গুরুত্বপূর্ণ দিক
- হে-ফিভার (মৌসুমী অ্যালার্জিক রাইনাইটিস) তখনই ঘটে, যখন রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা পরাগরেণুর কারণে প্রতিক্রিয়া দেখায়—বিশেষত ঘাসের পরাগ—যা নাক ও চোখে জ্বালা সৃষ্টি করে।
- হাঁপানি দেখা দিতে পারে যখন পরাগের ক্ষুদ্র রেণু ফুসফুসে প্রবেশ করে, যার ফলে কাশি, শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।
- প্রতি চারজন অস্ট্রেলিয়ানের মধ্যে একজন হে-ফিভারে আক্রান্ত হন, আর প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ হাঁপানিতে ভোগেন—যার ফলে শ্বাসতন্ত্র-সংক্রান্ত অ্যালার্জি দেশটির সবচেয়ে প্রচলিত অ্যালার্জি সমস্যায় পরিণত হয়েছে।
- উপসর্গ উপশম ও প্রতিরোধের জন্য চিকিৎসা ও ওষুধের বিষয়ে জিপি ডাক্তার এবং ফার্মাসিস্টরা পরামর্শ দিতে পারেন।
অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ দিকের অঞ্চলগুলোয় ঠান্ডা ও সিক্ত শীতকালের পর বসন্ত নিয়ে আসে উষ্ণ দিন, পরিষ্কার আকাশ, গাছপালায় নতুন ফুল ফোটে—সেই সঙ্গে প্রচুর পরাগরেণু ভেসে বেড়ায় বাতাসে।
যদি এই সময়ে কারো চোখ চুলকায়, নাক দিয়ে পানি পড়ে, বা অবিরাম হাঁচি আসে—তাহলেই বুঝতে হবে যে সেটি হলো হে-ফিভার, বা মৌসুমী অ্যালার্জিক রাইনাইটিস। আর পরাগরেণু যদি ফুসফুসে পৌঁছে যায়, তবে তা অ্যালার্জি-জনিত হাঁপানির উদ্রেক ঘটাতে পারে।
এই দুটি হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ায় সবচেয়ে প্রচলিত অ্যালার্জিজনিত স্বাস্থ্যসমস্যা—আর খুব সম্ভব, আপনি বা আপনার কাছের কেউ এতে আক্রান্ত।
এ-বিষয়ে কথা বলেছেন অ্যাডজাঙ্কট অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর জয় লি, যিনি শ্বাসতন্ত্র ও অ্যালার্জি সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং ন্যাশনাল অ্যালার্জি সেন্টার অব এক্সেলেন্সের রেসপিরেটরি অ্যালার্জি স্ট্রিম-এর সহ-সভাপতি। তিনি বলেন, ঘাসের পরাগরেণু অ্যালার্জিক রাইনাইটিসের পেছনে প্রধান একটি কারণ, যা হে-ফিভার এবং মৌসুমী অ্যালার্জিক হাঁপানি নামেও পরিচিত।
প্রফেসর লি বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় অ্যালার্জিক রাইনাইটিস বা হে-ফিভারের অন্যতম প্রধান কারণ হলো রাইগ্রাসের পরাগরেণু—বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ভিক্টোরিয়া, নিউ সাউথ ওয়েলস এবং অস্ট্রেলিয়ান ক্যাপিটাল টেরিটরি।

Dr Duncan Mackinnon, Micaela Diaz, Professor Joy Lee.
মিকায়েলা ডিয়াজ ব্রিসবেন-এ বসবাস করেন। বহু বছর ধরেই হে-ফিভার ও বসন্তকালের অন্যান্য অ্যালার্জির কারণে তিনি প্রতি বছর এগুলোর নানা উপসর্গে ভোগেন।

A mother and son are sitting together in a living room. She is helping him take his puffer because he suffers from asthma. Credit: FatCamera/Getty Images
হে-ফিভার ও বসন্তকালীন অ্যালার্জি নিয়ে যদি আপনার উদ্বেগ থাকে, তবে পরামর্শ পাওয়ার সর্বোত্তম জায়গা হলো চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিতরা—যেমন আপনার স্থানীয় জেনারেল প্র্যাকটিশনার বা ফার্মাসিস্ট।
ড. ডানকান ম্যাকিনন নিউ সাউথ ওয়েলসের আঞ্চলিক এলাকায় একজন জি-পি হিসেবে কাজ করেন। তিনি জানান, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালে তার ক্লিনিকের কাজের প্রায় এক-চতুর্থাংশ জুড়ে থাকে শ্বাসতন্ত্রজনিত সমস্যার চিকিৎসা—যার মধ্যে হে-ফিভার ও অ্যালার্জি-প্রসূত হাঁপানি অন্যতম।
স্থানীয় ফার্মেসিতে সহজলভ্য ওষুধ—যেমন অ্যান্টিহিস্টামিন এবং নাসাল স্প্রে—হে-ফিভারের অনেক সাধারণ উপসর্গ উপশমে সহায়ক হতে পারে।
তবে ড. ম্যাকিনন জোর দিয়ে বলেন, যে উপসর্গগুলো দেখা দেয় সেগুলো উপশমের পাশাপাশি কীভাবে উপসর্গগুলোর উদ্ভব কমানো যায় বা প্রতিরোধ করা যায়, সেটিও ভেবে দেখা সমান গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিরোধমূলক চিকিৎসার ক্ষেত্রে, আপনার জি-পি কখনও কখনও কর্টিকোস্টেরয়েড ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দিতে পারেন, যা অ্যালার্জিজনিত প্রদাহের প্রতিক্রিয়া কমাতে সহায়তা করে—যেমন হে-ফিভারের জন্য ইনট্রানাসাল কর্টিকোস্টেরয়েড বা অ্যালার্জি-প্রসূত হাঁপানির জন্য ইনহেলড কর্টিকোস্টেরয়েড।

Close-up of a car windshield covered in pollen and flower petals - the accumulation of allergens during the spring season. Source: iStockphoto / Manuel Milan/Getty Images
প্রফেসর লি বলেন, বাতাসে পরাগের মাত্রা প্রতিদিনই বদলাতে পারে। অনলাইনে এবং মোবাইল ফোন অ্যাপের মাধ্যমে পরাগরেণুর উপস্থিতি ও পূর্বাভাস সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া যায়।
ড. ম্যাকিনন বলেন, বসন্তকালীন অ্যালার্জির মৌসুমে কিছু নির্দিষ্ট আবহাওয়াজনিত ঘটনার প্রতিও সতর্ক থাকা প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে ‘থান্ডারস্টর্ম অ্যাজমা’। এটি দেখা যায় সাধারণত যেসব দিনে বাতাসে পরাগরেণুর ব্যাপক উপস্থিতির সাথে সাথে বজ্রঝড় হয়।
এ ধরনের আবহাওয়াজনিত পরিস্থিতিতে যাঁরা অ্যালার্জি ও হাঁপানিতে ভুগতে পারেন, তাঁদের জন্য ড. ম্যাকিনন পরামর্শ দেন বাড়ির জানালা ও দরজা বন্ধ রাখার এবং বাইরে যাওয়া এড়িয়ে চলতে—অথবা বাইরে যদি যেতেই হয় সেক্ষেত্রে সানগ্লাস ও ফেসমাস্ক ব্যবহার করার কথা বিবেচনা করতে।
প্রফেসর লি বলেন,
বসন্তকালীন অ্যালার্জির জন্য প্রস্তুত থাকার মানে হলো এটি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যে সঠিক একটি পরিকল্পনা থাকা।
এ সম্পর্কে জরুরী ও দরকারী তথ্য পেতে দেখুন:
- AusPollen – The Australian Pollen Allergen Partnership
- Pollen Forecast – Australian Aeroallergen Network
- Melbourne Pollen Count
- Sydney Pollen Count
- Darwin Pollen Count
- Perth Pollen Count
- National Allergy Centre of Excellence
- Asthma Australia
- Allergy & Anaphylaxis Australia
- Australasian Society of Clinical Immunology and Allergy
বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই পর্বে প্রদত্ত তথ্যাবলী সাধারণ তথ্য হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। এগুলো কোনো সুনির্দিষ্ট বা ব্যক্তিগত পরামর্শ নয়। যদি হে-ফিভার, হাঁপানি বা অ্যালার্জির উপসর্গ নিয়ে আপনার উদ্বেগ থাকে, তবে আপনার পরিস্থিতির সঙ্গে সম্পর্কিত সঠিক তথ্যের জন্য অবশ্যই চিকিৎসক বা ফার্মাসিস্টের পরামর্শ নিন। জরুরি অবস্থায় সঙ্গে সঙ্গে ট্রিপল জিরো (০০০) নম্বরে কল করুন।
অস্ট্রেলিয়ায় আপনার নতুন জীবনে স্থায়ী হওয়ার বিষয়ে আরও মূল্যবান তথ্য এবং টিপসের জন্য ‘অস্ট্রেলিয়া সম্পর্কে জানুন’ পডকাস্ট অনুসরণ করুন।
আপনার কোনো প্রশ্ন বা নতুন কোনো বিষয় নিয়ে আমাদের পডকাস্টে শুনতে চাইলে australiaexplained@sbs.com.au -এ আমাদের ইমেল করুন।