মূল বিষয়
- চুক্তি বা Treaty হলো সরকার এবং অ্যাবরিজিনাল এবং স্ট্রেইট আইল্যান্ডার জনগোষ্ঠীর মানুষদের মধ্যে একটি আনুষ্ঠানিক সমঝোতা।
- অনেক ফার্স্ট নেশনস জনগণের মতে, চুক্তি হলো ন্যায়বিচার, পারস্পরিক সম্মান ও ভবিষ্যতের উন্নত সম্পর্কের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
- একটি জাতীয় চুক্তি সমগ্র অস্ট্রেলিয়াজুড়ে অ্যাবরিজিনাল ও টরে স্ট্রেইট আইল্যান্ডার জনগোষ্ঠীর মানুষদের অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য দেশব্যাপী একক কাঠামো তৈরি করবে।
অস্ট্রেলিয়ায় একজন অভিবাসী হিসেবে আমরা জানি যে নতুন দেশে বসবাস করতে হলে সে-দেশের সংস্কৃতি ও প্রথাগুলোকে বোঝা ও সম্মান করা কতটা জরুরী।
অস্ট্রেলিয়া এক্সপ্লেইন্ড-এর এই পর্বে আলোচনা করা হবে—চুক্তি বা Treaty আসলে কী, কেন তা বহু অ্যাবরিজিনাল ও টরে স্ট্রেইট আইল্যান্ডার জনগোষ্ঠীর মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ, এবং বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন স্থানে এ নিয়ে কী কী কাজ হচ্ছে।
চুক্তি বা Treaty হলো এমন এক আনুষ্ঠানিক সমঝোতা, যা আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক। এটি বিভিন্ন গোষ্ঠী বা পক্ষের মধ্যে আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে গঠিত হতে পারে—যেমন, অ্যাবরিজিনাল ও টরে স্ট্রেইট আইল্যান্ডার জনগণ এবং অস্ট্রেলিয়ান সরকারের মধ্যে।
যখন ব্রিটিশরা প্রথম অ্যাবরিজিনাল ভূমিতে বসতি স্থাপন করে, তারা সেই ভূমিকে ঘোষণা করে ‘terra nullius’—অর্থাৎ, ‘এমন ভূমি যা কারও নয়’। ফলে, তারা অ্যাবরিজিনাল জনগোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে কোনও আলোচনার প্রয়োজন মনে করেনি। অনেক ইন্ডিজেনাস অস্ট্রেলিয়ান একে বলেন “অসমাপ্ত কাজ” বা unfinished business।
চুক্তির মূল ভিত্তি হলো সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি। তবে চুক্তি নানা রকম হতে পারে এবং বিভিন্ন বিষয় এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। এর মধ্যে ভূমি ও সম্পদ ভাগাভাগি, বা যৌথভাবে শাসনকাজ পরিচালনার মতো বিষয়ও থাকতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও নিউজিল্যান্ডের মতো দেশের বিপরীতে, অস্ট্রেলিয়ার এখনও ফার্স্ট নেশনস জনগণের সঙ্গে কোনও চুক্তি হয়নি।
ইন্ডিজেনাস দৃষ্টিকোণ থেকে চুক্তি মানে হলো অতীতের ঘটনাগুলোর স্বীকৃতি দেওয়া, অধিকার রক্ষা করা, এবং অ্যাবরিজিনাল ও টরে স্ট্রেইট আইল্যান্ডার জনগণ যেন তাদের জীবনে প্রভাব ফেলা সিদ্ধান্তগুলোতে প্রকৃত অংশগ্রহণ করতে পারে তা নিশ্চিত করা।

Protesters march from Parliament House to Flinders Street Station during the Treaty Before Voice Invasion Day Protest on January 26, 2023, in Melbourne, Australia. (Photo by Alexi J. Rosenfeld/Getty Images) Credit: Alexi J. Rosenfeld/Getty Images
তাহলে প্রশ্ন হলো, চুক্তি কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
অনেক অ্যাবরিজিনাল ও টরে স্ট্রেইট আইল্যান্ডার জনগণ বিশ্বাস করে, একটি চুক্তি হলো ন্যায়বিচার ও সম্মানের দিকে এগিয়ে যাওয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
চুক্তির সমর্থকদের মতে, এটি নানাভাবে বাস্তব পরিবর্তন আনতে পারে।
তাদের বিশ্বাস, চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে অ্যাবরিজিনাল ও টরে স্ট্রেইট আইল্যান্ডার জনগণকে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম জনগোষ্ঠী বা ফার্স্ট পিপল হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারে এবং দেশের ইতিহাস ও উপনিবেশ স্থাপনের আসল ইতিহাস তুলে ধরার সুযোগ তৈরি করতে পারে।
একটি চুক্তি সরকার ও স্থানীয় সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে ভূমি, জল, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আবাসন, কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে ন্যায্য অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতেও সাহায্য করতে পারে।
অনেক ফার্স্ট নেশনস জনগণ চুক্তিকে এমন এক উপায় হিসেবে দেখেন যা তাদের ভাষা, সংস্কৃতি ও পবিত্র স্থাপনাগুলোকে সংরক্ষণ ও শক্তিশালী করতে পারে—যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এই ঐতিহ্যগুলো টিকে থাকে।

(from left to right) Former Queensland Truth-Telling and Healing Inquiry chairperson Joshua Creamer, NSW Treaty Commissioner Naomi Moran and co-chair of the First Peoples' Assembly of Victoria Ngarra Murray. Credit: NITV / The Point
তাঁর বিশ্বাস, এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব নেওয়া উচিত স্থানীয় সম্প্রদায়গুলোকেই।

Independent Senator Lidia Thorpe during Question Time in the Senate chamber at Parliament House in Canberra. Source: AAP / MICK TSIKAS/AAPIMAGE
ভিক্টোরিয়ায় চুক্তি প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই বেশ এগিয়ে গেছে, এবং ২০২৫ সালের মধ্যে একটি রাজ্যব্যাপী চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার আশা করা হচ্ছে।
ফার্স্ট পিপলস অ্যাসেম্বলি অব ভিক্টোরিয়া নামে নির্বাচিত একটি সংস্থার মাধ্যমে ইন্ডিজেনাস অস্ট্রেলিয়ানরা এখন থেকে তাদের সম্পর্কিত আইন ও নীতি গঠনে স্থায়ীভাবে মত দেওয়ার সুযোগ পাবেন।
অন্যদিকে, কুইন্সল্যান্ড, নিউ সাউথ ওয়েলস, সাউথ অস্ট্রেলিয়া ও নর্দান টেরিটরিতে এই প্রক্রিয়া বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে।
কিছু সরকার কমিউনিটিগুলোর সঙ্গে পরামর্শ চালাচ্ছে, আবার কোনো কোনো সরকার এখনও পরবর্তী পদক্ষেপের পরিকল্পনা করছে।
একটি জাতীয় চুক্তি সমগ্র অস্ট্রেলিয়ার জন্য একক কাঠামো তৈরি করবে, অন্যদিকে রাজ্য ও টেরিটরি-ভিত্তিক চুক্তিগুলো স্থানীয় অগ্রাধিকার ও প্রতিটি সম্প্রদায়ের প্রয়োজনের দিকে নজর দেবে।
অনেক ইন্ডিজেনাস অধিকারকর্মীর মতে, অস্ট্রেলিয়ায় প্রকৃত ও দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তন আনতে হলে জাতীয় ও রাজ্য—উভয় স্তরের চুক্তিই প্রয়োজন।
কারণ প্রতিটি সম্প্রদায়ের নিজস্ব ইতিহাস ও প্রয়োজন ভিন্ন—তাই প্রতিটি চুক্তির রূপও হবে কিছুটা আলাদা।
এই পর্বে Living Black – The Case for a Treaty, টিভি অনুষ্ঠানের কিছু অডিও অংশ সংযুক্ত করা হয়েছে: যা প্রথম সম্প্রচার হয়েছিল জুলাই ২০২৫ সালে। পুরো পর্বটি আপনারা SBS On Demand-এ দেখতে পাবেন।
Stream free On Demand
The Case For A Treaty
episode • Living Black • News And Current Affairs • 34m
episode • Living Black • News And Current Affairs • 34m
সুতরাং, চুক্তি শুধুমাত্র আইনগত অর্থের বাইরে অন্যান্য সম্পর্ককেও বোঝায়—কীভাবে অস্ট্রেলিয়ার মানুষ, ইন্ডিজেনাস ও নন-ইন্ডিজেনাস উভয়ই, একসাথে বসবাস ও কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন।
অনেকের দৃষ্টিতে, এটি একটি ন্যায়সম্মত ও আরও সমন্বিত দেশের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পদক্ষেপ, যেখানে প্রত্যেক সম্প্রদায়ের ইতিহাস ও গল্পের জন্য স্থান থাকবে।
READ MORE

অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের ইতিকথা
অস্ট্রেলিয়ায় আপনার নতুন জীবনে স্থায়ী হওয়ার বিষয়ে আরও মূল্যবান তথ্য এবং টিপসের জন্য ‘অস্ট্রেলিয়া সম্পর্কে জানুন’ পডকাস্ট অনুসরণ করুন।
আপনার কোনো প্রশ্ন বা নতুন কোনো বিষয় নিয়ে আমাদের পডকাস্টে শুনতে চাইলে australiaexplained@sbs.com.au -এ আমাদের ইমেল করুন।