নতুন প্রতিবেদন বলছে: অস্ট্রেলিয়ায় ইসলামোফোবিয়া 'ব্যাপক'

Federal Multicultural Affairs Minister Anne Aly Sept 12, 2025 – SBS .jpg

Federal Multicultural Affairs Minister Anne Aly Sept 12, 2025 Credit: SBS

অস্ট্রেলিয়ায় ইসলামোফোবিয়া মোকাবিলার জন্য সরকার-নিযুক্ত বিশেষ এনভয়ের প্রতিবেদন হস্তান্তরের পর, সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হচ্ছে। এই আহ্বান জানানো হয়েছে, ইসলামোফোবিয়া রেজিস্টার অস্ট্রেলিয়ার সাম্প্রতিক তথ্য প্রকাশের প্রেক্ষাপটে, যেখানে দেখা গেছে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকে ইসলামোফোবিক ঘটনার সংখ্যা বেড়েছে ৫৩০ শতাংশ।


ইসলামোফোবিয়া রেজিস্টার অস্ট্রেলিয়া সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, ইসলামোফোবিয়া এনভয়ের দেওয়া সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করতে এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্ক জোরালো করতে।

অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইসলামোফোবিয়া মোকাবিলা বিষয়ক বিশেষ এনভয় আফতাব মালিক গত সপ্তাহে তাঁর প্রতিবেদন সরকারকে হস্তান্তর করেন।

ইসলামোফোবিয়া রেজিস্টারের সহ-পরিচালক শরারা আতাই এই প্রতিবেদনকে স্বাগত জানিয়েছেন।
শরারা আতাই এসবিএস নিউজকে জানিয়েছেন, অস্ট্রেলিয়ার মুসলিম সম্প্রদায় এবং ফেডারেল সরকারের মধ্যে একটি ‘দুর্বল সম্পর্ক’ বিদ্যমান।

তিনি বলেন, মুসলিম সম্প্রদায় বিশ্বাস করে না যে তাদের উদ্বেগ ও সমস্যাগুলো সরকার যথাযথ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করেছে।

রেজিস্টার অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাস হামলার পর থেকে ইসলামোফোবিক ঘটনার সংখ্যা বেড়েছে ৫৩০ শতাংশ।

সরকারি কমিশনের মাধ্যমে প্রণীত আফতাব মালিকের এই প্রতিবেদনে একটি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা এবং ৫৪টি সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে, ইসলামোফোবিয়াকে অন্যান্য বৈষম্যের মতো একই ধরনের অধিকার, সুরক্ষা ও আইনি প্রতিকার প্রদান; সন্ত্রাসবিরোধী আইনগুলোর পর্যালোচনা; এবং অ্যান্টি-প্যালেস্টিনিয়ান ও অ্যান্টি-আরব বর্ণবাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান কমিশন প্রতিষ্ঠা।

মালিক বলেন, অস্ট্রেলিয়ার মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বৈষম্য বহুদিন ধরে চলে আসছে, তবে ২০২৩ সালের অক্টোবরে ঘটনার পর সংখ্যাগুলো ব্যাপকভাবে বেড়েছে।

তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক ঘটনাবলি প্রায়ই অস্ট্রেলিয়ার অভ্যন্তরে ইসলামোফোবিয়াকে উসকে দিতে পারে।
ইসলামোফোবিয়া রেজিস্টার অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড-ভিত্তিক নির্বাহী পরিচালক নোরা আমাথ বলেছেন, সাম্প্রতিক অ্যান্টি-মাইগ্র্যান্ট সমাবেশের প্রেক্ষাপটে মুসলিমদের টার্গেট করা হচ্ছে এবং তারা আতঙ্কে আছেন।

এক বিবৃতিতে, অস্ট্রেলিয়ার নৃতাত্ত্বিক সম্প্রদায়ের কাউন্সিল (Federation of Ethnic Communities’ Councils of Australia - FECCA) সাম্প্রতিক ইসলামোফোবিক সহিংসতা ও হুমকি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

অভিবাসী পুনর্বাসন এবং বহুসাংস্কৃতিক সেবা প্রদানকারী অন্যতম প্রধান সংস্থা এসএসআইও একই ধরনের উদ্বেগ জানিয়েছে এবং ইসলামোফোবিয়ার ঘটনাগুলোর নিন্দা জানিয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে দেখা গেছে, ২০২৩ সালের পর থেকে পক্ষপাতমূলক আচরণ ও হুমকি সম্পর্কিত ঘটনা বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং প্রতি তিনজন অস্ট্রেলিয়ানের একজন মুসলিমদের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন।

প্রতিবেদন আরও বলছে, ইসলামোফোবিয়ার শিকারদের মধ্যে মুসলিম নারী ও কিশোরীরা তিন-চতুর্থাংশ, শারীরিক হামলার শিকারদের মধ্যে তিন-পঞ্চমাংশ নারী এবং থুতু নিক্ষেপের সব ঘটনার শিকার ছিলেন মুসলিম নারী।

ফেডারেল বহুসংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী অ্যান এলি এই প্রতিবেদনের প্রকাশকে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

অ্যান এলি বলেন, অস্ট্রেলিয়ার মুসলিম সম্প্রদায়কে ভয়ের মধ্যে বসবাস করার কথা নয়।

রবিবার এবিসি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী রিচার্ড মার্লেস বলেন, তাঁর দল সুপারিশগুলো যাচাই করতে কিছুটা সময় নেবে।

তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, তিনি কি মালিকের সেই সুপারিশকে সমর্থন করেন, যেখানে বর্ণবাদী মন্তব্যের জন্য সংসদ সদস্যদের শাস্তি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

মালিক প্রস্তাব করেছিলেন, সংসদ সদস্যরা ঘৃণাসূচক বক্তব্য বা আচরণ করলে তার বিরুদ্ধে স্পষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, যার মধ্যে থাকতে পারে সাময়িকভাবে দলীয় সভা থেকে বরখাস্ত করা কিংবা দলীয় বিভিন্ন পদ থেকে সাময়িকভাবে সরিয়ে দেওয়া।

মার্লেস সরাসরি সমর্থন জানাননি, তবে বলেছেন সংসদে বর্ণবাদ কোনোভাবেই অনুমোদিত নয়।

অস্ট্রেলিয়ার মুসলিম সম্প্রদায় বলছে, ঘৃণা প্রতিরোধে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
লেবানিজ ইসলামিক সোসাইটির মহাপরিচালক খালেদ আলামেদিন এসবিএস আরবিকে বলেন, ৭ অক্টোবরের ঘটনার পর থেকে তারা লক্ষ্য করেছেন যে ফিলিস্তিন প্রশ্নকে কৃত্রিমভাবে একটি ধর্মীয় ইস্যুতে পরিণত করা হচ্ছে, যা কেবল ইসলামের মধ্যে সীমিত করে দেখানো হচ্ছে।

লেবানিজ মুসলিম অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক জামেল খায়ের, যিনি এই প্রতিবেদনের জন্য পরামর্শ দিয়েছেন, তিনি বলেছেন, তিনি চান সরকার নথির ৫৪টি সুপারিশ বাস্তবায়ন করুক— যার মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার সন্ত্রাসবিরোধী নীতির পুনর্বিবেচনাও রয়েছে।

তিনি বলেছেন, এখন সরকারের দায়িত্ব হলো এই সুপারিশগুলোকে সম্মান জানানো এবং গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা।

তবে গত ১২ সেপ্টেম্বর মালিকের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজি এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন যে, মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক ঘটনাগুলোকে অন্য সম্প্রদায়ের মতো একই গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইমামস কাউন্সিলের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা বিলাল রউফ বলেছেন, এ প্রতিবেদন ধর্মীয় সুরক্ষার দাবিকে আরও শক্তিশালী করেছে, যা কাউন্সিল দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে।

তবে অস্ট্রেলিয়ান মুসলিম অ্যাডভোকেসি নেটওয়ার্ক সরকারের প্রতি সমালোচনামূলক অবস্থান নিয়েছে।

তারা বলেছে, ইসলামোফোবিয়া ও অ্যান্টি-সেমিটিজম নিয়ে এনভয় নিয়োগের জন্য সরকারের যুক্তি তারা মানে না, তবে প্রতিবেদনের সুপারিশগুলোকে স্বাগত জানায়।

তাদের বক্তব্য, সব সম্প্রদায়ই ঘৃণার বিরুদ্ধে সমান সুরক্ষা পাওয়ার যোগ্য।

সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।

এসবিএস বাংলার আরও পডকাস্ট শুনতে ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইট

আপনি কি জানেন, এসবিএস বাংলা অনুষ্ঠান এখন ইউটিউব এবং এসবিএস অন ডিমান্ডে পাওয়া যাচ্ছে?

এসবিএস বাংলা এখন অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত দক্ষিণ এশীয় সকল জনগোষ্ঠীর জন্য এসবিএস সাউথ এশিয়ান চ্যানেলের অংশ।

এসবিএস বাংলা লাইভ শুনুন প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় এসবিএস সাউথ এশিয়ান-এ, ডিজিটাল রেডিওতে, কিংবা, আপনার টেলিভিশনের ৩০৫ নম্বর চ্যানেলে। এছাড়া, এসবিএস অডিও অ্যাপ-এ কিংবা আমাদের ওয়েবসাইটে। ভিজিট করুন www.sbs.com.au/bangla.

আর, এসবিএস বাংলার পডকাস্ট এবং ভিডিওগুলো ইউটিউবেও পাবেন। ইউটিউবে সাবসক্রাইব করুন এসবিএস সাউথ এশিয়ান চ্যানেল। উপভোগ করুন দক্ষিণ এশীয় ১০টি ভাষায় নানা অনুষ্ঠান। আরও রয়েছে ইংরেজি ভাষায় এসবিএস স্পাইস

Share
Follow SBS Bangla

Download our apps
SBS Audio
SBS On Demand

Listen to our podcasts
Independent news and stories connecting you to life in Australia and Bangla-speaking Australians.
Ease into the English language and Australian culture. We make learning English convenient, fun and practical.
Get the latest with our exclusive in-language podcasts on your favourite podcast apps.

Watch on SBS
SBS Bangla News

SBS Bangla News

Watch it onDemand