সিডনিতে টু-ই-এ তে ইনডিয়ান প্রোগ্রাম হিসেবে বাংলা অনুষ্ঠান শুরু হয় ১৯৭৬ সালে। ১৯৮৪ সালে এটি বন্ধ করা হয়, অর্থাৎ, তখন এটি বাংলা অনুষ্ঠান হিসেবে নতুন নামকরণ করা হয়।
মেলবোর্নে থ্রি-ই-এ থেকে এটি ১৯৯৪ সাল থেকে সম্প্রচার শুরু করা হয়। ন্যাশনাল সম্প্রচারও শুরু হয় ১৯৯৪ সাল থেকে।
বর্তমানে সপ্তাহে দু’দিন এক ঘণ্টার দু’টি অনুষ্ঠান, অর্থাৎ, মোট দু’ঘণ্টার রেডিও অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হলেও, শুরুতে প্রতি পক্ষকালে, অর্থাৎ, দু’সপ্তাহ অন্তর মাত্র ২০ মিনিটের বাংলা অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হতো। তখন এর নাম ছিল আকাশবাণী টু-ই-এ। এরপর, সপ্তাহে আধা ঘণ্টার অনুষ্ঠান হতো।
পরবর্তীতে সাপ্তাহিক এক ঘণ্টার অনুষ্ঠান চালু করা হয়।
এটা সেই সময়ের কথা, যখন ইন্টারনেট ছিল না, মোবাইল ফোনও ছিল না। ‘কেবল’ টেলিভিশনও না।
১৯৭৯ সালে এয়ারক্রাফট মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে অস্ট্রেলিয়ায় আসেন সৈয়দ তৌফিক ইমাম এবং মুহিব আলম। সিডনিতে আসার পর তারা দু’জন মাল্টিকালচারাল এথনিক রেডিও স্টেশন 2EA এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।
মুহিব আলম বলেন, এসবিএস-এর কথা তিনি ১৯৮০ সালের দিকে জানতে পারেন।
“বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব নিউ সাউথ ওয়েলস অব অস্ট্রেলিয়া-এর প্রেসিডেন্ট খবর পেলেন যে, এসবিএস বাংলা সার্ভিস আছে যেখানে সাপ্তাহিক বাংলা অনুষ্ঠান হয়, আধা ঘণ্টার জন্য।”
তিনি আরও বলেন,
“এখানে একটা আগ্রহ আমাদের সৃষ্টি হলো যে, আমরা বাংলাদেশীদের জন্য (রেডিও প্রোগ্রাম করতে পারি)। এই সার্ভিসটা ছিল ভারতীয় বাংলাভাষীদের জন্য।”
বাংলাদেশী অস্ট্রেলিয়ানদের জন্য অনুষ্ঠান সম্প্রচারের চেষ্টা করেন তারা।
“আমরা চেষ্টা করলাম যে, আমাদের বাংলাদেশীদের জন্য একটা বাংলা ভাষায় প্রোগ্রাম চালু করা যায় কিনা।”
মুহিব আলম সেই অ্যাসোসিয়েশনের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন। অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট-সহ কয়েকজন এসবিএস-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং এভাবে তারা একটি টাইম-স্লট পরে পান, বলেন মুহিব।
ফলে (অস্ট্রেলিয়ায়) বাংলাদেশী বাংলাভাষীদের জন্য এবং ভারতের বাংলাভাষীদের জন্য আলাদাভাবে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হতো। এক সপ্তাহে ভারতীয়দের জন্য হলে তার পরের সপ্তাহে বাংলাদেশী বাংলাভাষী অস্ট্রেলিয়ানদের জন্য, বলেন মুহিব আলম।
READ MORE

সাংবাদিক আলী হাবিব আর নেই
“কিন্তু আমরা যখন ১৯৮০ সালে এটাতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ঢুকলাম, তখন আমাদেরকে যে স্লট দিয়েছিল, ওটা ছিল আধা ঘণ্টার”, বলেন মুহিব।
তখন মোবাইল ফোন কিংবা ইন্টারনেট, কিছুই ছিল না। সেই সময়ে অনুষ্ঠানের কন্টেন্ট বা আধেয় সংগ্রহ করা “খুবই ডিফিকাল্ট ছিল”, বলেন মুহিব।
“তখন আমরা যেটা করতাম, নিউজপেপার কালেক্ট করতাম। আর, আমাদের যে পার্সোনাল কন্টাক্ট ছিল বাংলাদেশে তাদের সাথে (যোগাযোগ করতাম)।”
সেসব সংবাদপত্র আসতো বাংলাদেশের হাইকমিশনে।
এ রকম কথা অবশ্য মেলবোর্নের কামরুল হোসেইন চৌধুরীও বলেছেন।
মুহিব আরও বলেন, “তখন হোম কান্ট্রির নিউজের খুবই আকর্ষণ ছিল। ঐটাই তো এখানে পাওয়া যেত না তখন।”
মুহিব আলম বলেন, ১৯৮০ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত এসবিএস বাংলার সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি।
“আমার আরেকজন বন্ধু ছিল। একই প্রোগ্রামে আমরা এখানে (অস্ট্রেলিয়ায়) এসেছিলাম। এয়ারক্রাফট মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আমরা অস্ট্রেলিয়াতে আসি ১৯৭৯ সালে।”
“সেই প্রোগ্রামে আরেকজন বন্ধু ছিল সৈয়দ তৌফিক ইমাম। উনিও বাংলা ভাষায় খুব ভাল ছিলেন। উনি এটাতে (এসবিএস বাংলা অনুষ্ঠানে) জয়েন করেছিলেন। আমরা দু’জনে এই প্রোগ্রামটা শেয়ার করতাম। আমাদের ভাগে মাসে একটা করে প্রোগ্রাম পড়তো। আর বাকি দু’টি অনুষ্ঠান করতেন ভারতীয় বাঙালিরা (রথীন মুখোপাধ্যায়)।”
“কিন্তু এটা আরও যখন ডেভেলপ হলো, ১৯৮০ সালের পরে, যখন আমরা শুরু করার পরে এটাকে আরেকটু ইমপ্রুভ করার জন্য, এর মধ্যে মহিলাদেরকে আনার জন্য চেষ্টা করা হলো, সেখানে খুবই কোয়ালিফায়েড দু’জন মহিলা ছিলেন। উনারা ছিলেন মিসেস মহুয়া হক এবং মিসেস শামীমা চৌধুরী।”
ড. শামীমা চৌধুরী পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন।
“আমি ও ড. শামীমা চৌধুরী মিলে একটা অনুষ্ঠান করতাম। আর সৈয়দ তৌফিক ইমাম ও মহুয়া হক মিলে করতেন আরেকটা প্রোগ্রাম।”
প্রসঙ্গত, সম্পূর্ণ কাজটাই তারা করতেন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে। এরজন্য এসবিএস থেকে তারা কোনো প্রকার পারিশ্রমিক পেতেন না, বলেন মুহিব আলম।
“এটা ফুললি ভলান্টিয়ার জব ছিল।”
স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য ১৯৭৭ সালে অস্ট্রেলিয়ায় আসেন কামরুল হোসেইন চৌধুরী। ১৯৮০-এর দশকের শুরুর দিকে এসবিএস সম্পর্কে প্রথম জানতে পারেন, বলেন তিনি।
“আমরা এসবিএস-এ একটু বাংলা শোনার জন্য আমরা খুবই আগ্রহী থাকতাম আর্লি এইটিজ-এ।”
“এটা খুবই দরকার ছিল প্রবাসে আমাদের জন্য। আমাদের কিছুটা মনোরঞ্জনও করতো।”
ভারত থেকে ১৯৯১ সালে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছেন তরুণ ভট্টাচার্য। তবে, তার আদি নিবাস বাংলাদেশে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাটাই-এ। ১৯৯৯ সাল থেকে প্রায় এক দশক ধরে এসবিএস বাংলার সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি।
এসবিএস বাংলার তৎকালীন একজিকিউটিভ প্রডিউসার রথীন মুখোপাধ্যায় ছুটিতে থাকলে তার অবর্তমানে অনুষ্ঠান পরিচালনা করার সুযোগ পেয়েছিলেন তরুণ ভট্টাচার্য।
তিনি বলেন, “এটা হচ্ছে আপনার ১৯৯৯ সাল থেকে শুরু করে, আমি বলবো ২০০৯-১০ অবধি এক নাগাড়ে মাঝে মাঝে আমি গিয়ে (অনুষ্ঠান) করতাম। যখনই থাকতেন না। মেলবোর্নে করতাম। অস্থায়ী কর্মী বা ক্যাজুয়াল প্রডিউসার হিসেবে।”
“২০১১ সালের প্রথম দিকে বোধ হয়, যখন রথীনদা অবসর নেন চাকরি থেকে, তখন আমাকে উনারা অ্যাপ্রোচ করেন যে, অনুষ্ঠান করার জন্য। যত দিন না উনারা পার্মানেন্ট কাউকে পান।”
“আমি যেহেতু অন্য পেশায় নিযুক্ত, তাই আমার পক্ষে সোমবার দিন গিয়ে লাইভ প্রোগ্রাম করাটা একটু অসুবিধে হতো। তাও আমি কয়েক মাস এক নাগারে সেই অনুষ্ঠান লাইভ করেছিলাম এবং শেষের দিকে রেকর্ড করতাম।”
প্রকৌশলী সুমিয় মুৎসুদ্দি, তার স্ত্রী বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের নজরুল সঙ্গীত ও উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত-শিল্পী রুমি বড়ুয়া মুৎসুদ্দি ১৯৯১ সালে অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসন করেন।
এসবিএস বাংলার সিডনি স্টুডিওতে এসে তারা সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
ড. কাইয়ুম পারভেজ ১৯৯২ সালে অস্ট্রেলিয়ায় আসেন। এসবিএস বাংলার একসময়ের ঢাকা প্রতিনিধি, “চরমপত্র খ্যাত” প্রখ্যাত সাংবাদিক এম আর আখতার মুকুলের জামাতা তিনি।
ড. কাইয়ুম পারভেজ NAATI-তে বাংলা বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন। এই পদে তিনি ২৬ বছর কাজ করেন।
এসবিএস বাংলাকে আগে এসবিএস বেঙ্গলি বলা হতো। মূলত ড. কাইয়ুম পারভেজের উদ্যোগে এই পরিবর্তনটি করা হয়। তিনি এসবিএস-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং অবশেষে এটি বাস্তবায়িত হয়।
১৯৯৬ সালের ডিসেম্বরে সপরিবারে অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসন করেন বাংলাদেশের সাংবাদিক ও কলামিস্ট অজয় দাশগুপ্ত।
এসবিএস বাংলার সঙ্গে তার প্রথম যোগাযোগ ঘটে ১৯৯৭ সালে, বলেন তিনি।
অস্ট্রেলিয়ার মূলধারার গণমাধ্যমে সেই সময়ে এসবিএস-এর ভূমিকা সম্পর্কে তিনি বলেন,
“এসবিএস টেলিভিশনের ঐ সময়কার ভূমিকা আমাদের মনোভূমি গঠনের ক্ষেত্রেও একটা প্রভাব বিস্তার করেছে বলে আমি মনে করি।”
এসবিএস বাংলার ঢাকা প্রতিনিধি, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও ছড়াকার আলী হাবিব মারা যান এ বছরের, অর্থাৎ, ২০২৫ সালের ১৮ই মার্চে। তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অজয় দাশগুপ্ত বলেন,
“অপরিণত বয়সে আলী হাবিবের এই হঠাৎ বিদায় আমাদেরকে মর্মাহত করেছে। আজকে তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এসবিএস-এর শ্রোতাদেরকে বলবো যে, আমাদের এই বহুজাতিক সমাজে আমাদের নিজস্ব মিডিয়ার বাইরে এই একটি মাত্র মিডিয়া আমাদেরকে কথা বলার সুযোগ দেয় মাঝে মাঝে। আমাদের মতামত প্রকাশ করার সুযোগ দেয়। আমাদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করার সুযোগ দেয়।”
তিনি আরও বলেন,
“আমরা বাংলাদেশের মানুষ, বাঙালি মানুষ, বাংলায় কথা বলি উভয় বাংলার মানুষ। আমাদের সকলের সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং রাজনীতির ঊর্ধ্বে যে সম্প্রীতি, এসবিএস-এর মাধ্যমে সেটি যেন আমরা চলমান রাখতে পারি।”
সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।
READ MORE

নতুন এসবিএস রেডিও অ্যাপ ডাউনলোড করুন
এসবিএস বাংলা এখন অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত দক্ষিণ এশীয় সকল জনগোষ্ঠীর জন্য এসবিএস সাউথ এশিয়ান চ্যানেলের অংশ।
এসবিএস বাংলা লাইভ শুনুন প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় এসবিএস সাউথ এশিয়ান-এ, ডিজিটাল রেডিওতে, কিংবা, আপনার টেলিভিশনের ৩০৫ নম্বর চ্যানেলে। এছাড়া, এসবিএস অডিও অ্যাপ-এ কিংবা আমাদের ওয়েবসাইটে। ভিজিট করুন www.sbs.com.au/bangla.
আর, এসবিএস বাংলার পডকাস্ট এবং ভিডিওগুলো ইউটিউবেও পাবেন। ইউটিউবে সাবসক্রাইব করুন এসবিএস সাউথ এশিয়ান চ্যানেল। উপভোগ করুন দক্ষিণ এশীয় ১০টি ভাষায় নানা অনুষ্ঠান। আরও রয়েছে ইংরেজি ভাষায় এসবিএস স্পাইস।