মূল বিষয়
- নেটিভ টাইটেল হলো আইনি স্বীকৃতি যে অ্যাবরিজিনাল ও টরে স্ট্রেইট আইল্যান্ডার জনগণ প্রথাগত আইন ও রীতির ভিত্তিতে ভূমি ও জলসম্পদের সঙ্গে ধারাবাহিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে।
- নেটিভ টাইটেল ফার্স্ট নেশনস সম্প্রদায়কে তাদের সংস্কৃতি রক্ষায় সাহায্য করে।
- বেশিরভাগ মানুষ, বিশেষ করে যারা শহরে বা নিজেদের বাড়িতে বসবাস করেন, তারা নেটিভ টাইটেল দ্বারা সরাসরি প্রভাবিত হয় না; তবে এটি সম্পর্কে বোঝা আলোচনায় অংশ নিতে সহায়ক হতে পারে।
নেটিভ টাইটেল, ল্যান্ড রাইটস এবং ট্রিটি—এই তিনটি ভিন্ন পদ্ধতি, যেগুলো ফার্স্ট নেশনস সংস্কৃতিকে শক্তিশালী করা এবং অ্যাবরিজিনাল ও টরে স্ট্রেইট আইল্যান্ডার জনগোষ্ঠীকে তাদের ভূমির সঙ্গে সংযুক্ত রাখার জন্য ব্যবহৃত হয়। ল্যান্ড রাইটস এবং ট্রিটি সম্পর্কে আরও জানতে পারবেন আমাদের আগের পর্বগুলোতে।
চলুন তাহলে জানা যাক, নেটিভ টাইটেল কী? আর এটি কোথা থেকে এসেছে?
দুই শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে অস্ট্রেলিয়াকে টেরা নালিয়াস ঘোষণা করা হয়েছিল— যার অর্থ হচ্ছে “খালি ভূমি”— এবং এর মাধ্যমে কার্যত উপনিবেশ স্থাপনের আগে থেকেই এখানে বসবাসকারী অ্যাবরিজিনাল এবং টরে স্ট্রেইট আইল্যান্ডার জনগোষ্ঠীকে অস্বীকার করা হয়েছিল।
এই ধারণাটি বদলে যায় এক ঐতিহাসিক আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে, যেটি পরিচিত মাবো মামলা হিসেবে।
১৯৮২ সালে এডি মাবোর নেতৃত্বে মেরিয়াম জনগোষ্ঠীর একদল মানুষ একটি আইনি মামলা শুরু করেন, টরে স্ট্রেইটে অবস্থিত মারি দ্বীপপুঞ্জে—যা কুইন্সল্যান্ডের সর্বোচ্চ উত্তরের ঠিক ওপরে একটি ছোট দ্বীপপুঞ্জ—তাদের ঐতিহ্যগত মালিকানার স্বীকৃতি দাবি করে।
মামলাটি অনেক দীর্ঘ ছিল, প্রায় এক দশক ধরে চলেছিল সেটি। অবশেষে ১৯৯২ সালে অস্ট্রেলিয়ার হাই কোর্ট একটি ঐতিহাসিক রায় দেয়— তাতে এই স্বীকারোক্তি দেয়া হয় যে মেরিয়াম জনগোষ্ঠী তাদের ভূমির ওপর নেটিভ টাইটেলের অধিকার রাখে। এই রায় যুগান্তকারী, কারণ এটি বহুদিন ধরে প্রচলিত টেরা নালিয়াস–এর আইনি ধারণাকে বাতিল করে দেয়।
এই সিদ্ধান্তের পর ১৯৯৩ সালে ফেডারেল পার্লামেন্ট নেটিভ টাইটেল অ্যাক্ট ১৯৯৩ পাস করে।
১৯৯৩ সালের ১৫ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পল কিটিং দেশকে উদ্দেশ্য করে ভাষণ দেন, যেখানে তিনি হাই কোর্টের মাবো রায়ের প্রতি অস্ট্রেলীয় সরকারের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেন।
নেটিভ টাইটেল বলতে বোঝায় যে কিছু ফার্স্ট নেশনস জনগোষ্ঠী এখনো তাঁদের নিজস্ব প্রচলিত আইন ও প্রথার ভিত্তিতে ভূমি ও জলসম্পদের ওপর অধিকার রাখেন। এই অধিকার কোনো সরকারের দেওয়া নয়, বা আলোচনার মাধ্যমে অর্জিত নয় — অস্ট্রেলিয়ান আদালত এগুলো স্বীকৃতি দেয়।
নেটিভ টাইটেলকে প্রায়ই ‘বান্ডেল অব রাইটস’ বলা হয়, কারণ এটি কেবল একটি অধিকার নয়, বরং বিভিন্ন ধরনের অধিকারকে অন্তর্ভুক্ত করে। এর মধ্যে থাকতে পারে শিকার, মাছধরা, আচার-অনুষ্ঠান পালন, এবং গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক স্থানের যত্ন নেওয়ার মতো রীতিনীতি।
এটি ব্যক্তিগত বা বাণিজ্যিক মালিকানার বদলে বহুদিনের সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য থেকে উদ্ভূত সমষ্টিগত বা ভাগাভাগি করা অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়।
তবে নেটিভ টাইটেল ভূমির অন্যান্য ব্যবহারকে বাতিল করে না — যেমন কৃষিকাজ, খনন বা স্থানীয় সরকারের কার্যক্রম। অনেক জায়গায় এসব কর্মকাণ্ড নেটিভ টাইটেলের পাশাপাশি বিদ্যমান। অর্থাৎ ফার্স্ট নেশনস জনগোষ্ঠী প্রায়ই চাষি, খনি কোম্পানি বা কাউন্সিলের মতো অন্যান্য পক্ষের সঙ্গে ভূমির অধিকার ভাগ করে নেন।
অ্যাবরিজিনাল ও টরে স্ট্রেইট আইল্যান্ডার সম্প্রদায়গুলোর কাছে নেটিভ টাইটেল কেবল জমির মালিকানার বিষয় নয় — এটি পরিচয়, সংস্কৃতি ও অধিকারবোধের প্রশ্ন।

Australian Prime Minister Paul Keating (1993).
নেটিভ টাইটেল প্রতিষ্ঠা করতে হলে একটি সম্প্রদায়কে প্রমাণ করতে হয় যে তারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সেই ভূমির সঙ্গে সংযোগ বজায় রেখেছে — যা সাধারণত মৌখিক ইতিহাস, গল্প, এবং পূর্বসূরিদের রেখে যাওয়া নথির মাধ্যমে দেখানো হয়।
এই আইনি প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জটিল, এবং প্রচলিত আইন ও রীতি অনেক সময় পাশ্চাত্য আইনি কাঠামোর সঙ্গে সরাসরি মেলে না।

Yinhawangka Law Men Marlon Cooke (left) and David Cox ('Barndu') (right) with Gwynette Govardhan on Yinhawangka Country during a field trip to collect evidence (stories and land markings) of cultural heritage.
এটি অনেক সম্প্রদায়কে তাদের ভাষা পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করেছে, ভূমি ও জলরক্ষার ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতি ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করেছে, এবং তাদের প্রথাগত ভূমি ও জলের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণে আরও শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে সক্ষম করেছে।
নেটিভ টাইটেল অ্যাক্ট চালুর পর থেকে এখন অস্ট্রেলিয়ার প্রায় ৪০ শতাংশ এলাকা নেটিভ টাইটেলের আওতায়—মূলত দূরবর্তী ও আঞ্চলিক এলাকাগুলোয়, যেখানে কান্ট্রি-র সঙ্গে ঐতিহ্যগত সম্পর্ক এখনও টিকে আছে।
তবে মনে রাখা দরকার, এটি ভূমির মালিকানার মতো কোনো বিষয় নয়।
আপনি যদি শহর বা রিজনাল কোনো এলাকায় থাকেন—বেশিরভাগ অভিবাসীর মতো—তাহলে নেটিভ টাইটেল আপনার দৈনন্দিন জীবনে খুব একটা প্রভাব ফেলবে না।
কিন্তু এটি সম্পর্কে জানা ও বোঝা সম্মান এবং পুনর্মিলনের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

Yinhawangka Country in the Pilbara region taken by Gwynette Govardhan during an on Country field trip.
অনেক ফার্স্ট নেশনস জনগণের জন্য নেটিভ টাইটেল কেবল একটি আইনি প্রক্রিয়া শুধু নয়—এটি তাদের পূর্বপুরুষদের গল্পকে জীবিত রাখার উপায়।
অস্ট্রেলিয়ায় নতুন আসা মানুষের জন্য নেটিভ টাইটেল বুঝতে পারা মানে এই ভূমির সঙ্গে ফার্স্ট নেশনস জনগণের গভীর সম্পর্ককে জানা—এটি এমন একটি সম্পর্ক, যা হাজার বছরের পুরোনো, এবং আজও সমানভাবে জীবন্ত।
নেটিভ টাইটেল এখনো বিকশিত হচ্ছে; এটির মাধ্যমে নতুন নতুন চুক্তি গড়ে উঠছে যেগুলো অস্ট্রেলিয়াজুড়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ভূমি, জল এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সুরক্ষিত করবে।
ল্যান্ড রাইটস, ট্রিটি এবং নেটিভ টাইটেল—প্রতিটিরই আলাদা আইনি ও রাজনৈতিক ধাপ রয়েছে, কিন্তু লক্ষ্য একটাই: ফার্স্ট নেশনস জনগণের কান্ট্রির সঙ্গে সম্পর্ককে সম্মান জানানো এবং তাদের অধিকারকে আরও শক্তিশালী করা।
অস্ট্রেলিয়ায় আপনার নতুন জীবনে স্থায়ী হওয়ার বিষয়ে আরও মূল্যবান তথ্য এবং টিপসের জন্য ‘অস্ট্রেলিয়া সম্পর্কে জানুন’ পডকাস্ট অনুসরণ করুন।
আপনার কোনো প্রশ্ন বা নতুন কোনো বিষয় নিয়ে আমাদের পডকাস্টে শুনতে চাইলে australiaexplained@sbs.com.au -এ আমাদের ইমেল করুন।








