্ডিজেনাস স্টাডিজ মেজর নিয়ে ব্যাচেলর অব আর্টস অধ্যয়ন করবেন।
তিনি বলেন, নিজের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি অনুপ্রাণিত হয়েছেন—তাঁর কমিউনিটির অন্য তরুণদের শিক্ষা-অধিকারে শক্তিশালী করে তুলতে এবং তাদের সাংস্কৃতিক শেকড়ের সঙ্গে পুনরায় সংযোগ ঘটাতে তিনি সাহায্য করতে চান।
এটা মনে রাখা জরুরি যে, ইন্ডিজেনাস দৃষ্টিভঙ্গি থেকে শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যবধান ঘোচানোর অর্থ শুধু ফলাফল উন্নত করা নয়—এর অন্তর্নিহিত অর্থ আরও গভীর। এটি ফার্স্ট নেশনস জ্ঞানের মূল্যায়নের বিষয়, কমিউনিটিকে নেতৃত্বের ক্ষমতায়ন দেওয়ার বিষয়, এবং এমন একটি সংস্কৃতিকভাবে নিরাপদ পরিসর তৈরি করার বিষয়, যেখানে শিক্ষার্থীরা নিজস্ব পরিচয়ে বিকশিত হতে পারে।
এটি পরিচয়, গর্ব এবং উত্তর প্রজন্মকে তাদের সংস্কৃতির সঙ্গে সংযুক্ত রেখে—তাদের নিজের ইচ্ছানুযায়ী সফল হওয়ার পথ নিশ্চিত করার বিষয়ও বটে।
অস্ট্রেলিয়ায় আপনার নতুন জীবনে স্থায়ী হওয়ার বিষয়ে আরও মূল্যবান তথ্য এবং টিপসের জন্য ‘অস্ট্রেলিয়া সম্পর্কে জানুন’ পডকাস্ট অনুসরণ করুন।
আপনার কোনো প্রশ্ন বা নতুন কোনো বিষয় নিয়ে আমাদের পডকাস্টে শুনতে চাইলে australiaexplained@sbs.com.au -এ আমাদের ইমেল করুন।