মূল বক্তব্যসমূহ:
- প্রচারমাধ্যম দীর্ঘদিন ধরে ইন্ডিজেনাস কণ্ঠগুলোকে একদিকে বর্জন করেছে, অন্যদিকে তাদের নিয়ে গড়ে তুলেছে নানা স্টেরিওটাইপ; ফলে জনমনে যে চিত্র গড়ে উঠেছে, তা ইন্ডিজেনাস দৃষ্টিভঙ্গিকে উপেক্ষা করে তৈরি।
- ইন্ডিজেনাস মিডিয়া শুধু এই কণ্ঠগুলোকে শক্তি জোগায় না, তারা সংস্কৃতি সংরক্ষণ করে এবং প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানায়।
- টিকটক এবং ইনস্টাগ্রাম এর মতো সামাজিক মাধ্যম ইন্ডিজেনাস গল্প বলার এক নতুন ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে।
“ছোটবেলায় দেখতাম মিডিয়াতে আমাদের ‘মব’-এর (সম্প্রদায়ের) কোনও উল্লেখই প্রায় ছিল না। আর এখন? আমরা একের পর এক বাধা ভেঙে চলেছি, আর নিজেদের 'Blak excellence'–এর জয়গান গাইছি—বিশ্বমঞ্চে ইন্ডিজেনাস কণ্ঠস্বর প্রতিধ্বনিত হতে দেখা সত্যিই দারুণ।” বলেছেন লিয়ান জিলান্ডি ডলবি, যিনি তাঁর মায়ের দিক থেকে একজন গর্বিত নুংআর, ইয়ামাজি, নাগুজা, নুন্ডা নারী; আর বাবার দিক থেকে ইয়াউরু, গিজা এবং গুনিয়ান্দি জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি।
ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, অস্ট্রেলিয়ার প্রচারমাধ্যমে ইন্ডিজেনাস অস্ট্রেলীয়দের উপস্থাপনায় দীর্ঘদিন ধরে বড় ধরনের বিকৃতি ছিল। প্রথম দিককার সংবাদপত্র, রেডিও এবং টেলিভিশনে ইন্ডিজেনাস মানুষদের প্রায়শই খাটো করে বা ত্রুটিপূর্ণভাবে উপস্থাপন করা হতো, যা জনমনে গভীর প্রভাব ফেলেছে।
অ্যাডাম মানোভিচ একজন কাবি কাবি ও গোরেং গোরেং পুরুষ এবং ফার্স্ট নেশনস মিডিয়া অস্ট্রেলিয়া (FNMA)-এর কো-চেয়ার, তিনি এইসব উপস্থাপনার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে বলেন, “মিডিয়া মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি গঠনে বিশাল প্রভাব ফেলে—এই প্রভাবের শুরু ১৯০০-এর দশকের শুরুর দিককার সংবাদপত্র ও রেডিও যুগ থেকেই।“
এখনও মাত্র নয় শতাংশ ইন্ডিজেনাস অস্ট্রেলীয় মনে করেন যে, প্রচারমাধ্যম তাদের সম্প্রদায়ের ব্যাপারে ভারসাম্যপূর্ণ ধারণা তুলে ধরে।

Left: Tanja Hirvonen. Centre: Adam Manovic. Right: Leanne Djilandi Dolby ( Credit: SBS)
মি. মানোভিচ জোর দিয়ে বলেন,
ফার্স্ট নেশনস জনগণের নিজেদের গল্প নিজেরা বলার ক্ষমতা অর্জন করাটাই এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মূল চাবিকাঠি।
FNMA এবং NITV-এর মতো ইন্ডিজেনাস প্ল্যাটফর্মগুলো এই গল্প পুনরুদ্ধার ও ভুল ধারণা ভাঙতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। FNMA বর্তমানে অস্ট্রেলিয়াজুড়ে ৫০০-রও বেশি কর্মীকে সহায়তা দেয় এবং ফার্স্ট নেশনস জনগণকে মিডিয়া শিল্পে প্রবেশের প্রশিক্ষণও প্রদান করে।
২০০৭ সালে যাত্রা শুরু করা NITV, যা এখন SBS-এর অংশ, অ্যাবরিজিনাল ও টরে স্ট্রেইট আইল্যান্ডার জনগণের গল্প তাদের নিজস্ব কণ্ঠে বলার একটি শক্তিশালী মঞ্চ হিসেবে কাজ করছে।
মি. মানোভিচ চান, একটি ফার্স্ট নেশনস ব্রডকাস্টিং অ্যাক্ট প্রণয়ন হোক, যাতে এই ধরনের উদ্যোগগুলোর জন্য টেকসই অর্থায়ন আইনগতভাবে নিশ্চিত করা যায়।

First Nations hub of inner knowledge, traditional culture and lore.
প্রচারমাধ্যমে যেভাবে উপস্থাপনা হয়, তা ইন্ডিজেনাস অস্ট্রেলীয়দের আত্মপরিচয় ও আত্মমর্যাদাবোধ গঠনে বড় ভূমিকা রাখে। ইতিহাসে দেখা গেছে, যেসব বিকৃত উপস্থাপনা বারবার সামনে এসেছে, সেগুলো কেবল নেতিবাচক স্টেরিওটাইপই নয়, প্রাতিষ্ঠানিক বর্ণবাদের কাঠামোকেও আরও পোক্ত করেছে।
ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্ট তানিয়া হিরভোনেন হলেন একজন জারু ও বুনুবা নারী, তিনি ব্যাখ্যা করেন এসব বিকৃত বর্ণনা কী ধরনের মানসিক যন্ত্রণা মানুষের মনে তৈরি করতে পারে।
যখন মিডিয়া ক্ষতিকর স্টেরিওটাইপ ছড়ায় বা ভ্রান্ত তথ্য উপস্থাপন করে, তখন তা বৃহত্তর পরিসরে বর্ণবাদ ও বৈষম্যকে আরও জোরদার করে তোলে।
যারা ইতিমধ্যেই সংগ্রামের মধ্যে রয়েছেন, তাঁদের জন্য এ ধরনের উপস্থাপনা হতে পারে গভীরভাবে মানসিক যন্ত্রণাদায়ক।

Social media has proven to have the power that enables First Nations people to challenge misinformation. Credit: davidf/Getty Images
মিডিয়াতে নিজের মতো কাউকে দেখতে পাওয়া কতটা শক্তি জোগাতে পারে, সে ব্যাপারে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেন লিয়ান ডলবি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এখন ইন্ডিজেনাস অস্ট্রেলীয়দের জন্য হয়ে উঠেছে এক শক্তিশালী মঞ্চ—যেখানে তারা নিজেদের গল্প সরাসরি বিশ্বজুড়ে দর্শকদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারছেন, কোনোরকম প্রথাগত গেটকিপারের অনুমতির অপেক্ষা না করেই। টিকটক, ইনস্টাগ্রাম এবং ফেসবুকের মতো প্ল্যাটফর্মগুলি নির্মাতাদের সুযোগ দিচ্ছে ভুল তথ্যের বিরুদ্ধচারণ করতে, পাশাপাশি সাংস্কৃতিক বিনিময়কে উৎসাহিত করতে সক্ষম করেছে।
#IndigenousX-এর মতো হ্যাশট্যাগ ইতিমধ্যেই রূপ নিয়েছে সচেতনতামূলক প্রচার ও শিক্ষার কেন্দ্রবিন্দুতে। অ্যাডাম মানোভিচ বলেন,
সামাজিক মাধ্যম এই গল্প বলার ক্ষমতাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।
উপস্থাপনায় উন্নতি আনতে হলে মূলধারার মিডিয়া ও কমিউনিটি-নিয়ন্ত্রিত ইন্ডিজেনাস প্ল্যাটফর্ম—উভয় ক্ষেত্রেই প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন। এর মানে শুধু ইন্ডিজেনাস দৃষ্টিভঙ্গির জন্য জায়গা করে দেওয়া নয়, বরং গল্প নির্বাচনের ধরন, উপস্থাপনার পদ্ধতি এবং প্রচারের কাঠামোতেও দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন আনা জরুরি।
অ্যাডাম মানোভিচ চান, ফার্স্ট নেশনস ব্রডকাস্টিং অ্যাক্টের মতো একটি আইন প্রণীত হোক, যা FNMA ও NITV-এর মতো ইন্ডিজেনাস নেতৃত্বাধীন প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য টেকসই অর্থায়ন নিশ্চিত করবে।
তানিয়া হিরভোনেন আলোকপাত করেন মূলধারার মিডিয়া প্রতিষ্ঠানে সাংস্কৃতিকভাবে নিরাপদ অনুশীলনের প্রয়োজনীয়তার ওপর—যাতে প্রতিটি স্তরে ইন্ডিজেনাস প্রতিনিধি যুক্ত থাকেন এবং উপস্থাপনাগুলো হয় ন্যায্য ও সম্মানজনক।
লিয়ান ডলবি আহ্বান জানান, সব ধরনের মিডিয়াতে ইন্ডিজেনাস সাফল্যকে আরও বেশি করে উদযাপন করার।
মিডিয়ায় ইন্ডিজেনাস অস্ট্রেলিয়ানদের উপস্থাপনা ক্রমাগত বিকশিত হচ্ছে, তবে এটি এখনো একটি চলমান প্রক্রিয়া। NITV-এর মতো প্ল্যাটফর্ম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যেমন আশা জাগায় প্রামাণিক গল্প বলার মাধ্যমে, তেমনি মূলধারার সংবাদমাধ্যমকে শুধু প্রতীকী উপস্থিতির গণ্ডি পেরিয়ে সত্যিকার অর্থে অস্ট্রেলিয়ার বৈচিত্র্যের স্বরূপ প্রতিফলিত করতে হবে।
ফার্স্ট নেশনস প্রতিনিধিত্বকে ক্ষমতায়ন করা মানে শুধু ইতিহাসের পুনরুদ্ধার নয়—এটি অস্ট্রেলিয়ার সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটকে সমৃদ্ধ করে এবং সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে বোঝাপড়া ও সংযোগ আরও দৃঢ় করে তোলে। যেমনটি অ্যাডাম মানোভিচ বলেন,
ইন্ডিজেনাস অস্ট্রেলীয়রা মিডিয়া ও সংস্কৃতির জগতে যে ইতিবাচক অবদান রেখে চলেছেন, তা সকলের জন্য—গ্রহণ করার মতো এবং উদযাপন করার মতো।
অস্ট্রেলিয়ায় আপনার নতুন জীবনে স্থায়ী হওয়ার বিষয়ে আরও মূল্যবান তথ্য এবং টিপসের জন্য ‘অস্ট্রেলিয়া সম্পর্কে জানুন’ পডকাস্ট অনুসরণ করুন।
আপনার কোনো প্রশ্ন বা নতুন কোনো বিষয় নিয়ে আমাদের পডকাস্টে শুনতে চাইলে australiaexplained@sbs.com.au -এ আমাদের ইমেল করুন।